E-Paper

মঙ্গলাহাটে প্রকাশ্যেই অবাধে ‘তোলাবাজি’, অভিযুক্ত শাসকদল

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাটে বসার জন্য জায়গার ‘ভাড়া’ বাবদ টাকা তো দিতেই হয়, সেই সঙ্গে হাটের দিন ফুটপাতে বসার অনুমতি পেতে দিতে হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

মঙ্গলাহাটে ব্যবসায়ীদের থেকে চলছে তোলাবাজি।

মঙ্গলাহাটে ব্যবসায়ীদের থেকে চলছে তোলাবাজি। —নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ০৬:৫৩
Share
Save

দৃশ্য ১: সকাল ৬টা ২০। হাওড়ার নগরপালের কার্যালয়ের সামনের রাস্তা। সবুজ রঙের গোল গলা গেঞ্জি আর কালো বারমুডা পরা এক যুবককে দেখা গেল, হেলেদুলে এসে ফুটপাতে বসা হাটের ব্যবসায়ীদের সামনে হাত বাড়িয়ে দিলেন। ব্যবসায়ীরাও কোনও কথা না বাড়িয়ে ওই যুবকের দাবি মতো টাকা গুঁজে দিলেন তাঁর হাতে। মুহূর্তের মধ্যে কয়েক হাজার টাকা চলে এল ওই যুবকের হাতে।

দৃশ্য ২: সকাল ৭টা। তত ক্ষণে হাওড়া থানার সামনে বঙ্কিম সেতুর নীচ থেকে ফাঁসিতলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত দখল করে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যবসায়ীদের বিক্রিবাটা। কাঁধে সবুজ উত্তরীয়, হালকা সবুজ শার্ট আর নীল জিন্‌স পরা এক ব্যক্তিকে দেখা গেল, রীতিমতো খাতা হাতে দলবল নিয়ে হাটের ব্যবসায়ীদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এক-এক জন করে ব্যবসায়ী তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন নগদ টাকা। আর ওই ব্যক্তি খাতায় লিখে নিচ্ছেন তাঁর নাম। টাকা তোলার পরেই দলবল সমেত হাওয়া হয়ে গেলেন তিনি।

যে মঙ্গলাহাটকে ঘিরে এত উত্তেজনা, চাঞ্চল্য, মারপিট— এই ছবি দেখা গিয়েছে সেখানেই। অভিযোগ উঠেছে, প্রতি সোম ও মঙ্গলবার শাসকদলের স্থানীয় গোষ্ঠী এ ভাবে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে জেলাশাসকের বাংলো ও নগরপালের দফতরের সামনেই অবাধে তোলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দিনের জন্য সরকারি রাস্তার এক টুকরো জায়গার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা। তবে, কোন রাস্তার মোড়, সেই অনুযায়ী টাকার অঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফুটপাতে বসা এক ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কিসের টাকা দিলেন? কাকে দিলেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘আমরা অন্য জেলা থেকে এসে দু’দিন ব্যবসা করি। তার মধ্যে ঝুটঝামেলা আর ভাল লাগে না। তৃণমূলের লোকজনই এই টাকা তোলেন। তাই পুলিশকে বলেও কোনও লাভ হয় না।’’

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাটে বসার জন্য জায়গার ‘ভাড়া’ বাবদ টাকা তো দিতেই হয়, সেই সঙ্গে হাটের দিন ফুটপাতে বসার অনুমতি পেতে দিতে হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এই ব্যবস্থা বেশি করে শুরু হয়েছে গত বছর মঙ্গলাহাটে আগুন লাগার পর থেকে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বর্তমানে শাসকদলের একটি হকার ইউনিয়নের নেতাদের মদতেই এই তোলাবাজি মারাত্মক আকার নিয়েছে মঙ্গলাহাটে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ‘মঙ্গলাহাট ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক রাজকুমার সাহা বলেন, ‘‘আমরা জানি, এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে, আমাদের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে যা করার করব। তবে, এমন ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’

তোলাবাজির এই অভিযোগ সম্পর্কে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু-নিয়ন্ত্রিত ‘হাওড়া হকার সমিতি’র বর্ষীয়ান নেতা অরূপ রায় বলেন, ‘‘এ রাজ্যে ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে হাওড়া হাটে এ ভাবে তোলাবাজি হয়নি। শুরু হয়েছে গত এক বছর ধরে। এর পিছনে শাসকদলের কিছু লোক তো অবশ্যই আছেন।’’

পোড়া মঙ্গলাহাট ফের পুড়ে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছিলেন। তার পরে মঙ্গলাহাটের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। ওই সময়েই তৈরি হয় শাসকদলের ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল হকার ইউনিয়ন’। সেই ইউনিয়নের সভাপতি, তৃণমূল নেতা সমর মুখোপাধ্যায়ও জানান, তাঁর কানেও তোলাবাজির খবর এসেছে। গত সপ্তাহে দু’জনকে পুলিশ ধরেওছিল। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের ইউনিয়নের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তোলাবাজি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mangla Haat Extortion

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।