আলোচনা চেয়ে মুখ্যসচিবকে ইমেল জুনিয়র ডাক্তারদের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গলবার রাতেই জানিয়েছিলেন। সেই মতো বুধবার সকালে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ইমেল করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ইমেলে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, তাঁদের দাবির কয়েকটি জায়গার এখনও এখনও সমাধান হয়নি। সেই সমাধানের আশাতেই ইমেল করে আলোচনায় বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। যদিও সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে থাকতে হবে, ইমেলে সে রকম কিছু উল্লেখ করেননি তাঁরা। রাজ্য সরকারের তরফে সদর্থক উত্তর পাওয়ার আশায় তাঁরা।
আন্দোলনকারীদের পাঠানো ইমেলে মূলত দু’টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এত দিন যে পাঁচ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্না-অবস্থান চলছে, তার মধ্যে চার এবং পাঁচ নম্বর দাবিই দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা। এই দুই দাবির সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি থেকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি। এ নিয়ে বুধবার মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুধু মুখ্যসচিব নয়, ওই বৈঠকে রাজ্যের গড়া টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তাঁরা। তবে ধর্না বা কর্মবিরতি ওঠার বিষয়ে এখনই কোনও স্পষ্ট বার্তা দেননি আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘আমাদের ইমেল নিয়ে সরকারের তরফে কী উত্তর আসে, তা দেখার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ ফলে এখনই যে কর্মবিরতি উঠছে না, তা আন্দোলনকারী ডাক্তারদের কথায় এক প্রকার স্পষ্ট।
আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে ছিল রাজ্যের হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সেই সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বিষয় জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছিল সরকারকে। বুধবারের ইমেলে যে দাবিগুলোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে তা হল, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। এ ছাড়াও রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। অর্থাৎ, ‘থ্রেট কালচার’ বন্ধ করতে হবে সরকারকে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার নিজেদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘আলোচনা সদর্থক।’’ তার কিছু ক্ষণ পরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ঘোষণা করেন, আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের দাবি মেনে সিপির পদ থেকে মঙ্গলবারই সরানো হচ্ছে বিনীত গোয়েলকে। শুধু তা-ই নয়, ডাক্তারদের দাবি মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকেও অপসারণ করা হচ্ছে। তিন জনকেই অন্য পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেই মতো মঙ্গলবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেও কর্মবিরতি তুলতে নারাজ জুনিয়র ডাক্তারেরা। দাবি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তাঁরা। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে জুনিয়র ডাক্তারেরা নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা করেন। বৈঠকে নানা মত উঠে আসে। কর্মবিরতি তোলা নিয়েই ভিন্ন মতামত ছিল। তবে সব পক্ষই একটি বিষয়ে জোর দেন, যে কোনও উপায়ে আন্দোলনের ভিতরকার ঐক্য বজায় রাখতে হবে। বৈঠক শেষে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, চতুর্থ এবং পঞ্চম দাবি নিয়ে আলোচনায় বসতে চান। প্রাথমিক হলেও কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বা উদ্যোগ তাঁরা নবান্নের কাছে প্রত্যাশা করছেন বলে জুনিয়র ডাক্তারদের সূত্রে খবর। সেই কারণেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি বসে কিছু আশু আলোচনার প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করছেন। নতুন যে ইমেল বুধবার মুখ্যসচিবকে পাঠানো হয়েছে, তাতে অবশ্য স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ বা ডিসি (সেন্ট্রাল)-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পুরনো দাবির আর উল্লেখ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy