দিনের মঙ্গলাহাট শনিবার রাতে বসা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন হাটের ব্যবসায়ীরাই। তাই প্রথম রাতে হাট চালু হওয়ার আগে দুপুর থেকে দুই চিত্র দেখা গিয়েছিল হাওড়ার মঙ্গলাহাটে। এক দিকে যখন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে শনিবার রাত ৯টা থেকে হাট চালু করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এক দল ব্যবসায়ী, তখনই হাট না-খোলার দাবিতে কয়েকশো ব্যবসায়ী ব্যানার, পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেন হাওড়া ময়দান চত্বরে। তাই রাতের হাট কতটা জমবে, এ নিয়ে সন্দিগ্ধ ছিলেন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। সেই সন্দেহই সত্যি প্রমাণ হল। সূত্রের খবর, অর্ধেকেরও কম ব্যবসায়ী নিয়ে বসেছিল হাট। স্বাভাবিক ভাবেই ক্রেতাও ছিল কম। তবে কোভিড-বিধি মেনে শুরু হয়েছে হাটের বেচাকেনা।
করোনা সংক্রমণ নিয়ে সতর্কতার জেরে ছ’মাস হাট বন্ধ থাকার পরে চলতি মাসের প্রথমে জেলা প্রশাসন সোম ও মঙ্গলবারের বদলে ১৯ তারিখ থেকে শনিবার রাতে হাট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। শুক্রবার জেলা পুলিশের সঙ্গে বৈঠকের পরে হাটের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব শনিবার রাতে হাট চালুর ব্যাপারে সম্মতি জানান। প্রস্তুতি হিসেবে শনিবার পোড়া মঙ্গলাহাট-সহ অন্যান্য হাট-ভবনের প্রবেশপথে স্যানিটাইজ়েশন টানেল বসানো হয়। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর জন্য রাখা হয়েছে ফেস শিল্ড, মাস্ক।
পোড়া মঙ্গলাহাট ভবনের মালিক শান্তিরঞ্জন দে বলেন, ‘‘আমাদেরই পাঁচ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী আছেন। এই ভবনের সাতটি প্রবেশপথে স্যানিটাইজ়েশন টানেল বসানো হয়েছে। এ ছাড়া হাটে সংক্রমণ রুখতে সকলকে একই রকম ফেস শিল্ড ও মাস্ক বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। রাতভর হাট খোলা রাখার সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’

ব্যবস্থা: মঙ্গলাহাটে বসানো হয়েছে স্যানিটাইজ়েশন টানেল। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
একই বক্তব্য হাওড়া হাট ব্যবসায়ী সমন্বয় সমিতির। সমিতির তরফে রাখাল চৌধুরী বলেন, ‘‘যে কারখানা এত দিন তালা বন্ধ ছিল, তা আগে খোলা দরকার। তার পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যাঁরা শনিবার রাতে হাট খোলার বিরোধিতা করছেন, তাঁরা না বুঝে করছেন। তবে ওই সংখ্যাটা খুব কম।’’
রাতের মঙ্গলাহাট নিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন এক দল হাট ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীদের পক্ষে সুনীল দত্ত বলেন, ‘‘কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের নেতা মনে করে আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। আমরা শনিবার রাতের হাটে বসব না। প্রশাসনের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দিতে ১১টি হাট-ভবনের দোকানদারেরা প্রতিবাদ মিছিল করেছি।’’ সুনীলবাবুর দাবি, অনেক ব্যবসায়ী এ দিন হাটের স্থায়ী দোকানে বসবেন না। তাই হাট জমবে না।
তবে শনিবার দুপুরেই বিভিন্ন জেলা থেকে হাটের ব্যবসায়ীরা বস্তায় করে তাঁদের সম্ভার নিয়ে আসতে শুরু করেছিলেন। প্রশাসনের তরফে প্রতিটি হাট-ভবনের সামনে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মোতায়েন করা হয়েছিল পর্যাপ্ত পুলিশ। শনিবার রাতের পরিস্থিতি দেখে ব্যবসায়ীদের একটি অংশের অবশ্য মত, কম ব্যবসায়ী নিয়ে হলেও বন্ধ মঙ্গলাহাট অন্তত শুরু তো হয়েছে। এই বা কম কী! এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় তো লাগবেই।