Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Buddhadeb Bhattacharjee Health Update

কথা বলছেন বুদ্ধদেব, তবে হিমোগ্লোবিন কমায় রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত, পুরোপুরি সরছে না বাইপ্যাপ

সোমবার ভেন্টিলেশন থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বার করার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্রিয়েটিনিন আগের থেকে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাঁচ দিনের অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ় চলছে।

Buddhadeb Bhattacharjee

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ২২:৪২
Share: Save:

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভাল। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুদ্ধদেবের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থাকায় তাঁর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১০-এর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, এই সমস্যায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখাটা জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর এ জন্য আপাতত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে এক ইউনিট রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বুদ্ধদেবের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্দিষ্ট করতে বুধবার সকাল ১২টা নাগাদ মেডিক্যাল বোর্ড বৈঠকে বসবে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, মঙ্গলবারও বুদ্ধদেবকে রাইল্‌স টিউব দিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। তাঁর সোডিয়াম-পটাশিয়াম মাত্রা ঠিক রয়েছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিকও চলছে। যার জেরে তাঁর কিডনিতে প্রভাব পড়তে পারে। ভেন্টিলেশন থেকে বুদ্ধদেবকে বার করার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত তাঁর ক্রিয়েটিনিন আগের থেকে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাঁচ দিনের অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ় চলছে। মঙ্গলবার চিকিৎসকদের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তাও বলেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এখন বাইপ্যাপ খুলে দিলেই কথা বলছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। শরীরে কী কী সমস্যা হচ্ছে তা জানাচ্ছেন চিকিৎসক এবং ঘনিষ্ঠদের কাছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একটানা অনেক ক্ষণ বাইপ্যাপ সাপোর্ট রাখতে হচ্ছে না। মাঝেমাঝেই তা খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেই সময় নিজে থেকেই শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারছেন। রাতে বুদ্ধদেবের সঙ্গে ছিলেন তাঁর দীর্ঘ দিনের সঙ্গী তপনবাবু। তাঁর সঙ্গেও কথা বলছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বুদ্ধদেব সচেতন হওয়ার পরই বাইপ্যাপ খুলে ফেলতে চাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁর চিকিৎসকেরা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাকি চিকিৎসকদের জানান, তিনি সুস্থ আছেন। এখন তাঁর ওই সবের প্রয়োজন নেই। তবে অনেক বলে-কয়ে তাঁকে বাইপ্যাপ সাপোর্ট নিতে রাজি করান চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে পুরোপুরি বিপন্মুক্ত নন তিনি। এখন ৫-৬ ঘণ্টা বাইপ্যাপ চলার পর কিছু ক্ষণ বিশ্রাম দিয়ে আবার চালানো হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখন সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। অ্যান্টিবায়োটিক চলছে। ন্যূনতম অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে। রাইল্স টিউব দিয়ে তরল খাবারই দেওয়া হচ্ছে বুদ্ধদেবকে।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, বুদ্ধদেবের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের বেশি। রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে। অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এ ছাড়া দিনে দু’বার করে ‘চেস্ট ফিজিওথেরাপি’ হচ্ছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। মঙ্গলবার সকালে বেশ কিছু রক্ত পরীক্ষা হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তী চিকিৎসা শুরু হয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে মঙ্গলবার হাসপাতালে যান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনি জানান, তাঁর বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বুদ্ধদেব। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।

শনিবার থেকে হাসপাতালে বুদ্ধদেব

শনিবার থেকে দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বুদ্ধদেবের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। শুক্রবার থেকে তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। শনিবার ক্রমশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু হাসপাতালে যেতে রাজি হননি তিনি। তবে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি দেখে ওই দিন দুপুরেই আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। পরে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ‘ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে’ রাখা হয়েছিল। সোমবার দুপুরে সেখান থেকে তাঁকে বার করে আনা হয়। ধীরে ধীরে তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে।

বুদ্ধদেবকে দেখতে হাসপাতালে মমতা

সোমবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবকে দেখতে আলিপুরের হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে দেখে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি দেখলাম, ওঁর জ্ঞান আছে। হাত নাড়লেন। ভালই আছেন। ভেন্টিলেশন খুলে নেওয়া হয়েছে। বাইপ্যাপ সাপোর্ট চলছে। আমার দেখে মনে হয়েছে, উনি ভালই আছেন। বাকি চিকিৎসকরা জানাবেন।’’ এর পরেই বুদ্ধদেবের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা সরকারি ভাবে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন খুলে নেওয়ার কথা জানান। বলা হয়, আগের থেকে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অনেকটা ভাল আছেন।

বুদ্ধদেব প্রসঙ্গে কুণাল এবং বিতর্ক

বুদ্ধদেব প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য এবং ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। বুদ্ধদেবের অসুস্থতা প্রসঙ্গে কুণালের বক্তব্য ছিল, “দ্রুত আরোগ্য কামনার সঙ্গে যারা আদিখ্যেতা করে তাঁকে মহাপুরুষ সাজাচ্ছেন, তার সঙ্গে একমত নই। কারণ, বুদ্ধদেববাবুর জমানায় সিপিএম বহু খারাপ কাজ করেছে এবং বুদ্ধদেববাবুর ঔদ্ধত্য এবং ভুল সিদ্ধান্তে বহু ক্ষতি হয়েছে।’’ এ নিয়ে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় থেকে বিধায়ক মদন মিত্রের মত আবার সম্পূর্ণ আলাদা। এরই মধ্যে কুণালের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “পিপীলিকা যদি মনে করে পাখি! কোন গুণের জন্য ওঁকে নেতা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “রাজনৈতিক ছোটলোক বলে নতুন শব্দ অভিধানে আনতে হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এমন মুখপাত্রকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া উচিত।’’ কুণালের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘‘বুদ্ধবাবুর দিকে আঙুল তুলে কেউ চোর বলতে পারবেন না। তাঁর আরোগ্য কামনা করলে কারও যদি আদিখ্যেতা মনে হয়, তা হলে সেটা তাঁর রুচির বিষয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Buddhadeb Bhattacharjee Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy