Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Jyotipriya Mallick

আছেন জেলে, তবু বালু এখনও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য নিগমের চেয়ারম্যান পদে! বির্তক শুরু খাদ্য দফতরে

‘এসেনশিয়াল কমোডিটিজ় সাপ্লাই কর্পোরেশন’-এর চেয়ারম্যান পদে এখনও রয়ে গিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সম্প্রতি এমনিই তথ্য প্রকাশে এসেছে। গত বছর ২৭ অক্টোবর রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল ইডি।

Jailed Jyotipriyo Mallick still the Chairman of West Bengal Essential Food Corporation

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩২
Share: Save:

জেলবন্দি থেকেও খাদ্য দফতরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিগমের (এসেনশিয়াল কমোডিটিজ় সাপ্লাই কর্পোরেশন) চেয়ারম্যান পদে রয়ে গিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিক। সম্প্রতি এমনই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। তার পরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে খাদ্য দফতরের অন্দরে।

গত বছর ২৭ অক্টোবর রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে সল্টলেকের বাড়ি থেকে বালুকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘প্রভাবশালী’ তকমা সরাতে মল্লিক পরিবারের অনুরোধেই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও খাদ্য দফতরের এক গুরুত্বপূর্ণ নিগমের পদে কী ভাবে বালু থেকে গিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। খাদ্য দফতরের তরফে এই নিগমই প্রধানত খাদ্যশস্য সংগ্রহ, মজুত, সরবরাহ এবং ব‌ণ্টনের মতো কাজগুলি করে থাকে। সেই সূত্রেই খাদ্য দফতরের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, এমন একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নিগমের চেয়ারম্যান পদে কী ভাবে একজন জেলবন্দি রয়েছেন? ২৩ জনকে নিয়ে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান পদে যে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী বালু এখনও রয়েছেন, তা নিগমের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও লেখা রয়েছে। ওই ওয়েবসাইটে ‘চেয়ারম্যান’ হিসাবে এখনও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নামই রয়েছে।

তবে ‘স্পর্শকাতর’ ওই বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে নারাজ খাদ্য দফতরের কোনও কর্তা। নিগমের চেয়ারম্যান পদে বালুকে বসিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। আধিকারিকেরা মনে করছেন, নিগমের চেয়ারম্যান পদে বালুর থেকে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা। তাই তাঁরা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ২০১১ সালে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর মন্ত্রিসভায় খাদ্য দফতরের দায়িত্ব পান বালু। অতীতের উদাহরণ বলছে, সাধারণত খাদ্যমন্ত্রীই ওই নিগমের চেয়ারম্যান হন। ২০১২-’১৬ পর্যন্ত তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে বালুই ওই নিগমের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছিলেন। ২০১৬ সালের ভোটের আগে অভিজ্ঞ এক আমলাকে নিগমের চেয়ারম্যান করেছিল রাজ্য সরকার। তখন থেকে ২০২১ সালের ভোট এবং ভোটের পরে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ওই আমলাই নিগমের চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে ২০২১ সালের ভোটের পরে বালুকে খাদ্য দফতর থেকে সরিয়ে বন দফতরের মন্ত্রিত্ব দেন মমতা। খাদ্যমন্ত্রী হন রথীন ঘোষ। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে রথীনকে নিগমের চেয়ারম্যান করা হয়নি। ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে বালু খাদ্যমন্ত্রী না থাকলেও তাঁকে রাজ্য অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিগমের চেয়ারম্যান পদে নিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তখন থেকেই বালু ওই পদে আছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে শাসকমহলের একাংশ দাবি করেছিল, খাদ্য দফতরের মন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে নিগমকর্তা হিসেবে বালুর উপর আস্থা রাখতে চেয়েছিলেন মমতা। এক দিকে রাজ্যে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প কার্যকর করা এবং অন্য দিকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার পদ্ধতি ‘ত্রুটিমুক্ত’ রাখা জরুরি ছিল বলেই বালুকে ওই দায়িত্বে ফেরানো হয়েছিল। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মূলত কৃষকদের থেকে ধান কেনার কাজ করে এই নিগম। যাবতীয় কাজকর্ম মূলত দেখেন নিগমের সরকারি আধিকারিকেরা। তাই চেয়ারম্যানের সে অর্থে কোনও ভূমিকা থাকে না। ফলে নিগমের চেয়ারম্যানের পদে থাকলেও জেলে থেকে হাবড়ার তৃণমূল বিধায়ক বালুর পক্ষে ‘দায়িত্ব পালন’ করা বা ‘কাজ’ করা সম্ভব নয়।

সম্প্রতি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার কারণে জেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বালুকে। সুস্থ হওয়ার পরে মঙ্গলবার আবার জেলে ফেরানো হয়েছে তাঁকে। তার মধ্যেই বালুর জামিনের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে প্রাক্তন মন্ত্রীর পরিবার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy