Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Himalayan black bear

ভালুকের সংখ্যা জানতে মধুর ফাঁদ, উত্তরবঙ্গের পাহাড়-জঙ্গলে সমীক্ষা বন দফতরের

বছরখানেক ধরে পাহাড় সংলগ্ন গ্রাম ও সমতলে ভালুকের আনাগোনায় মাথাব্যথা বাড়ছিল বন দফতরের। এত দিন কোন জঙ্গলে কত সংখ্যক ভালুক রয়েছে, তা নিয়ে বন দফতরের কাছে কোনও তথ্য ছিল না।

উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং জঙ্গল এলাকায় মূলত ‘হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার’ প্রজাতির ভালুকের দেখা মেলে। যা ‘কালো ভালুক’ নামেও পরিচিত।

উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং জঙ্গল এলাকায় মূলত ‘হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার’ প্রজাতির ভালুকের দেখা মেলে। যা ‘কালো ভালুক’ নামেও পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:১০
Share: Save:

উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে বা জঙ্গলে কত ভালুক রয়েছে? তা সমীক্ষা করে জানতে মধুর ফাঁদ পেতেছিল বন দফতর। গত তিন সপ্তাহ ধরে তাতে শতাধিক ভালুকের নমুনা ধরা পড়েছে। সমীক্ষায় পাওয়া বিভিন্ন তথ্য ও নমুনা যাচাই করে ভালুকের উপস্থিতির সংখ্যা আন্দাজ করছেন উত্তরবঙ্গের বন ও বন্যপ্রাণী বিভাগের কর্তারা। তবে ভালুকের প্রকৃত সংখ্যা কত, তা জানতে সংগ্রহ করা নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদে পাঠিয়েছে বন দফতর।

বন দফতর সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং জঙ্গল এলাকায় মূলত ‘হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার’ প্রজাতির ভালুকের দেখা মেলে। যা ‘কালো ভালুক’ নামেও পরিচিত। বছরখানেক ধরে পাহাড় সংলগ্ন গ্রাম ও সমতলে ভালুকের আনাগোনায় মাথাব্যথা বাড়ছিল বন দফতরের। এত দিন কোন জঙ্গলে কত সংখ্যক ভালুক রয়েছে, তা নিয়ে বন দফতরের কাছে কোনও তথ্য ছিল না। এ ছাড়া, আচকা ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্তে ভালুকের আগমনের কারণ বুঝতেও সমস্যায় পড়ছিলেন বন দফতরের কর্তারা। সে জন্যই জঙ্গলগুলির গভীরে ক্যামেরা বসিয়ে সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সমীক্ষার জন্য গরুমারা জাতীয় উদ্যানে ৫২টি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ বন্য প্রাণী বিভাগের প্রধান বনপাল রাজেন্দ্র জাখর বলেন, ‘‘গত বছরের নভেম্বরে প্রথম সমতলে ভালুকের উপস্থিতি নজরে আসে। সে সময় ভালুকের হামলায় এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। আবার জনরোষে প্রাণ হারায় আরও একটি ভালুক। পাশাপাশি, জঙ্গল সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে তেরোটি ভালুককে উদ্ধার করা হয়েছিল। চলতি বছরও নভেম্বরে বক্সা, জলদাপাড়া, গরুমারার জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ভালুকের আনাগোনা চোখে পড়েছে বন দফতরের। ৮টি ভালুকও উদ্ধার হয়েছে।’’

বন দফতর সূত্রে খবর, মূলত সমতল থেকে ১০ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ি জঙ্গল এলাকাই ভালুকের পছন্দের বাসস্থান। বক্সার পাহাড়ি জঙ্গল এলাকা, গরুমারার নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান-সহ দার্জিলিং পাহাড়ের সিঞ্চুলার জঙ্গলে বেশ ভাল সংখ্যক ভালুক রয়েছে বলে অনুমান বন দফতরের। নিজস্ব বাসস্থান ছেড়ে ইন্ডিয়ান ব্ল্যাক বিয়ার প্রজাতির ভালুক বার বার কেন সমতলে নেমে আসছে, তার কারণ খুঁজতে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে বন দফতর। পাশাপাশি, পাহাড়ি এই জঙ্গলগুলিতে কত সংখ্যক ভালুক রয়েছে, তা জানতে সমীক্ষা চালান তারা। ৩ ডিসেম্বর থেকে সেই সমীক্ষা শুরু হয়েছিল। এর পর ২১ দিন ধরে তা চলে। মূলত পরোক্ষ পদ্ধতিতে সমীক্ষা চালায় বন দফতর।

ভালুকের আসল সংখ্যা জানতে ‘হেয়ার কোরাল’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। যে এলাকাগুলিতে ভালুকের যাতায়াত রয়েছে, সে এলাকায় মধু দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়েছিল। সেই ফাঁদের তিন দিকে লাগানো ছিল সরু তার। মধুর লোভে ভালুক ফাঁদের পা দিলে তার শরীরের লোম বা চুল যাতে তাতে আটকে যায়, সে জন্যই এ ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে বন দফতর। রাজেন্দ্র বলেন, ‘‘বক্সা, জলদাপাড়া, গরুমারা, নেওড়া, সিঞ্চুলার জঙ্গল এবং সংলগ্ন এলাকা ধরে দু’শতাধিক পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে ভালুকের পছন্দের খাবার রাখা ছিল। গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত ৫৭টি পয়েন্ট তৈরি করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর থেকে প্রতিটি পয়েন্ট থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাতে ১০০-র বেশি ভালুকের চুলের নমুনা পাওয়া গিয়েছে।’’

রাজেন্দ্র জানিয়েছেন, সংগ্রহ করা নমুনা একটি না একাধিক ভালুকের, তা ফরেন্সিক পরীক্ষা করে দেখা হবে। সে জন্য সংগ্রহ করা ভালুকের চুলের নমুনা হায়দরাবাদের একটি ল্যাবরেটরিতে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছেন তাঁরা। পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে ভালুকের সংখ্যা, তার লিঙ্গ পরিচয় এবং বয়স— সবই জানা যাবে। সেই রিপোর্ট থেকে কোন জঙ্গলে কত সংখ্যায় ভালুক রয়েছে, তারও হিসাব পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Himalayan black bear North Bengal wildlife
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy