প্রতীকী ছবি।
দুর্ঘটনা কমাতে ও বেপরোয়া বাইকচালকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তিন মাসের জন্য বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সেই মতো ফেব্রুয়ারিতে হেলমেট ছাড়া এবং বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানোর অভিযোগে ২৪৭ জনের লাইসেন্স সাময়িক ভাবে বাজেয়াপ্ত করেছে লালবাজার। এ ছাড়া, মত্ত অবস্থায় বাইক চালানোর অভিযোগে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে ১৩৭ জনের লাইসেন্স।
একই সঙ্গে বেপরোয়া গাড়িচালকদের দৌরাত্ম্যে লাগাম দিতে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ট্র্যাফিক আইন-ভঙ্গে জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো ছাড়াও চালকের লাইসেন্স তিন মাসের জন্য সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। গত জানুয়ারিতে ট্র্যাফিক আইনভঙ্গের অভিযোগে মামলা দায়ের হয় ২,৮৭,২৬১টি। এর মধ্যে সাইটেশনের মামলা ২,১১,২০০টি। ফেব্রুয়ারিতে আইনভঙ্গের মামলা হয়েছে ২,০১,৬২৬টি। অর্থাৎ ট্র্যাফিক-বিধি কড়া হওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে ৮৫,৬৩৫টি মামলা কম নথিভুক্ত হয়েছে।
ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, দুর্ঘটনা ঠেকাতে এবং বেপরোয়া বাইকচালকদের রুখতেই জানুয়ারিতে ট্র্যাফিক জরিমানা চালু হয়। তাতে হেলমেটহীন বাইকচালকদের ১০০০ টাকা জরিমানা করা ছাড়াও একাধিক ট্র্যাফিক আইন ভাঙার জন্য মোটা টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। গত মাসে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) অরিজিৎ সিংহ নির্দেশ দেন, ট্র্যাফিক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট পদমর্যাদার আধিকারিক প্রয়োজনে বাইকচালকের লাইসেন্স সাসপেন্ড করতে পারবেন। নিয়ম অনুযায়ী, ট্র্যাফিক-বিধি কেউ ভাঙলে ব্যবস্থা নেন ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। এমনকি, তিনি চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করে তা সাসপেন্ড করার সুপারিশ নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের কাছে পাঠাতে পারেন। এর পরে অভিযুক্ত চালককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর দিতে না পারলে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড হবে লাইসেন্স।
লালবাজার জানিয়েছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্র্যাফিক আইনভঙ্গে ৫৭১১ জন বাইকচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানোয় ৬৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে ১৬ জনের
লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়। হেলমেটহীন ৪৯৪ জন চালকের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে তাঁদের মধ্যে
১৪৪ জনের লাইসেন্স সাময়িক ভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়। আবার হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোয় ৮৭ জনের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া, মত্ত অবস্থায় বাইক চালিয়ে ধরা পড়া ৭০৯ জন চালকের
মধ্যে ১৩৭ জনের লাইসেন্স সাসপেন্ড হয়েছে।
বাইকচালকদের সঙ্গে সঙ্গে বেপরোয়া গাড়িচালকদের রুখতেও আরও কড়া হয়েছে কলকাতা পুলিশ। তবে ফেব্রুয়ারিতে ট্র্যাফিক আইনভঙ্গে মামলার সংখ্যা কম হলেও গাড়িচালকদের একাংশের বেপরোয়া মনোভাব চিন্তায় রাখছে লালবাজারের কর্তাদের।
মোটরযান আইনের ১৮৩ নম্বর ধারা, অর্থাৎ অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য জানুয়ারিতে ৫১,৪৮৪টি মামলা দায়ের হয়। জানুয়ারির শেষ থেকে ওই আইনভঙ্গে জরিমানার অঙ্ক কয়েক গুণ বাড়ানো হলেও প্রবণতায় লাগাম দেওয়া যায়নি। উল্টে ফেব্রুয়ারিতে ৭০,০৪২টি মামলা (জানুয়ারির নিরিখে প্রায় ১৯ হাজার বেশি) রুজু হয়েছে। তবে শহরে বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো কিছুটা হলেও কমেছে। মোটরযান আইনের ১৮৪ ধারায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রুজু হওয়া মামলার সংখ্যা যথাক্রমে ৩,৩৭১ এবং ২,৬১৩টি।
ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, জানুয়ারিতে করোনার দাপট ও নানা বিধিনিষেধের কারণে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। সে সময়ে একাধিক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী সংক্রমিত হওয়ায় শুধুমাত্র সাইটেশনের মামলা করা হচ্ছিল। তার পরেও ফেব্রুয়ারিতে আইনভঙ্গের সংখ্যা কমায় আশাবাদী লালবাজার। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘পথে নিরাপত্তা বাড়ানো, গাড়িচালক থেকে শুরু করে পথচারীদের সচেতনতা বাড়ানোটাই লক্ষ্য। সচেতনতা বাড়লেই আইন ভাঙার সংখ্যা কমবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy