ঘনাদা সমগ্র।
আবার খুলতে চলেছে ঘনাদা ক্লাব। বাংলা সাহিত্যের লম্বা-চওড়া কথার রাজা ঘনশ্যাম দাস অর্থাৎ ঘনাদাকে নিয়ে ক্লাব খুলতে উদ্যোগী হয়েছেন এক প্রবাসী বাঙালি।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, কলকাতার ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়িতে ঘনাদা থাকতেন। সেখানকার চার আবাসিক শিবু, শিশির, গৌর আার সুধীরকে গল্প বলতেন তিনি। বাগাড়ম্বর ভরা অথচ তথ্যে ঠাসা সেই সব গল্পই বাঙালির পরম প্রিয়। আমেরিকা প্রবাসী দিলীপ সোম এ বার ঘনাদা চর্চার লক্ষ্যে ঘনাদা ক্লাব খুলতে উদ্যোগী। সত্তর ছুঁই ছুঁই দিলীপবাবু মেরিল্যান্ড থেকে জানালেন, কিশোর বয়স থেকেই তিনি ঘনাদার ভক্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার ছাত্র দিলীপবাবু কর্মসূত্রে প্রায় ৪৫ বছর দেশের বাইরে। কিন্তু তাতে তাঁর ঘনাদা প্রীতি কমেনি এতটুকুও। বললেন, ‘‘ঘনাদা লম্বা-চওড়া কথা বললেও তিনি কিন্তু গুলবাজ নন। তাঁর বর্ণনা করা তথ্যকে ভুল বলা যাবে না। কী বৈজ্ঞানিক, কী ভৌগোলিক— সব তথ্যের সত্যতা রয়েছে। শুধু সে সব পরিস্থিতিতে ঘনাদা নিজে ছিলেন না। সেটা তাঁর মনগড়া।’’
বছরখানেক আগে কলকাতায় এসে দিলীপবাবু ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের খোঁজ শুরু করেন। খুঁজেপেতে জানতে পারেন, ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেন বলে কিছু নেই। রয়েছে ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর রোড। ঠিকানাটা বেহালার। সেখানে গিয়ে দেখেন, জায়গাটা জংলা আগাছায় ভরা। ৭২ নম্বর ঠিকানায় কোনও বাড়ি-ঘরের চিহ্ন নেই। এর পরে দিলীপবাবু ঠিক করেন, আপাতত ক্লাব শুরুর জন্য আড্ডার সূত্রপাত হোক। সেই মতো আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর, উত্তর কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের এক বাড়িতে বসবে এই ক্লাবের প্রথম আড্ডা। ইতিমধ্যেই ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন দিলীপবাবু। আর কিছু দিনের মধ্যে তিনিও পৌঁছচ্ছেন কলকাতায়।
আশির দশকে একটি কিশোর বিজ্ঞান পত্রিকার উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল প্রথম ঘনাদা ক্লাব। কিছু দিন চলার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। সেই ক্লাবের প্রথম আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র স্বয়ং। ছিলেন লীলা মজুমদারও। ঘনাদাকে নিয়ে তার পরেও কিছু চেষ্টা হয়েছে। আন্তর্জালে তৈরি হয়েছে ঘনাদা গ্যালারি। দিলীপবাবু জানালেন, ঘনাদাকে নিয়ে চর্চা বাড়ুক। এখনকার প্রজন্ম তাঁকে জানুক। সেই লক্ষ্যেই ক্লাব তৈরি করতে চাইছেন তিনি। ঘনাদাকে নিয়ে লেখার ইংরেজি তর্জমা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত শার্লক হোমসকে নিয়ে যেমন সংগ্রহশালা আছে, সে রকম সংগ্রহশালা তৈরি করার ইচ্ছে দিলীপবাবুর।
আপাতত ক্লাব পত্তনের প্রস্তুতি চলছে দ্রুত গতিতে। ঘনাদার কয়েকটি গল্পের ইংরেজি অনুবাদ আগে হয়েছে। বাকিগুলিও যাতে করা যায়, সেই উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পাশপাশি ঘনাদার গল্পগুলি থেকে শ্রুতিনাটকও করা হবে বলে দিলীপবাবু জানালেন। এমনকি, এখন তিনি নতুন লেখকদের খোঁজে রয়েছেন। যে বা যাঁরা ঘনাদা চরিত্রকে আবার তাঁদের লেখায় নতুন করে আনবেন। কিন্তু সব কিছুর আগে তিনি চাইছেন, ঘনাদাপ্রেমীরা মুখোমুখি বসুন। তাঁরা জানান ঘনাদাকে নিয়ে তাঁদের ভাল লাগা, ভাবনার কথা।
যদিও এই উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কতটা আগ্রহের সঞ্চার করবে, তা নিয়ে খানিকটা সংশয়ে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘অনেককে নিয়েই তো আজকাল ফ্যান ক্লাব হয়। ঘনাদা-ভক্ত কিছু মানুষ একজোট হয়ে তাঁদের ভাবনা ভাগ করে নেবেন, সেটা ভাল। তবে ঘনাদা বলে তো আসলে কেউ ছিলেন না। পুরোটাই প্রেমেন্দ্র মিত্রের কল্পনাপ্রসূত। তাই ঘনাদার গল্পের সেই মজা হয়তো আর ফিরবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy