শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। প্রতীকী ছবি।
ফের জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ-সহ অসুখ। তার জেরে মৃত্যু আরও পাঁচ শিশুর। শুধু বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই। এদের মধ্যে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল চার জন। এক জন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
প্রতিদিনই শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে বৃহস্পতিবার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর অভিযোগ, এই ‘মরসুমি ভাইরাসের’ সংক্রমণ নিয়ে এক শ্রেণি অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, যে কোনও শিশুর মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে একেবারে ছোট ও রুগ্ণ বাচ্চাদের মধ্যে কেউ কেউ ভাইরাসের সংক্রমণে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে ও তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এদের মধ্যে জন্মগত সমস্যা থাকা শিশুদের ঝুঁকি বেশি। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, শিশুদের চিকিৎসার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রয়েছে। সাবধানতা বজায় রাখলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নতুন করে যে পাঁচ শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে, তাদের মধ্যে বি সি রায় হাসপাতালে মারা গিয়েছে বারাসতের বাসিন্দা ২ বছর ৬ মাসের, খানাকুলের তিন বছরের, ভাঙড়ের তিন মাসের এবং নারায়ণপুরের ৩ বছর ২ মাসের শিশু। আর কলকাতা মেডিক্যালে মারা গিয়েছে চুঁচুড়ার ৩ মাসের এক শিশু। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ১২১টি হাসপাতালে ৬৫৪টি পিকু (পেডিয়াট্রিক ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট) ১২০টি নিকু (নিওনেটাল ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট) এবং ২৪৭৬টি এসএনসিইউ (সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট)-সহ মোট পাঁচ হাজার শয্যা প্রস্তুত রয়েছে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ফলে জ্বর, সর্দি, কাশি শুধু এ রাজ্যে নয়, দেশের অন্যত্রও হচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফেও দাবি করা হয়েছে, সরকারি ভাবে রাজ্যে ১২জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে অ্যাডিনোভাইরাসের কারণে। বাকিদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে। যদিও বুধবার রাজ্যের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছিল, রাজ্যে শেষ এক মাসে ৫২১৩ জন শিশু অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনে আক্রান্ত। তার মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে অ্যাডিনোভাইরাসের কারণে। যাদের মধ্যে আট জনের মারাত্মক কোমর্বিডিটি ছিল। এ দিন মমতা বলেন, “ভয় পাওয়ার কারণ নেই। পাঁচ হাজার শয্যা প্রস্তুত। ছ’শো চিকিৎসক প্রস্তুত রয়েছেন।”
করোনার পরে যা-ই হচ্ছে, তাতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, যে হেতু সদ্যোজাত থেকে দু’বছরের কম বয়সিদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সব থেকে বেশি, তাই তিনি প্রাথমিক স্কুলগুলি ছুটি দেওয়ার ভাবনাচিন্তাও করেছিলেন। পরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তা করেননি। বরং তাঁর পরামর্শ, সচেতনতার উপরে জোর দিতে হবে। শিশুদের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। সমস্ত স্থানীয় হাসপাতালে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই অযথা রোগীকে রেফার না করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, দরকারে টেলি-মেডিসিনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে। কোভিডের সময়ে যে অক্সিজেন-পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, তা-ও উল্লেখ করেন।
করোনার সঙ্গে এই জ্বর-শ্বাসকষ্টের পরিস্থিতির তুলনা করা ঠিক নয় বলে দাবি করে মমতা বলেন, “আতঙ্ক ছড়ানোর কারণে বেসরকারি হাসপাতাগুলি ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবন প্রকৃত তথ্য জানাবে। হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে যাওয়া ঠিক নয়। সংবাদমাধ্যমের জন্য হাসপাতালের কোনও জায়গা নির্দিষ্ট থাকবে। তাঁরা যেন হাসপাতালের ভিতরে না ঢোকেন।”
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যে সমস্ত শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, তাদের মধ্যে একটা অংশের অপুষ্টি রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, কম বয়সে অনেকের বিয়ে হয়ে যায়। কন্যাশ্রী করে অনেকটা আটকানো গিয়েছে। তবু কিছু-কিছু হয়ে যায়। সেটাও দেখতে হবে। এর ফলে পুষ্টিতে ফাঁক থেকে যায়। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী বলেন, “স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। যেখানে দরকার, সেখানে চিকিৎসক-নার্স পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা-প্রোটোকল প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy