সরকারি জমি দখল নিয়ে সাম্প্রতিক কালে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেআইনি দখলদারদের কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। সজাগ থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্থানীয় প্রশাসনকেও। সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধেই এ বার সরকারি জমি দখলে সরাসরি সাহায্য করার অভিযোগ উঠল শিলিগুড়িতে। অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধানই শংসাপত্র দিয়ে এক ব্যক্তি সরকারি জমি পাইয়ে দিয়েছেন!
পঞ্চায়েত প্রধানের অবশ্য দাবি, জমিটি সরকারি নয়। যাঁকে শংসাপত্র দিয়েছেন, জমিটি তাঁরই। শংসাপত্রেও সে কথাই লেখা হয়েছে। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জমিটি সরকারি জমি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়ার হেটমুড়ি সিঙিঝোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। অভিযোগ, পঞ্চায়েত এলাকার লচকা নদীর চরে প্রায় এক বিঘা সরকারি জমি রয়েছে। অভিযোগ, সেই জমিটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধঘান জগন্নাথ রায় গত ৩১ জানুয়ারি জনৈক সিপেন সিংহের নামে লিখে দিয়েছেন! সিপেনকে একটি শংসাপত্রও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের মুখে জগন্নাথ বলেন, ‘‘আবেদন করা হয়েছিল। আমি শংসাপত্র দিয়েছি। আমি তো আর জমিটি ওই ব্যক্তির নামে লিখে দিইনি। সেটা তাঁর দখলে রয়েছে। সেটাই লিখেছি মাত্র। জমিটি বহু দিন ধরে তাঁদের দখলে। সেখানে একটি বাঁশঝাড় ছিল। সেখানকার বাঁশ তাঁরা বিক্রিও করত। ওই জমি যে তাঁদেরই দখলে, সে কথাই লেখা হয়েছে। কিন্তু জমির মালিকানার কথা লিখিনি। সেটা আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’’
সিপেনও বলেন, ‘‘জমিটি আমার দখলে রয়েছে। বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে জমিটি আমাদের দখলে। তবে ওই জমিটি স্থানীয় কিছু যুবক ক্লাবের নাম করে দখল করতে চেয়েছিল। এর পর প্রধানকে আবেদন করলে উনি শংসাপত্র দেন। তার প্রমাণ আছে আমার কাছে। প্রধান যখন শংসাপত্র দিয়েছেন, তার মানে এটা আমার জমি। এটাই প্রমাণিত হয়।’’
পঞ্চায়েত প্রধানের এ ভাবে শংসাপত্র দেওয়াকে বেআইনি বলে দাবি করেছেন ফাঁসিদেওয়া ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিক শুভ্রজিৎ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছি। নদী তার নিজের গতিপথ পরিবর্তন করায় এটা চর হিসেবে উঠে এসেছে। সম্পূর্ণ সরকারি জমি। প্রধান ওই খাস জমি নিয়ে একটি শংসাপত্র দিয়েছেন। সার্টিফিকেটটি এখনও হাতে পাইনি। যদি উনি তা দিয়ে থাকেন, তা হলে উনি এক্তিয়ার-বহির্ভূত কাজ করেছেন। উনি কেন, বিএলএলআর-ও সরকারি জমি সংক্রান্ত দখলদার সার্টিফিকেট দিতে পারেন না। আমরা পুলিশকেও জানিয়েছি গোটা বিষয়টি নিয়ে।’’
ফাঁসিদেওয়ার বিডিও বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি জমি দখলের অভিযোগ পেয়ে বিএলআরওকে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। যাতে সরকারি জমিটি সরকারের দখলে আসে। তবে প্রধান দখলদারকে সার্টিফিকেট কী ভাবে দিলেন, তা নিয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’