Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Waterlogging in West Bengal

বৃষ্টির জেরে ধস কালিম্পঙের বিভিন্ন জায়গায়, গাড়ির উপর পাথরের চাঁই! ডিভিসির ছাড়া জলে আশঙ্কায় হাওড়া-হুগলি

রবিবার রাতভর দার্জিলিং, কালিম্পং-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। সোমবারও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। বৃষ্টির ফলে একাধিক এলাকায় বিপর্যস্ত জনজীবন।

DVC release water and rain affected north bengal and south Bengal

বিপর্যস্ত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৪ ১৫:০৬
Share: Save:

দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কমলেও ডিভিসির ছাড়া জল নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। হাওড়া, হুগলির মতো জেলাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা না থাকলেও উত্তরবঙ্গে আগামী ৪৮ ঘণ্টা অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। পাহাড়ে রাতভর বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি চলেছে। ফলে একাধিক এলাকায় নতুন করে ধস নেমেছে। সঙ্গে রয়েছে হড়পা বানের সতর্কবার্তাও।

রবিবার রাতভর দার্জিলিং, কালিম্পং-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। সোমবারও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। বৃষ্টির ফলে একাধিক এলাকায় বিপর্যস্ত জনজীবন। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের মেল্লির সামনে ধস নামায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ল একটি যাত্রিবাহী গাড়ি। সোমবার সকালে গাড়িটি যাত্রী নিয়ে মেল্লি থেকে শিলিগুড়ির দিকে যাচ্ছিল। যাত্রাপথে ধসের কবলে পড়ে গাড়িটি। বড় পাথরে চাঁই গাড়িটির উপর পড়ে। যার জেরে দুমড়েমুচড়ে যায় গাড়িটি। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই।

সিকিমে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে হড়পা বানের আশঙ্কাও রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন থেকে জেলাবাসীকে হড়পা বানের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সতর্ক করেছে। জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক দিন অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই জেলার সমস্ত ব্লক প্রশাসনকে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, কর্মচারীদের সমস্ত ধরনের ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। সিকিম-সহ কালিম্পঙে বৃষ্টিপাতের জেরে আবার জল বাড়তে শুরু করেছে তিস্তায়। শুধু তিস্তা নয়, পাহাড়ি নদীগুলিও ফুলেফেঁপে উঠছে। ইতিমধ্যেই তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা সদর দফতরে বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী ইতিমধ্যেই প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে ২৪ ঘণ্টা বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা থাকছে।

সোমবারও ডিভিসি জল ছেড়েছে। তবে ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ায় তুলনামূলক কম দল ছেড়েছে ডিভিসি। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা জলের চাপ কমাতেই মূলত পাঞ্চেত জলাধার থেকে বাড়তি জল ছাড়া হচ্ছিল গত দু’দিন ধরে। সোমবার সেই জল ছাড়ার পরিমাণ অনেকটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে বাড়তি জল ছাড়ার পরিমাণ আরও কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ডিভিসি থেকে জল ছাড়ায় হাওড়া এবং হুগলিতে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন। মুণ্ডেশ্বরী এবং কানা দামোদর নদীর জলস্তর বেড়েছে। ফলে আমতার দুই ব্লক এবং জগৎবল্লভপুর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। ভিডিসির জল ছাড়ার ফলে আমতার জয়পুরে বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে মুণ্ডেশ্বরী নদী। জলের তোড়ে রবিবারই ভেঙেছে চারটে বাঁশের সেতু। ফলে সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। হাওড়া জেলার জেলাশাসক রবিবার রাতেই প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সুকান্ত পাত্র। সাধারণ মানুষ যাতে সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রে খবর।

হুগলির খানাকুলের বাসিন্দারা রবিবার সকাল থেকেই সেই আশঙ্কায় ভুগছেন। মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে ডিভিসির ছাড়া জল আরামবাগ পুড়শুড়া হয়ে খানাকুলের পানসিউলিতে রূপনারায়ণে মিশেছে। রূপনারায়ণের জোয়ার এবং ডিভিসির জলের চাপে ক্রমশই খানাকুলে নদী এবং খালগুলো ফুলেফেঁপে উঠছে। খানাকুলের পাতুল, সুলুট, পোল, রায়বার, নাঙ্গুল পাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। জল ঢুকেছে গ্রামে গ্রামে। রাস্তার উপরে জলের স্রোত বইছে। ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। যাতায়াতের রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। বিকালের পর অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা। স্কুলে ছুটি দেওয়া হয়েছে।

অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই পৃথক ঘটনায় শিশু-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। জয়নগর এবং জীবনতলা এলাকায় মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দিন দুয়েক ভারী বৃষ্টির ফলে দেওয়ালে ফাটল দেখা গিয়েছিল। রবিবার রাতে সেই দেওয়ালই ভেঙে পড়ে।

বাঁশের মই বেয়ে নবনির্মিত সেতু দিয়ে চলেছে ওঠানামা চলছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসার বিদবিহারের কৃষ্ণপুরে। দড়ি দিয়ে টেনে তোলা এবং নামানো হচ্ছে সাইকেল-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। তার পরেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করছেন স্থানীয়েরা। কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে কাঁকসার বিদবিহারের অজয় নদের উপর অস্থায়ী সেতু গলে গিয়েছে। বন্ধ নৌকা পরিষেবাও। বন্ধ হয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের সঙ্গে বীরভূমের যোগাযোগও। ফলে দুই জেলার মানুষের জীবন ও জীবিকাতেও পড়েছে টান। সেই যাতায়াত সমস্যা মেটাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ওই বাঁশের মই।

উল্লেখ্য, কাঁকসার বিদবিহারের কৃষ্ণপুর হয়ে বীরভূমের ইলামবাজারের জয়দেব পর্যন্ত অজয় নদের উপর তৈরি হয়েছে স্থায়ী সেতু। তবে সেতুর সংযোগকারী রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় সেই সেতুর ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি। তবে সমস্যা মেটাতে ওই সেতুতে ওঠানামা করার জন্য অস্থায়ী বাঁশের সেতু ব্যবহার করছেন বাসিন্দারা। কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বর্ষায় বৃষ্টি হলেই অস্থায়ী সেতু ভেঙে যায়। মানুষকে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। অজয়ের স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে, সংযোগকারী রাস্তার কাজও কিছু দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তার পরেই চিরতরে মুক্তি পাওয়া যাবে যাতায়াত সমস্যা থেকে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

waterlogging dvc rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy