অস্ত্রোপচারে ‘ভুলে’র জেরে পরবর্তী চিকিৎসায় কার্যত সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে, এই অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিল হুগলির সাহাগঞ্জের পাত্রপুকুরের বাসিন্দা সঙ্গীতা রাউত নামে এক রোগিণীর পরিবার। প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে জেলাশাসক, সিএমওএইচ-সহ বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকের কাছে।
সিএমওএইচ মৃগাঙ্কমৌলি কর বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’ প্রকাশ সামন্ত নামে প্রবীণ ওই শল্য চিকিৎসক ‘ভুল’ মানেননি। বছর পঁয়তাল্লিশের সঙ্গীতা বর্তমানে কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তিনি শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের কর্মী।
সঙ্গীতার আত্মীয়েরা জানান, গত ডিসেম্বরে তাঁর পেটের সমস্যা হয়। পরীক্ষায় জানা যায়, পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর চুঁচুড়ার কারবালা মোড়ের একটি নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার (মাইক্রো সার্জারি) করেন প্রকাশ। পয়লা জানুয়ারি ছুটি হয়। দু’দিন পরেই শ্বাসকষ্ট, বমি শুরু হয়। ছেলে অনিকেতের দাবি, উপসর্গ দেখে প্রকাশ ‘স্বাভাবিক ব্যাপার’ বলে ওষুধ দেন। সমস্যা না মেটায় ৮ জানুয়ারি ফের তাঁর চেম্বারে গেলে তিনি ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। প্রকাশ ওই হাসপাতালের চিকিৎসক। তাঁর তত্ত্বাবধানেই সঙ্গীতাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, সেখানে অস্ত্রোপচারের জন্য পেটের কাটা অংশ দিয়ে মল বেরোতে থাকে। অন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ২৭ জানুয়ারি কলকাতায় স্থানান্তরিত করানো হয়।
অনিকেতের দাবি, কলকাতার হাসপাতালে ধরা পড়ে, অস্ত্রোপচারের সময় মায়ের বৃহদান্ত্রের অংশ (ট্রান্সভার্স কোলন) কেটে গিয়েছিল। সেই কারণেই মল বেরিয়ে আসছিল। তিনি জানান, কলকাতার হাসপাতালে প্রথম পর্যায়ের চিকিৎসা শেষ হওয়ায় মাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। মাস দুয়েক পরে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য ফের ভর্তি করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা বিল হয়েছে। চিকিৎসা বিমার সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা মিলেছে। গয়না বন্ধক দিয়ে ৭ লক্ষ টাকা। বাকি কোথা থেকে আসবে, পরবর্তী চিকিৎসার টাকাই বা কী করে জোগাড় করব, ভেবে পাচ্ছি না। তাই চাই, সরকার বিষয়টা দেখুক।’’ সঙ্গীতার স্বামী অজয় হুগলি মহসিন কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘চিকিৎসকের ভুলের মাসুল গুনতে হচ্ছে আমাদের।’’
প্রকাশের দাবি, ‘‘সফল অস্ত্রোপচারই করেছিলাম। এই ধরনের ভুল হলে খুব তাড়াতাড়ি অভিযোগ হওয়ার কথা। ওঁরা অনেক দিন পরে অভিযোগ করছেন। ইমামবাড়া হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলাম। ওঁরাই বাইরে নিয়ে গিয়েছেন। অভিযোগ যখন হয়েছে, তদন্ত হোক।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)