অনিয়ম: মুম্বই রোড দখল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে অটো। উলুবেড়িয়ার নিমদিঘি মোড়ে। নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনায় এক শিশু-সহ তিন জনের মৃত্যু, পুলিশের হুঁশিয়ারি— তারপরেও ছবিটা বদলাল না।
বৃহস্পতিবারও দিনভর মুম্বই রোডের অর্ধেক দখল করে উলুবেড়িয়া নিমদিঘি মোড়ে যাত্রী তোলার জন্য যত্রতত্র দাঁড়িয়ে রইল অটো। পুলিশ মাইকে নিষেধ করা ছাড়া আর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অটো-চালকেরা সেই নিষেধে কান দেননি। যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতাতেই তাঁরা মত্ত রইলেন।
বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ ওই মোড়েই একটি ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় রাজাপুরের বাসিন্দা মোটরবাইক আরোহী পাপিয়া মণ্ডল (২৪), তাঁর চার বছরের ছেলে পৃথ্বীশ এবং পাপিয়ার ভাসুরের মেয়ে, সাত বছরের বিদিশার। দুর্ঘটনার পরেই এলাকাবাসী যত্রতত্র অটো দাঁড়ানোর প্রতিবাদে অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি, একটি অটোকে পাশ কাটাতে গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাইকটি। ডাম্পারটির সঙ্গে বাইকের হ্যান্ডেল ঠেকে যায়। বাইকটি চালাচ্ছিলেন পাপিয়ার স্বামী দীপ মণ্ডল। সকলেই ছিটকে পড়েন। দুর্ঘটনায় দীপজখম হন।
দুর্ঘটনার পরেই পুলিশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মুম্বই রোডে অটো দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। সেগুলি সার্ভিস রোডে দাঁড়াবে। জেলার এক পুলিশকর্তার হুঁশিয়ারি ছিল, মুম্বই রোডে অটো দাঁড়ালে জরিমানা করা হবে। কিন্তু কোথায় কী!
ঘটনাস্থলেই কাছেই রয়েছে পুলিশের কিয়স্ক। সেখান থেকে পুলিশ শুধু অটোকে মুম্বই রোড থেকে সরে যেতে প্রচার চালায়। কিন্তু কোনও অটো সরেনি। জরিমানাও হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে সপ্তাহখানেক আগেই ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি পালন হয়েছে ঘটা করে। তার পরেও অটো-চালকদের সচেতনতা ফিরল কই?
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পুলিশের মদতেই বেআইনি ভাবে মুম্বই রোডে অটো চলে। পুলিশ মাসোহারা পায়। অটো-চালকদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেল, তাঁদের কোনও সংগঠন নেই। যে যাঁর মতো অটো কিনে মুম্বই রোডে চালান।
বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের মদতেই বেআইনি ভাবে অটো চলছে মুম্বই রোডে। উলুবেড়িয়া পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর অঞ্জনা অধিকারী বলেন, ‘‘অটোর দৌরাত্ম্যে নিমদিঘি মোড় মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহুবার পুলিশকে বলা হয়েছে মুম্বই রোড থেকে অটো স্ট্যান্ড তুলে দিতে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’ বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ রেজাউল বলেন, ‘‘অটোগুলিকে অনেকদিন ধরেই বলা হচ্ছে সার্ভিস রোডে দাঁড়াতে। কিন্তু চালকেরা কোনও কথা না শুনে যাত্রী তুলতে অটো নিয়ে মুম্বই রোডেই দাঁড়াচ্ছেন।’’
অটোচালকদের মদতের অভিযোগ উড়িয়ে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের ডিএসপি (ট্রাফিক) অনির্বাণ হোম রায় বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সমস্ত অটোকে বলা হয়েছে সার্ভিস রোডে দাঁড়াতে। এরপরেও যদি মুম্বই রোডে দাঁড়ায়, প্রথমে চালকদের জরিমানা করা হবে। পরে অটো বাজেয়াপ্ত করা হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুম্বই রোড ধরে উলুবেড়িয়া ও রানিহাটির মধ্যে অন্তত ৫০০ অটো চলে। নিমদিঘি মোড় থেকে রানিহাটি এবং বাগনান— দু’দিকের অটো চলে। আবার উলুবেড়িয়া শহর থেকেও অটো আসে। নিমদিঘি মোড় থেকে এক দিকে চলে গিয়েছে বাণীবন যাওয়ার রাস্তা, অন্যদিকে উলুবেড়িয়া স্টেশন যাওয়ার রাস্তা। ওই মোড় থেকে ৫০ ফুট দূরে, কলকাতার দিকে যেতে পড়ে উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতাল। এখান থেকে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়েরা মুম্বই রোডে উঠতে হিমশিম খান। মোড়ের মুখেই দু’তিন সারিতে দাঁড়িয়ে থাকে অটো। ফলে, গ্রামের রাস্তা থেকে যাঁরা মুম্বই রোডে উঠে কলকাতার দিকে বা বাগনানের দিকে যেতে চান, তাঁদের অনেকটাই মুম্বই রোডের মাঝ বরাবর চলে আসতে হয়। ফলে, দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে।
বুধবার ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন দীপ মণ্ডল। নিমদিঘি থেকে মিষ্টি কিনে মুম্বই রোডেউঠতেই দুর্ঘটনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy