জয়ন্ত সিংহকে নিয়ে তালতলার ক্লাবে পুলিশ। —ফাইল চিত্র
চ্যাংদোলা করে মারধর করেছিলেন কেন? ঘটনার পুনর্নির্মাণ শেষে তালতলা ক্লাব থেকে বেরোনোর সময় জয়ন্ত সিংহকে এই প্রশ্ন করেছিলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। জবাবে জয়ন্তও পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন। বললেন, ‘‘আমাকে কি দেখেছিলেন?’’ শুধু তা-ই নয়, কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের সঙ্গে তাঁর ছবি ঘিরে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা নিয়েও মুখ খুললেন জয়ন্ত। দাবি করেছেন, মদনের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই। ঘটনাচক্রে, জয়ন্ত-বিতর্কে মুখ খোলায় দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের মতো তিনিও হুমকি ফোন পেয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছিলেন মদন।
তালতলার ক্লাব জয়ন্তের ‘আদালত’ বলেই পরিচিত এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, সেখানেই জয়ন্ত ও তাঁর শাগরেদরা আদালতের মতো করে ‘বিচার’ চালাতেন। অভিযোগ, অনেককেই ক্লাবে ডেকে এনে মারধর করেছিলেন তাঁরা। যুবক-যুবতীকে মারধরের যে ভিডিয়ো (সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছিল, সেটিও সেই তালতলা ক্লাবেরই। শুক্রবার সেখানেই জয়ন্ত ও তাঁর দুই শাগরেদকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে গিয়েছিলেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকেরা। সেখান থেকে বার করে জয়ন্তকে গাড়িতে তোলার সময় তাঁকে ঘিরে ধরে নানাবিধ প্রশ্ন করতে থাকেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো নিয়ে সেই সময়েই জয়ন্ত পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, তাঁকে কি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে ছিল, সে শাস্তি পাবে।’’
আড়িয়াদহে ছেলে ও মাকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগে জয়ন্ত ও তাঁর শাগরেদদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁরা জেল হেফাজতে ছিলেন। তার মধ্যে গত সোমবার রাতে যুবক-যুবতীকে মারধরের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। (সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, জয়ন্তের ‘আদালত’ তালতলার ক্লাবে এক জনকে চ্যাংদোলা করে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। এই ভিডিয়ো ঘিরে উত্তাল হয় রাজ্য-রাজনীতি। শোরগোল হতেই গ্রেফতার করা হয় জয়ন্ত-সহ ছ’জনকে। বুধবার জয়ন্তকে ব্যারাকপুর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ২০২১ সালে আড়িয়াদহের বাসিন্দা রাহুল গুপ্তের বাড়িতে চুরি হয়। তাতে জড়িত সন্দেহে এক যুবক-যুবতীকে তালতলা ক্লাবে নিয়ে এসেছিলেন রাহুলই। জয়ন্তের শাগরেদরা ওই যুবককে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ‘বিচার’ শুরু করেছিলেন। প্রশ্ন ওঠে, কাউকে চোর সন্দেহ হলে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তো পুলিশ রয়েছে, তা হলে ক্লাবে কেন আনা হয়েছিল? এরই সঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘শাসকদলের ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার কারণেই কি এত দিন জয়ন্তের ‘মাতব্বরি’র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি পুলিশ? এ নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সরাসরি আড়িয়াদহ বা জয়ন্ত সিংহের নাম উচ্চারণ না করে তাঁর বক্তব্য, উপনির্বাচনে তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই পুরনো ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও আড়িয়াদহকাণ্ডে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন। তিনিও স্পষ্ট করে দেন, ঘটনাটি তিন বছর আগের। এক মহিলাকে মারধর করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, তা-ও খারিজ করেন আলাপন। জানিয়ে দেন, নিগৃহীত ব্যক্তি পুরুষই। এ ক্ষেত্রেও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নিগৃহীত ব্যক্তি পুরুষ হোক বা মহিলা, নিগ্রহের ঘটনাই নিন্দনীয়। এরই সঙ্গে এক জনের লিঙ্গপরিচয় বিকৃত করে ‘অপপ্রচারের’ও নিন্দা করেছেন আলাপন। রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) মনোজ বর্মাও জানিয়েছেন, বাকি অভিযুক্তদেরও অবিলম্বে গ্রেফতার করা হবে। শুক্রবার তালতলার ওই ক্লাবটি সিল করে দিয়েছে পুলিশ।
আড়িয়াদহের ঘটনা নিয়ে বিতর্কের আবহে বুধবার তৃণমূল সাংসদ সৌগত দাবি করেছিলেন যে, তিনি একটি হুমকি ফোন পেয়েছেন। জয়ন্তকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা না করলে তাঁকে খুন করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার মদন দাবি করেছেন, আড়িয়াদহের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলায় তিনিও হুমকি-ফোন পেয়েছেন। সে প্রসঙ্গে শুক্রবার জয়ন্তকে প্রশ্ন করা হয়। তার জবাবে জয়ন্ত বলেন, ‘‘মদন মিত্রে সঙ্গে কোনও যোগ নেই।’’ মদনের সঙ্গে তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল জয়ন্তকে। তার উত্তরে জয়ন্ত বলেন, ‘‘নেতাদের সঙ্গে ও রকম ছবি সকলেরই থাকে।’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মদন দাবি করেছেন, মাঝরাতে তাঁকে হুমকি দিতে ফোন করা হয়েছিল। ফোনের ও পার থেকে তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘‘তুই বাঁচবি না। কামারহাটিকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছিস। তোকে গুলি করে দেব। গুলি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হ।’’ মদনের দাবি, ফোনে পরিষ্কার বাংলায় কথা বলেছিলেন ওই ব্যক্তি। ৪৬ সেকেন্ড ওই অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর কথা হয়। বিধায়কের দাবি, তিনি ফোন রেকর্ড করতে পারেননি। সেটা তাঁর ব্যর্থতা। সৌগতের পাওয়া হুমকি-ফোন নিয়েও মদন বলেন, ‘‘সৌগত রায়কে যেখান থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সেই ফোনের লোকেশন খুঁজে বার করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। কারণ ওঁকে ফোন করার পরের দিনই আমার কাছে ফোন এল। আমি ভয় পাইনি। কারণ, এই ধরনের গুন্ডাদের আমি চিনি। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে পুলিশে এফআইআর করব।’’
অন্য দিকে, দুধ বিক্রেতা থেকে পাঁচ বছরে ‘জায়ান্ট’ হয়ে ওঠা জয়ন্তের দুধসাদা অট্টালিকা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আড়িয়াদহ মৌসুমি মোড় থেকে কিছুটা এগোলেই প্রতাপ রুদ্র লেন। সেই গলির ভিতরে পুকুরের পাড় ঘেঁষে ওই তিন তলা অট্টালিকা গড়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার কামারহাটি পুরসভা জানিয়েছে, বাড়িটি অবৈধ। পুরসভার তরফে ওই অট্টালিকার কোনও নকশা (প্ল্যান) অনুমোদন করা হয়নি। বাড়ি নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে জয়ন্তের ভাই প্রিয়ন্ত সিংহ বলেন, ‘‘বাড়িটা তো আমার দাদার নামে খাতায়কলমে হবে না। রেজিস্ট্রি হয়নি এখনও। আমাদের ১৮ জনের পরিবার। জয়েন্ট ফ্যামিলির বাড়ি। এই বাড়ির পিছনে দাদার ১০ পারসেন্ট অবদান আছে কি না সন্দেহ। দাদার এলআইসির প্রিমিয়ামও আমাদের দিতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy