হাসপাতালের বেডে বসে পরীক্ষা দেয় অর্জুন মাঝি। —নিজস্ব চিত্র।
সকালে পরীক্ষা। পড়াশোনার পর রাত করেই ঘুমিয়েছিল অর্জুন মাঝি। আচমকা প্রবল যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠল বছর ১৬-র ছেলেটি। কিন্তু পাত্তা না দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে সে। সকালে উঠে অসুস্থ বোধ করে ওই পরীক্ষার্থী। দেখা যায়, ছাত্রের বাঁ পায়ে সাপের কামড়ের দাগ। সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন বাড়ির লোকজন। সেই হাসপাতালের বেডে বসেই ইতিহাস পরীক্ষা দিয়েছে অর্জুন। ছাত্রের এমন মানসিক শক্তির জন্য তাকে সাধুবাদ জানালেন চিকিৎসকেরা। পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ঘটনা।
ভাতার মাধব পাবলিক হাই স্কুলের ছাত্র অর্জুনের মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে বড়বেলুন উচ্চ বিদ্যালয়ে। সোমবার পরীক্ষা শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা আগে ভাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ওই ছাত্রকে। পরীক্ষার্থীকে সাপে কামড়ানোর খবর পেয়ে ভাতার মাধব পাবলিক হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালেই তার পরীক্ষা নেওয়ার বন্দোবস্ত করেন। বড়বেলুন উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের উপস্থিতিতে অর্জুনও পরীক্ষা দেয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই ছাত্রকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
ভাতারের বেলেণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা উৎপল মাঝি ও মণি দেবীর দুই ছেলের মধ্যে বড় অর্জুন। ছোট ছেলে সৌভিক সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। পেশায় কৃষক উৎপল জানান, সকালে তিনি মাঠে কাজে চলে যান। অর্জুন সাইকেল চালিয়ে পরীক্ষা দিতে যায়। কিন্তু সোমবার সকালে মাঠে কাজ করতে শোনেন ছেলেকে সাপে কামড়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার মাঝরাতে ছেলের পায়ে কিছু কামড়ে দেয়। সকালে স্নান করতে যাওয়ার সময় অসুস্থতা বোধ করতে থাকে ও। বাড়িতে গিয়ে দেখি ওর পায়ে সাপে কামড়ানোর মতো দাগ রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন প্রায় ৯টা বাজে। কিছু ক্ষণ পর থেকেই পরীক্ষা শুরুর কথা। তখন স্কুলে ফোন করে খবর দিই। এক শিক্ষক হাসপাতালে চলে আসেন। তার পর ভাতার মাধব পাবলিক হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ অর্জুনের পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শেষে হাসপাতালে বসেই ও পরীক্ষা দিয়েছে।’’ উৎপলের সংযোজন, ‘‘যে হেতু সাপে কাটার মতো বিষয়, তাই আমরা সবাই খুব ভয় পেয়েছি। কিন্তু অর্জুনই পরীক্ষায় বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করে। ছেলেকে সাহস হারাতে দেখিনি।’’ একই কথা বলছেন ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক সচ্চিদানন্দ হাঁসদা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ছাত্র অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও পরীক্ষায় বসার জন্য জেদ করেছে। এবং পরীক্ষা দিয়েওছে। এটা নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্ত ও প্রশংসার যোগ্য।’’
উল্লেখ্য, ইতিহাস পরীক্ষার দিন বিভিন্ন জেলায় দুর্ঘটনার খবর মিলেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় হুগলির শেওড়াফুলিতে এক পরীক্ষার্থী সংজ্ঞাহীন হয়ে যায়। তাকে শেওড়াফুলি ফাঁড়ির পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের ঘটকপুকুর সংলগ্ন গোবিন্দপুর এলাকায় পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভাঙড় গার্লস স্কুলের এক ছাত্রী পথদুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে বলে খবর। তাকে নলমুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামের জামবনিতে পরীক্ষা চলাকালীন এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে কেশপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দেয় ওই ছাত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy