গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
এসএসএসি নিয়োগ মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি খুইয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। তাঁদের মধ্যে যেমন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন, তেমনই আছেন অশিক্ষক কর্মী। সোমবার ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে উচ্চ আদালত। ওই রায়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। মঙ্গলবারও সেই রেশ বজায় রইল। হাই কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল থেকে শুরু করে কলকাতার রাজপথে চাকরিহারাদের বিক্ষোভ— একাধিক ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্য। এমননকি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চাকরি বাতিলের রায়ের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। পাল্টা সরব বিরোধীরাও।
কলকাতার পথে বিক্ষোভ চাকরিহারাদের
মঙ্গলবার সকাল থেকেই পথে নেমে পড়েন সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীরা। হাতে নিজেদের ওএমআর শিট নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন তাঁরা। শহিদ মিনার চত্বরে ধর্নায় বসেন চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কেন অযোগ্য কয়েক জনের জন্য যোগ্যদের শাস্তি পেতে হবে? সিবিআই এত দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে কেন যোগ্য আর অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের মধ্যে ফারাক করতে পারল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ধর্নায় বসা চাকরিহারারা।
যোগ্য হয়েও কেন বাদ পড়লাম, প্রশ্ন বিক্ষোভকারীদের
শহিদ মিনার চত্বরে ধর্নায় বসা চাকরিহারাদের দাবি, তাঁরা যোগ্যতার বিচারে চাকরি পেয়েছিলেন। তার পরেও কেন তাঁদের চাকরি বাতিল করল কলকাতা হাই কোর্ট? তাঁদের আরও দাবি, তাঁরা অবৈধ উপায়ে চাকরি পাননি। তা হলে কেন অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য তাঁদেরও শাস্তি পেতে হবে? পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ইঙ্গিতও দেন বিক্ষোভকারীরা।
সুপ্রিম কোর্টে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে যে রায় দিয়েছিল, তারই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে তিনটি ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করেছেন মূল মামলাকারীরা। সোমবার উচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার পরেই রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা বলেছিল। এমনকি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষই তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। তার আগেই নিয়োগ মামলার মূল মামলাকারীরা শীর্ষ আদালতে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করলেন। তাঁদের আবেদন, হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যদি মামলা হয় তবে যেন তাঁদের বক্তব্যও শোনা হয়। একতরফা শুনানি রুখতেই শীর্ষ আদালতে এই ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করেছেন তাঁদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম।
২৬ হাজার চাকরি বাতিলের প্রতিবাদ মমতার
সোমবারের পর মঙ্গলবারও চাকরি বাতিলের নির্দেশ নিয়ে মুখ খুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপির দিকেও আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। মঙ্গলবার রায়গঞ্জে ভোট প্রচারে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘যদি বলতেন, এখানে অসুবিধা রয়েছে, এটা তোমার ভুল হয়েছে, তোমরা সংশোধন করো, আমরা করে দিতাম।’’ কিন্তু মমতার দাবি, তা না করে ‘একতরফা রায়’ দিয়ে চাকরি বাতিল করা হল। তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে আরও বলেন, ‘‘আমরা বাংলায় যখন চাকরি দিই, আপনারা কোর্টকে দিয়ে চাকরি খেয়ে নেন। ওরা (হাই কোর্ট) আমাদের অধীনে নয়। আপনাদের অধীনে।’’ রায়গঞ্জের পাশাপাশি বীরভূমের হাসনের জনসভাতেও এই চাকরি বাতিলের জন্য সরাসরি বিজেপিকে দায়ী করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির একটা কথায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। তাদের বলছে কি না ৮ বছরের মাইনে সুদ-সহ ফেরত দাও!’’ এত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে স্কুলে কারা পড়াবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে শিক্ষক কোথায় আসবে? স্কুলে বাচ্চারা গিয়ে বসে থাকবে। সেখানে বিজেপির লোকেরা পড়াবে না আরএসএস পড়াবে?’’
এসএসসি রায় নিয়ে আক্রমণ শাহের
মঙ্গলবার ভোটপ্রচারে এ রাজ্যে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রথমে মালদহ দক্ষিণে রোড-শো এবং তার পরে রায়গঞ্জে সমাবেশ করেন তিনি। বাংলায় এসে জোড়া কর্মসূচিতে চাকরি বাতিল নিয়ে আক্রমণ করলেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘২৫ হাজার চাকরি বাতিল করেছে হাই কোর্ট। কেন করেছে? ১০ লাখ, ১৫ লাখ টাকা করে চাকরির জন্য ঘুষ নিত। মা-বোনেরা, আপনাদের কাছে, আপনাদের ভাই-ছেলেদের চাকরি জোটানোর জন্য ১৫ লাখ টাকা আছে? নেই তো? তা হলে ওঁরা চাকরি পাবেন কী ভাবে?’’ রায়গঞ্জের জনসভা থেকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করে আক্রমণ শানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘‘ওঁদের এক মন্ত্রীর ঘর থেকে ৫১ কোটি টাকা নগদ বেরিয়েছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় আজ জেলে বসে আছেন।’’ একই সঙ্গে শাহ বলেন, ‘‘আমি জানতে চাই, এই কাটমানি, এই চাকরি, খনিতে দুর্নীতি বাংলায় আটকানো উচিত কি না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা পারবেন? এটা শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদী সরকারই বন্ধ করতে পারবে।’’
মঙ্গলবার দিনভর হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের রায় নিয়ে সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি। শুধু চাকরিহারারা নন, কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ করছেন চাকরিপ্রার্থীরাও। হাই কোর্টের নির্দেশে তাঁরা পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্য, চাকরি বাতিল হল ঠিকই, কিন্তু তাঁরা কবে চাকরি পাবেন তা নিয়ে হাই কোর্ট কোনও নির্দেশ দেয়নি। তাঁদের চাকরি পাওয়ার পথ এখনও অন্ধকারে দাবি আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy