Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Illegal Firearms

পটল, ঝিঙে, ফুলকপি! চোরাই অস্ত্রের সাঙ্কেতিক দুনিয়া আর কারখানা দেখে এল আনন্দবাজার অনলাইন

ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে যে গ্রামে পৌঁছনো গেল, তা নিতান্তই সাদামাটা। শান্ত। দেখে ঠাহর করার উপায় নেই যে, এই জায়গাটিই মুর্শিদাবাদে বেআইনি অস্ত্র কারবারের আঁতুড়ঘর।

মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে সাঙ্কেতিক শব্দ ব্যবহার করে প্রকাশ্যে চলছে বেআইনি অস্ত্রের কারবার! সন্দেহ এড়াতে মরসুম ভেদে সঙ্কেত বদলেও যায়।

মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে সাঙ্কেতিক শব্দ ব্যবহার করে প্রকাশ্যে চলছে বেআইনি অস্ত্রের কারবার! সন্দেহ এড়াতে মরসুম ভেদে সঙ্কেত বদলেও যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রণয় ঘোষ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:২০
Share: Save:

কাকা, অর্ডার নাও! দুটো ফুলকপি। একটা হাইব্রিড আর একটা দেশি। সঙ্গে দশটা গোল আলু। শাঁখালু চারটে। লম্বা কুল কুড়িটা। গোল কুল দশটা। যুবকের মুখচোখ দেখে মনে হল, ফোনের ও পার থেকে ইতিবাচক জবাবই মিলেছে।তার পর আবেদন গেল, ‘‘কাকা, একটু চাপ আছে। শুক্রবারের মধ্যে পৌঁছে দিয়ো। মামাদেরও বলা আছে। ওরা খাতির রাখবে।’’মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ব্লকের তক্তিপুর বাজার মোড়ে ফোনে বছর তিরিশের যুবকের ফোন কথোপকথন শুনে যদি কেউ ভাবেন, গ্রামের কোনও খুচরো ব্যবসায়ী পাইকারি আড়তদারকে সব্জির বরাত দিচ্ছেন তিনি, তা হলে মস্ত ভুল হবে! এই কথোপকথন খুচরো আর পাইকারি ব্যবসায়ীর মধ্যে বটে। তবে সব্জির নয়, অস্ত্রের! বিকেল শুরু হওয়ার আগেই তক্তিপুর বাজার মোড়ের চায়ের দোকানে ভিড় জমতে শুরু করেছে। বেলা গড়িয়ে সন্ধে নামতেই দোকানে তিলধারণের জায়গা নেই। থিকথিকে ভিড়ের কিচিরমিচিরের মধ্যে যুবকের কথোপকথন যে কোনও বহিরাগতের কাছেই অদ্ভুত ঠেকবে! কিন্তু কারও ভ্রুক্ষেপও নেই। অনেকে শুনে না-শোনার ভানও করছেন। কারও কারও আবার ভাবখানা এমন, তাঁরা এ সব শুনে অভ্যস্ত!মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ ভাবেই সাঙ্কেতিক শব্দ ব্যবহার করে প্রকাশ্যে চলছে বেআইনি অস্ত্রের কারবার! সন্দেহ এড়াতে মরসুম ভেদে সঙ্কেত বদলেও যায়। পুলিশের দাবি, তারা গোটা চক্রটাকেই ধরতে চাইছে। সেই মতো অভিযানও হয়। ধরাও পড়ে অনেকে। কিন্তু তাতে খুব একটা কিছু যায়-আসে না। কারবার চলে কারবারের মতোই।মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সুরিন্দর সিংহের বক্তব্য, গোপন সূত্র কাজে লাগিয়ে বেআইনি অস্ত্রের গোটা চক্রকেই তাঁরা ধরতে চাইছেন। ইতিমধ্যেই অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রচুর অস্ত্রও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। অভিযান চলবে। আর জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ভিজি সতীশ জানাচ্ছেন, বেশ কিছু জায়গায় এমন হয় বলে খবর পেয়েছেন। পুলিশের নজরে আছে। অভিযানও চলছে। ধরাও পড়েছে অনেকে।

ভৈরব নদীর উপর গঙ্গাধারী সেতু পার করে কয়েক কিলোমিটার এগোলে গজনিপুর মোড়। তার ডান দিকে হরিহরপাড়া। সেখান থেকে আর একটু এগোলেই রুকুনপুর, তক্তিপুর, গজধরপাড়া— পর পর কয়েকটি গ্রাম।

ভৈরব নদীর উপর গঙ্গাধারী সেতু পার করে কয়েক কিলোমিটার এগোলে গজনিপুর মোড়। তার ডান দিকে হরিহরপাড়া। সেখান থেকে আর একটু এগোলেই রুকুনপুর, তক্তিপুর, গজধরপাড়া— পর পর কয়েকটি গ্রাম। নিজস্ব চিত্র।

এ তো গেল পুলিশের পদস্থ আধিকারিকদের দাবি। কিন্তু সেই দাবির চৌহদ্দির বাইরে যারা এখনও রয়ে গিয়েছে?ভৈরব নদীর উপর গঙ্গাধারী সেতু। এক দিকে নদিয়া। অন্য দিকে মুর্শিদাবাদ। সেতু পার করে কয়েক কিলোমিটার এগোলে গজনিপুর মোড়। তার ডান দিকে হরিহরপাড়া। সেখান থেকে আর একটু এগোলেই রুকুনপুর, তক্তিপুর, গজধরপাড়া— পর পর কয়েকটি গ্রাম। তক্তিপুর বাজারে চায়ের দোকানের বেঞ্চে ঠায় বসে থেকে দুপুর থেকে এ সব শুনছি। আচমকা পিঠে আলতো টোকা। মুখ ফিরিয়ে দেখি, হারান’দা (নাম পরিবর্তিত)। লুঙ্গি-শার্ট পরিহিত হারান’দার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয়। এলাকায় তাঁর নামডাক আছে। কয়েক দিন আগে কথা প্রসঙ্গে তাঁর কাছে বেআইনি অস্ত্রের ডেরার কথা জানতে চেয়েছিলাম। তাঁর কথাতেই তক্তিপুরে আসা। পূর্ব পরিচিতের সঙ্গে বহু দিন পর মুখোমুখি সাক্ষাতে সৌজন্যের কর্তব্যটুকু সেরে প্রশ্ন করলাম, ‘‘একটু আগে একটা ছেলে এখানে দাঁড়িয়ে ফুলকপি, গোল আলু, লম্বা কুলের বরাত দিচ্ছিল ফোনে। এর মানে কী?’’হারান’দা রহস্যভেদ করে জানালেন, সব্জি-ফলের নাম এক একটা সাঙ্কেতিক শব্দ। ‘ফুলকপি’ মানে ছোট বন্দুক। ‘দেশি ফুলকপি’ মানে দেশি পিস্তল। নাইন এমএম পিস্তলকে বলে ‘হাইব্রিড ফুলকপি’। ‘গোল আলু’ হল সুতলি বোমা। আর ‘শাঁখালু’ মানে সকেট বোমা। ভাল মতো গরম পড়লেই অবশ্য এ সব নাম বদলে যাবে। দেশি পিস্তল হয়ে যেতে পারে ‘পটল’। নাইন এমএম হতে পারে ‘ঝিঙে’। সকেট আর সুতলি বোমার নাম হয়ে যেতে পারে ‘লাল কুমড়ো’, ‘সাদা কুমড়ো’।

তক্তিপুর বাজার মোড়ের সেই চায়ের দোকান।

তক্তিপুর বাজার মোড়ের সেই চায়ের দোকান। নিজস্ব চিত্র।

এ সব শোনার পর অস্ত্র কারখানায় না যেতে চাওয়ার অর্থ হয় না। প্রথমে অবশ্য আবেদন খারিজ হয়ে গেল। কিন্তু বিস্তর আলাপ-আলোচনার পরে শেষমেশ রাজি হলেন বছর চল্লিশের হারান’দা। জানালেন, ডেরায় যেতে হলে ‘ক্রেতা’ হিসাবেই যেতে হবে। অন্য কোনও উপায় নেই। সঙ্গে যাবেন মন্টুভাই (নাম পরিবর্তিত)। তিনি তক্তিপুরেই থাকেন। অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ওঠাবসা। হারান’দা বোঝালেন, অস্ত্র কারবারিদের ডেরায় পরিচিতদের সঙ্গেই যাওয়া ভাল। তাতে সহজে তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করা যায়। মেলে ভিতরে ঢোকার অনুমতিও। মন্টুকে ফোন করে ডেকে আনা হল। তাঁকে আগন্তুকের পরিচয় দিয়ে অস্ত্র কারখানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন হারান’দা। ‘কমিশন’ প্রাপ্তির আশায় মন্টু রাজি হয়ে গেলেন। ফোন করে সব জানালেন দেশি অস্ত্র কারখানার মালিককে। তার পরে দুটো মোটরবাইকে চেপে তিন জন রওনা হলাম। দু’পাশে ধূ-ধূ মাঠ। সেই পথ ধরে যে গ্রামে পৌঁছলাম, তা নিতান্তই সাদামাটা। শান্ত। দেখে ঠাহর করার উপায় নেই যে, এই এলাকা মুর্শিদাবাদে বেআইনি অস্ত্র কারবারের কার্যত আঁতুড়ঘর।গ্রামের একটা একচালা পাকা বাড়ির সামনে গিয়ে থামল মন্টুর বাইক। অস্ত্র ব্যবসায়ীকে ফোন করে তিন জনের আগমনের খবর দিলেন মন্টু। মিনিট তিনেকের মধ্যে হাজির হলেন গামছা-গলায় এক ব্যক্তি। এঁরও পরনে লুঙ্গি-শার্ট। ইনি কারখানার শ্রমিক। তিন আগন্তুককে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে যেতে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, মোবাইল জমা রেখে যেতে হবে। তিনটে ফোনই তাঁর জিম্মায় দিতে হল।টিনের একচালা বাড়ি। বাড়ির ভিতরে পিছনের দরজা দিয়ে একটা সোজা এবং সরু রাস্তা চলে গিয়েছে। সেই রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়েই চমক লাগল! বিশাল অস্ত্রের ভান্ডার। বিরাট কর্মকাণ্ড চলছে। গলায় গামছা পেঁচিয়ে কাজ করছেন পাঁচ জন শ্রমিক। অপরিচিতের উপস্থিতি টের পেয়ে কোনও ক্রমে মুখ ঢেকে ফেলার চেষ্টা করছিলেন। তত ক্ষণে চলে এসেছেন কারখানার মালিক। নির্দ্বিধায় ‘খদ্দের’কে তিনি দেখাতে শুরু করলেন একের পর এক নমুনা। বোঝালেন দেশি একনলা বন্দুক তৈরির সুনিপুণ ‘ওয়েল্ডিং’ কৌশল। যা সামান্য এ দিক থেকে ও দিক হলেই গুলি ছোড়ার সময় বিস্ফোরণ হতে পারে।বলতে বলতে টেবিলের নীচ থেকে কালো চকচকে নাইন এমএম বার করে আনলেন। জানালেন, দাম ৫০ হাজার! মুঙ্গেরের জিনিস। তাঁদের কারখানায় তৈরি নাইন এমএমের দাম অবশ্য কম। ৩৫-৪০ হাজার। সেভেন এমএম পড়ে ২৫-৩০ হাজারের মধ্যে। ওয়ান শটার মেলে ১৫ হাজারে। বেলজিয়ান পিস্তলের দাম প্রায় ৮০ হাজার। আর রাইফেল ৬০ হাজার। অতি সাধারণ সেই বাড়ির খুপরি ঘরে দাঁড়িয়ে কারখানার মালিক বলছিলেন, ‘‘খদ্দের তো অনেক ধরনের হয়। যাঁরা কম দামের মাল চান, তাঁদের জন্য আমরা বানাই। বেশি দামের মাল আসে মুঙ্গের থেকে।’’

এ ভাবেই হাতে নাড়াচাড়া করে দেশি একনলা বন্দুক তৈরির সুনিপুণ ‘ওয়েল্ডিং’ কৌশল বোঝাচ্ছিলেন কারখানার মালিক। নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই হাতে নাড়াচাড়া করে দেশি একনলা বন্দুক তৈরির সুনিপুণ ‘ওয়েল্ডিং’ কৌশল বোঝাচ্ছিলেন কারখানার মালিক। নিজস্ব চিত্র।

তার পরেই আচমকা প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনার কী লাগবে?’’ইতস্তত এবং অপ্রস্তুত ভাব কোনও রকমে সামলে বলি, ‘‘রিভলভার।’’টেবিলের তলা থেকে বাক্স বার করে আনলেন মালিক। সেটা থেকে একটা রিভলভার নিজের হাতে সামান্য নাড়াচাড়া করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘দেখুন ভাল করে। পুলিশের রিভলভারের সঙ্গে পাল্লা দেবে।’’ দাম ২০ হাজার। সঙ্গে বিনামূল্যে ছ’টা গুলি। বাড়তি গুলির প্রতিটার দাম ৪০০ টাকা। রিভলভার নিয়ে হালকা চাপ দিতেই বেরিয়ে এল ‘চেম্বার’। পর পর ছ’টা গুলি ভরার জায়গা। রিভলভার ‘লোড’ হতেই মালিক বলে উঠলেন, ‘‘এ বার গুলি চালাতে পারেন!’’‘ক্রেতা’ সেজে গিয়েছি বটে। কিন্তু রিভলভার কিনে ফিরতে হবে ভাবিনি! কাটিয়ে বেরোব কী করে যখন ভাবছি, মন্টু বাঁচিয়ে দিলেন, ‘‘এলাকায় অচেনা মানুষ আপনি। এই রাতে অস্ত্র নিয়ে ফেরাটা ঠিক হবে না। কে কোথায় কী ভাবে আপনাকে দেখে রেখেছে! দিনের বেলায় আসাই ভাল। কী বল হারান’দা?’’ অভিজ্ঞ হারান’দাও বললেন, ‘‘এত রাতে রিভলভার নিয়ে এখান থেকে যাওয়া ঠিক হবে না। দিন দুয়েক পরে এসে নিয়ে যাবেন। দেখেই তো গেলেন।’’ফেরার পথে হারান’দা বলছিলেন, জেলার বেশ কয়েকটা জায়গায় দেশি বন্দুক তৈরির কারখানা রয়েছে। তবে সেখানকার অস্ত্রের মান তত ভাল নয়। ভাল আগ্নেয়াস্ত্র আসে বিহার এবং ঝাড়খণ্ড থেকে। তার পর পাইকারি ব্যবসায়ীদের থেকে তা পৌঁছে যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে। জেলা পুলিশও জানে, অস্ত্র কারবারের চেনা রুট হল ‘মুঙ্গের টু ফরাক্কা’। অনেক সময় ঝাড়খণ্ডের বংশবাটি হয়ে জেলায় অস্ত্র আসে। কখনও সড়কপথে, কখনও রেলপথে। পুলিশের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেক সময় জলপথেও।রুট প্রায় একই রকম থাকলেও কৌশল ঘন ঘন বদল হয়। মাঝেমাঝে ট্রেন বদল, সড়কপথে হলে বাস বদল বা অনেক সময় ট্রাকে করে গোপনে আসে অস্ত্র। পুলিশ আর সাধারণ মানুষের নজর এড়াতে অস্ত্রের এক একটা অংশ খুলে আলাদা নিয়ে এসে জোড়াতালি দেওয়া হয় ফরাক্কায়। মাঝেমধ্যে বদলে যায় কারবারিদের মুখও। যাতে ‘চেনা’ না হয়ে যায়। সহজে পুলিশ ‘টার্গেট’ করতে না পারে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘একটা সময়ে মুঙ্গের থেকে পুরোপুরি তৈরি অস্ত্রই জেলায় আসত। পরে নজর ঘোরাতে অস্ত্রের আলাদা আলাদা অংশ আনতে শুরু করে কারবারিরা। অন্য ব্যবসার আড়ালে অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ জেলায় নিয়ে এসে মুঙ্গেরের দক্ষ কারিগর দিয়ে তৈরি করা হত আধুনিক দামি আগ্নেয়াস্ত্র।’’মুঙ্গেরের ছোঁয়ায় এখন অবশ্য জেলার অনেকেই দক্ষ কারিগর হয়ে উঠেছেন। যাঁরা অনায়াসে ঘরে বসে জুড়ে দিচ্ছেন আস্ত নাইনএমএম। যেমন দেখে-আসা সেই অস্ত্র কারখানার পাঁচ শ্রমিক। কিন্তু নাকের ডগায় এত বড় কারবার পুলিশ টের পায় না? বেরোনোর সময় প্রশ্নের জবাবে কারখানার মালিক দাবি করেছিলেন, পুলিশকর্মীদের একাংশের প্রচ্ছন্ন মদত না থাকলে এই কারবার সম্ভব হত না। সেই সূত্রেই জানা গেল তক্তিপুর বাজার মোড়ের চায়ের দোকানে সেই যুবক অস্ত্রক্রেতার ‘মামা’ সম্বোধনের রহস্য। মন্টু বলেছিলেন, ‘‘মামা মানে পুলিশ। এরা (অস্ত্র কারবারিরা) মামাদের সেট করে রেখেছে। তবে এলাকায় অশান্তি হলে পুলিশের নজরদারি বেড়ে যায়। তখন একটু সামলে চলতে হয়। যদিও পুলিশি অভিযানের খবর এরা আগেভাগেই পেয়ে যায়।’’

অস্ত্র কারবারের চেনা রুট হল ‘মুঙ্গের টু ফরাক্কা’। অনেক সময় ঝাড়খণ্ডের বংশবাটি হয়ে জেলায় অস্ত্র আসে।

অস্ত্র কারবারের চেনা রুট হল ‘মুঙ্গের টু ফরাক্কা’। অনেক সময় ঝাড়খণ্ডের বংশবাটি হয়ে জেলায় অস্ত্র আসে। নিজস্ব চিত্র।

অস্ত্র কারবারের সঙ্গে পুলিশের একাংশের যোগসাজশের কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি জোর দিতেই মুর্শিদাবাদে দু’টি আলাদা পুলিশ জেলা তৈরি করা হয়েছে। তার পর থেকে প্রায়ই বিশেষ পুলিশি অভিযান চলে। প্রচুর অস্ত্র উদ্ধারও হয়। অস্ত্র কারবারিরাও গ্রেফতার হন। মুঙ্গের থেকে ট্রেনে করে হাওড়া-কলকাতা ছুঁয়ে সড়কপথে বর্ধমান হয়ে কান্দিতে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের হাতে অস্ত্র কারবারিদের ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।পুলিশ সূত্রের দাবি, গত নভেম্বরেই কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার থানারপাড়া থানা এলাকায় বিপুল পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। তদন্তে জানা গিয়েছিল, উদ্ধার-হওয়া অস্ত্রভান্ডারের সঙ্গে হরিহরপাড়ার কারবারের যোগ রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে আমতলা এলাকার মধুপুরের একটি চায়ের দোকানে সামান্য বচসা থেকে গুলি চলে। পরে জানা যায়, বিবদমান দু’পক্ষই অস্ত্র কারবারের সঙ্গে জড়িত। তার পরেই বেশ কয়েক বার তল্লাশি-অভিযান চালিয়ে হরিহরপাড়া থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পুলিশ প্রশাসন আরও সজাগ বলেই দাবি করেছে ওই সূত্র।মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সুরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘গোপন সূত্র কাজে লাগিয়ে বেআইনি অস্ত্রের গোটা চক্রকেই আমরা ধরতে চাইছি। ইতিমধ্যেই অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রচুর অস্ত্রও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই অভিযান লাগাতার চলবে।’’ জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ভিজি সতীশের কথায়, ‘‘বেশ কিছু জায়গায় এমন হয় বলে খবর পেয়েছি। সবটাই আমাদের নজরে আছে। অভিযানও চালানো হচ্ছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে অনেককে। ধৃতদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাতে বেআইনি অস্ত্রে এই কারবারিরা ভয় পায়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy