ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় স্পিকারের এক্তিয়ারভূক্ত বিষয়েও এ বার হস্তক্ষেপ করার নজির গড়লেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিষয় বিজেপির বিধায়কদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা। বিধায়কদের সুরক্ষায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বিধানসভায়। বিধায়কদের শপথ অনুষ্ঠানের সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, বিধানসভার ভিতরে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তা নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে বিজেপি কিছু প্রশ্ন তুললেও সম্প্রতি ঘটনা নিয়ে বিধানসভার বক্তব্য জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাতেই নতুন করে রাজভবন ও বিধানসভার সাংবিধানিক এক্তিয়ারের প্রশ্ন চর্চায় ফিরে এসেছে।
বিধানসভা সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর রক্ষীদের প্রবেশ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে সম্প্রতি বিধানসভার সচিবকে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যপাল। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, তার পরই সচিবালয়ের শীর্ষ আধিকারিকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। এবং বিষয়টি স্পিকারের নজরে আনা হয়। স্পিকারের মত জেনেই সচিবালয় থেকে রাজ্যপালের চিঠির জবাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিধানসভা পরিচালনার নির্দিষ্ট বিধি ৩৫২ ও ৩৬০ নম্বর ধারা অনুযায়ী নিজস্ব এক্তিয়ারেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে স্পিকার বিমানবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘রাজ্যপালের চিঠি সম্পর্কে কিছু বলার নেই। একটি নির্দিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে বিধানসভার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ রক্ষায় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখনও পর্যন্ত তা বহাল রয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিধানসভায় একটি বিল পাশ করার প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ধনখড়। বিধানসভার সচিবালয়ের জবাব না পেয়ে নজিরবিহীন ভাবেই রাজ্যপাল সরাসরি বিধানসভা ভবনে গিয়েছিলেন। এ বার নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে বিজেপির তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগে সিলমোহর দিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল। সন্ত্রাসের অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁর কোচবিহার এবং নন্দীগ্রাম সফরে বিজেপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।
এই পরিস্থিতিতে বিধানসভার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চেয়ে রাজ্যপালের চিঠি ঘিরে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিধানসভার মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বা তার ভিতরের প্রশাসনিক বন্দোবস্ত নিয়ে রাজ্যপাল কি এ ভাবে সরাসরি পা রাখতে পারেন? বিধায়ক হিসেবে ৫০ বছর অতিক্রম করে আসা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্পিকার না চাইলে রাজ্য পুলিশও বিধানসভায় ঢুকতে পারে না। এ বিধানসভার সূচনাকাল থেকেই আইনত নির্দিষ্ট। সে ক্ষেত্রে স্পিকারের এই সিদ্ধান্ত প্রশ্নাতীত। রাজ্যপাল চাইলে সচিবালয় তাঁকে আইনটুকু জানিয়ে দিতে পারে।’’
কেন্দ্রীয় বাহিনীর রক্ষীদের প্রবেশের আর একটি দিক নিয়েও বিধানসভার সচিবালয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের মতে, বিধায়কেরা (বিজেপির) যদি ২ থেকে ৪ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে আসতে চান তা হলেও বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার। কারণ সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০০ বা তার বেশি সশস্ত্র অন্য একটি বাহিনী বিধানসভা চত্বরে থাকবে। বিধানসভার নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি এইরকম একটি বড় বাহিনীকে রাখতে গেলে উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy