—প্রতীকী চিত্র।
বাড়ির বাইরে গেলে ফ্ল্যাটের কল ভেঙে দিতেন তাঁরা। কখনও আবার লোকজনকে মারধর করতেন। এমন অভিযোগ পেয়ে পেয়ে ক্লান্ত বাবা-মা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত দুই ছেলেকে ঘরে বন্ধ করে রেখেছিলেন। প্রায় এক দশক ধরে লোহার গ্রিলের তলা দিয়ে দুই ঘরে বন্দি দুই ছেলেকে খাবার দিতেন তাঁরা। ঘরে না ছিল আলো, না ছিল পাখা। বাবা-মায়ের দাবি, ঘরে আলো-পাখা লাগালেও দুই ছেলে ভেঙে দিতেন। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার তাঁদের বন্দিদশা দূর হল। খবর পেয়ে রাজারহাটের বিডিও তাঁর আধিকারিকদের ওই বাড়িতে পাঠান। স্থানীয় পঞ্চায়েত উদ্যোগী হয়ে আপাতত দুই ভাইকে মনোরোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।
রাজারহাটের জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া পঞ্চায়েতের ক্ষুদিরামপল্লির ওই ঘটনাকে ঘিরে এ দিন শোরগোল পড়ে যায়। জায়গাটি নিউ টাউনের কাছেই। দুই ভাই শ্রীপদ মণ্ডল ও সুজিত মণ্ডলের বন্দিদশার গল্প শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছেন সরকারি আধিকারিকেরাও। শ্রীপদ বড় ও সুজিত ছোট ছেলে।
তাঁদের বাবা-মা নির্মল মণ্ডল ও নমিতা মণ্ডল দু’জনেই বৃদ্ধ। নমিতা এখনও লোকের বাড়িতে কাজ করেন। নির্মল অসুস্থ। নমিতা এ দিন জানান, দুই ছেলেই প্রায় দশ বছর ধরে ঘরে বন্দি। সুজিতকে সঙ্গে নিয়ে মাঝেমধ্যে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারলেও বড় ছেলে শ্রীপদের সেই মানসিক অবস্থাও নেই। পরিবার সূত্রের খবর, দুই ছেলেরই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের স্ত্রীরা সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তার পর থেকে ওই দুই ভাইয়ের মানসিক অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়।
রাজারহাটের বিডিও গোলাম গউসল আজম জানান, দুই ভাইয়ের জন্য সরকারি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারটি খুবই দুঃস্থ। আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে যা শুনেছেন, তাতে দুই ভাইয়ের কাজে অতিষ্ঠ হতেন প্রতিবেশীরা। বাবা-মা তাঁদের ঘরবন্দি রাখতে বাধ্য হন।’’
এ দিন তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে লোকজন দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। প্রত্যুত্তরে ঘর থেকে ভেসে আসে গালিগালাজ। সরকারি আধিকারিকেরা শ্রীপদ ও সুজিতের বাবা-মায়ের থেকে জানতে পারেন, দুই ভাই দুই ঘরে বন্দি। সেখানে আলো-পাখা কিছুই নেই। যত বার আলো-পাখা লাগানো হয়েছে, তত বারেই তাঁরা তা ভেঙে দিয়েছেন। জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান রীতা গায়েন বলেন, ‘‘আমরা গিয়ে দেখি, দুই ভাই অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে থাকতেন। ওঁদের মা বলেছেন, ঘরের পাখা থেকে এক বার এক জন ঝুলে পড়ার চেষ্টা করেন, তাই সে সব সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’
নমিতা বলেন, ‘‘ছোট ছেলেকে তা-ও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারি। বড় ছেলেকে ঘরেই বন্ধ রাখতে হয়। চিকিৎসক বলেছেন, দু’জনেরই মানসিক সমস্যা রয়েছে। আমাদের বয়স হয়েছে। ছেলেদের চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই। যদি সরকার সাহায্য করে, তা হলে হয়তো ছেলেরা ভাল হবে।’’ দম্পতি জানান, দুই ছেলেকে গ্রিলের নীচে দিয়ে খাবার দেন তাঁরা। কোনও রকমে শৌচ করান। তাঁদের স্নান করাতে ঘরে পাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। নমিতা জানিয়েছেন, দুই ছেলে বাড়ির বাইরে গেলে লোকজনকে এমনকি ছোটদেরও মারধর করতেন। আশপাশের ফ্ল্যাটের কল ভেঙে দিতেন। বাধ্য হয়ে তাঁরা দুই ছেলেকে বন্দি করার সিদ্ধান্ত নেন।
এসএসকেএম হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেলের ব্যখ্যা, ‘‘সুস্থ মানুষকে কয়েক দিন ঘরবন্দি রাখলেই তাঁর আচরণে প্রভাব পড়ে। সেখানে অসুস্থ কাউকে দশ বছর বন্দি রাখলে, তিনি আরও অসুস্থ হবেন। মনে হয় পরিবারটিকে কেউ ছেলেদের চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy