Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
বুলবুলের ঝড়ে মৃত্যু ৯ জনের

ট্রলারে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল ওঁদের: মুখ্যমন্ত্রী

ঝড়ের সময়ে ওই মৎস্যজীবীরা ছিলেন একটি ট্রলারে। নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুযোগ পাননি। অভিযোগ, ট্রলার মালিক তাঁদের জোর করে ট্রলারেই থেকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বিপর্যয়ের পরে তখন পাড়ে টেনে আনা হচ্ছে এফবি চন্দ্রাণীকে। ফাইল চিত্র

বিপর্যয়ের পরে তখন পাড়ে টেনে আনা হচ্ছে এফবি চন্দ্রাণীকে। ফাইল চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল 
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৬
Share: Save:

বুলবুল ঝড়ের ক্ষত এখনও ছড়িয়ে রয়েছে সুন্দরবনের আনাচকানাচে। ক্ষয়ক্ষতির স্মৃতি মুছে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সুন্দরবনের গ্রামগুলি। কিন্তু কাকদ্বীপ-নামখানার ন’টি মৎস্যজীবী পরিবার চেষ্টা করেও সেই স্মৃতি মুছতে পারছে না। কারণ বুলবুল প্রাণ কেড়েছে এই সব পরিবারের উপার্জনকারী সদস্যের।

ঝড়ের সময়ে ওই মৎস্যজীবীরা ছিলেন একটি ট্রলারে। নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুযোগ পাননি। অভিযোগ, ট্রলার মালিক তাঁদের জোর করে ট্রলারেই থেকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে সে সময়ে হইচই হয়েছিল। যা এখন অনেকটাই স্তিমিত। কিন্তু রাজ্য সরকার যে বিষয়টিকে সহজ ভাবে নিচ্ছে না, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভায় বুলবুল নিয়ে বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘মালিক ওঁদের ট্রলার পাহারা দেওয়ার জন্য ওখানে থাকতে বাধ্য করেছিল। পরে মামলা হয়েছে। নিশ্চয়ই মামলা হবে। কেন হবে না? এতগুলো মানুষের জীবন নিয়ে খেলা!’’

ঘটনার পরে এক মৃতের পরিবার ‘এফবি চন্দ্রাণী’ নামে ওই ট্রলারের মালিক দুলাল দাসের বিরুদ্ধে নামখানা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তারপর থেকে বেপাত্তা দুলাল। তাঁর খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সোমবার তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গিয়েছে।

বুলবুল ঝড়ের অন্তত তিন দিন আগে থেকে সুন্দরবন উপকূল এলাকায় সতর্কতা জারি করেছিল প্রশাসন। বেশিরভাগ এলাকায় নিরাপদ জায়গায় বা কোনও আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে বলা হয়েছিল। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মোট ১ লক্ষ ৭৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছিল। তার ফলে যথেচ্ছ প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর হিসেব অনুযায়ী, বুলবুলে মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ট্রলারডুবির ফলে আর ৯ জনের মৃত্যুতে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘বাকিদের মতো ওই ন’জনকেও তো নিরাপদ জায়গায় সরানো যেত। পুলিশ তাঁদের বারবার বললেও তাঁরা নৌকো ফেরাননি। আমরা বারবার একটা জিনিস দেখছি, আসলে শ্রমিকেরা চলে গেলে সমস্যা হবে বলে ওই ন’জনকে নৌকোয় রেখে দিয়েছিল পাহারা দিতে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ের সতর্কতা জারি হওয়ার পরে মাছ ধরতে সাগরে যাওয়া সব ট্রলারই ফিরে আসে বন্দরে। আটটি ট্রলার নামখানা এবং মৌসুনি দ্বীপের মাঝামাঝি পাতিবুনিয়া খালে নোঙর করে। ট্রলার মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক বিজন পাত্র বলেন, ‘‘এর আগেও খালের ওই জায়গায় ঝড়ের মধ্যে অনেক ট্রলার নোঙর করেছিল। কিন্তু ট্রলার উল্টে যাবে তা কেউ ভাবতেই পারেননি।’’

আরও কয়েকটি ট্রলার থাকলেও সেগুলিতে কোনও শ্রমিক ছিলেন না। এফবি চন্দ্রাণীর মৎস্যজীবীরা ট্রলারের নীচে আশ্রয় নেন। সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। ট্রলার উল্টে যাওয়ায় তাঁরা আর কেউ বেরোতে পারেননি। ঝড় থামার দিন কয়েকের মধ্যে একে একে ন’জনের দেহ মেলে। তারপরে ক্ষোভ ছড়িয়েছিল নামখানায়। ক্ষতিপূরণের ঘোষণা অবশ্য হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ট্রলার মালিকের এমন খামখেয়ালিপনার বলি কেন হতে হবে দরিদ্র শ্রমিকদের?

এর আগেও মৃত শ্রমিকদের পরিবার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, বছর ঘুরলে আবার যে কে সেই। আবার ট্রলারডুবি ঘটে, ফের প্রাণ যায়। এ বার মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় বিবৃতি দেওয়ায় আশা জেগেছে শ্রমিকদের মধ্যে। হয় তো কোনও পদক্ষেপ হবে।

কাকদ্বীপ দাসেরচকের বাসিন্দা ভগবান দাস বলেন, ‘‘এর আগেও ওমন ঘটেছে। ঝড়ের সর্তকতা শুনে আমরা সাগর থেকে ফিরতে চাইলে, মালিক ফরমান জারি করেছিল মাছ না মেলা পর্যন্ত আমরা যেন বন্দরে না ফিরি। সে বার ট্রলার উল্টে গিয়েছিল। কোনও রকমের প্রাণ নিয়ে ফিরেছিলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fishermen Cyclone Bulbul Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy