সল্টলেকে ইডির দফতর থেকে বেরোনোর পরে রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। বিশ্বনাথ বণিক ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কয়লা পাচার মামলায় দু’টি বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন, একটি সংস্থার আর্থিক লেনদেনের খতিয়ান এবং এক হিসাবরক্ষকের বয়ানের ভিত্তিতে রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন ইডির তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ‘ধোঁয়াশা’ সৃষ্টি করেছেন রুজিরা। ইডি সূত্রের খবর, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরাকে ফের তলব করা হবে। তাঁকে আরও কিছু নথি জমা দিতে বলা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। গত বছরে কয়লা পাচার মামলায় রুজিরা ও তাঁর বোন মেনকা গম্ভীরকে একপ্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
রুজিরাকে তলব প্রসঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হলে হাতজোড় করে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কিছু বলব না। ও স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে। ভাল, শান্ত মেয়ে। ও নিজে বলবে নিজের কথা। (সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে) তবে নানা রকম মিথ্যা কথা সিবিআই খাওয়াচ্ছে, আর আপনারা বলে যাচ্ছেন। সেটা সম্পূর্ণ ভুল। এর পরে আমরাও ডিফেমেশনে যেতে পারি। আপনারা প্রমাণ (এভিডেন্স) পাচ্ছেন কোথা থেকে? প্রমাণ-বিচার ছাড়া মিডিয়া ট্রায়াল চলছে! আপনারা কি মনে করেন, সিবিআই বড় বাঘ? ইডিকে আমরা ভয় পাই? যা করতে চায় তারা তা করুক। তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা এ দেশের সেবক। তারা বিজেপির সেবক নয়।’’
গত সোমবার দুই সন্তানকে নিয়ে দুবাইগামী উড়ানে বিদেশ যাত্রার পরিকল্পনা করেছিলেন রুজিরা। ইডির লুক আউট নোটিস থাকায় কলকাতা বিমানবন্দরে অভিবাসন দফতর রুজিরার পথ আটকায়। বিমানবন্দরেই নোটিস দিয়ে বৃহস্পতিবার ইডির অফিসে তাঁকে তলব করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, কয়লা পাচারের লভ্যাংশের একটি মোটা অংশ হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। তা কয়েক জন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। ওই টাকায় সোনার গয়না, সোনার বিস্কুট ও বল কিনে এ দেশে নিয়ে আসা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাড়ে ১২টায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতরে পৌঁছন রুজিরা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই আইনজীবী। মামলার তদন্তকারী অফিসার পঙ্কজ কুমারের নেতৃত্বে রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তিনি আইনজীবীদের পাশেই রাখতে চেয়ে আবেদন করলে তা খারিজ করে দেন ইডির পদস্থ কর্তারা। আলাদা একটি ঘরে তাঁর দুই আইনজীবীর বসার ব্যবস্থা করা হয়। রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় দু’জন মহিলা অফিসার ছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। এ দিন রুজিরাকে নিয়ে ঢোকার সময়ে কালো গাড়ির কাচ তোলা থাকলেও বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বেরোনোর সময়ে কাচ নামানো ছিল। জানলার পাশে হাত জোড় করে বসে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। তবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে রুজিরার কোনও কথা হয়নি।
২০২২ সালে আলিপুরের বাসিন্দা এক হিসাবরক্ষকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বহু নথি উদ্ধার করে সিবিআই ও ইডি। পরে ওই হিসাবরক্ষককে বেশ কয়েক বার দিল্লিতে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ২০১৭ সালের পর থেকে বছর তিনেক লাগাতার ব্যাঙ্কক ও সিঙ্গাপুরে যাতায়াত করেছেন ওই হিসাবরক্ষক। ইডি সূত্রের অভিযোগ, কয়লা পাচারের কালো টাকায় ওই হিসাবরক্ষক মারফত বিদেশে নানা সম্পত্তি কেনা হয়েছে। ওই হিসাবরক্ষক কয়লা পাচারের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত শাসক দলের পলাতক নেতা বিনয় মিশ্রের ঘনিষ্ঠ বলেও ইডি-র দাবি।
তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, রুজিরার ভারত ও তাইল্যান্ড, দুই দেশেরই নাগরিকত্ব রয়েছে। এ আগেও রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁর হিসাবরক্ষক সমস্ত আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি জানেন বলে রুজিরা জানিয়েছিলেন বলে ইডি-র দাবি। অভিযোগ, তদন্তকারীদের নানা প্রশ্ন তিনি সে বার এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের কাছে তাঁর দাবি ছিল, তিনি হিসাবরক্ষকের উপরে নির্ভরশীল। এর পরই ওই হিসাবরক্ষকের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy