Advertisement
E-Paper

যত দোষ সন্দীপ ঘোষ! নামের সঙ্গে মিলে গিয়েছে পেশাও, আক্রমণের মুখে হাতে তুলতে হল মেরুদণ্ড

এই সন্দীপ তাইকোন্ড খেলেন। দু’বারে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন। বাড়িতে যৌথ পরিবার। তিনি বাবা-মায়ের এক সন্তান। আপাতত এই সন্দীপের মুখে শেক্সপিয়রের কথা— নামে কী যায়-আসে!

Graphical Representation

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৩
Share
Save

নাম সন্দীপ। পদবি ঘোষ। পেশায় চিকিৎসক।

সব মিলে গিয়েছে। নাম, পদবি, পেশা—সব। আর তাতেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতি বিভাগের জুনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার সন্দীপ ঘোষকে। তবে কয়েক দিনের প্রচেষ্টায় সেই বিড়ম্বনা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছেন মুর্শিদাবাদের সন্দীপ। আপাতত তাঁর মুখে শেক্সপিয়রের কথা, ‘‘নামে কী আসে-যায়!’’

২০১৭ সালে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন কান্দি থেকে কিছুটা দূরের গ্রাম সাবলপুরের ছেলে সন্দীপ। ঘটনাচক্রে, এই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজেই একসময়ে অস্থিরোগ বিভাগের প্রধান ছিলেন আপাতত সিবিআই হেফাজতে থাকা সন্দীপ ঘোষ। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ থেকেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে এসেছিলেন তিনি।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সন্দীপ ঘোষ।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সন্দীপ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

মুর্শিদাবাদের সন্দীপ জানিয়েছেন তাঁর বিড়ম্বনার কথা। কেমন ছিল গোড়ার দিকের ঘটনাগুলি? সন্দীপের কথায়, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে অনেকের মতো আমিও ফেসবুকের ডিপি থেকে নিজের ছবি সরিয়ে ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ লেখা পোস্টার দিয়েছিলাম। তার নীচে এসে অনেকেই আমায় ওই সন্দীপ ঘোষ ভেবে নানাবিধ কটু কথা বলে গিয়েছেন। মেসেজেও নানান মন্তব্য করেছেন।’’ শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলের নামে কিছুটা বদল আনেন মুর্শিদাবাদের সন্দীপ। ডাক্তার সন্দীপ ঘোষের পাশে বন্ধনী দিয়ে ইংরেজিতে লেখেন ‘নট দ্য প্রিন্সিপাল’। আপাতত সেটাই সন্দীপের ফেসবুকের নাম।

কিন্তু তাতেও ব্যাপারটা থামছিল না। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, পড়ুয়ারা বহরমপুর শহরে মিছিল করেছিলেন। কলকাতার মতো সেই মিছিলেও ছিল প্রতীকী মেরুদণ্ড। মুর্শিদাবাদের সন্দীপ গলায় স্টেথোস্কোপের পাশাপাশি হাতে নিয়েছিলেন মেরুদণ্ডও। তাতে আবার লেখা ‘নট ফর সেল’। আপাতত সেটিই এখন তাঁর ফেসবুকের ডিপি। সন্দীপ জানিয়েছেন, গোড়ায় অনেকেই নাম, পদবি, পেশা মিলে যাওয়ায় কটু কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন সেটা কমছে।

সমনামী হয়ে বিড়ম্বনার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। সাম্প্রতিক সময়ে এমন একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। বীরভূমের তৃণমূলের নেতা অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতারের পরে হুগলির শেওড়াফুলির বাসিন্দা, পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অনুব্রত মণ্ডল ফেসবুকে পোস্ট করে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি নাম বদল করবেন। বন্ধুবান্ধব থেকে আত্মীয়স্বজনদের কটাক্ষ শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়েই তিনি সেই ঘোষণা করেছিলেন। যদিও আইনি জটিলতার কারণে তাঁর সেই নাম বদল এখনও করা হয়ে ওঠেনি। কয়েক মাস আগে যখন সন্দেশখালি তপ্ত হয়েছিল, সেই সময়ে দেখা গিয়েছিল অজিত মাইতি নামের স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাকে সাধারণ গ্রামবাসীরা তাড়া করেছেন। প্রাণভয়ে ছুটতে ছুটতে অজিত আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি বাড়ির শৌচালয়ে। সেই দৃশ্য সংবাদমাধ্যমে দেখানোর পরেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল পিংলার তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতিকে। সেই সময়ে বিধায়ক অজিতের হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে। বেডে শুয়ে থাকা অজিতকে অনেকেই ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘দাদা, আপানাকে তাড়া করেছে?’’ অভিমানী অজিত ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, ‘‘কী পাপ যে করেছিলাম কে জানে!’’

আবার নাম-মিলান্তিতে আপ্লুত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। নয়ের দশকের শেষে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অধুনাপ্রয়াত জ্যোতি বসু একটি দলীয় সমাবাশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন হুগলির বৈদ্যবাটিতে। যে মাঠে সভা ছিল তার পাশেই একটি বাড়িতে জ্যোতিবাবুর চা-পানের বন্দোবস্ত করেছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। সেই বাড়ির গৃহিনী ছিলেন পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। নাম কমল বসু। কয়েক বছর হল তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর বড় ছেলের নাম ছিল চন্দন বসু। শুনে জ্যোতিবাবু নাকি রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘‘এ তো মনে হচ্ছে নিজের বাড়িতে বসেই চা খাচ্ছি!’’

তবে বিড়ম্বনার জন্য কি নাম নিয়ে আক্ষেপ তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদের সন্দীপের? তাঁর জবাব, ‘‘উনি (আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ) একটা কলঙ্ক। তার জন্য আমার নিজের নাম নিয়ে মোটেই আমার আক্ষেপ নেই। আমার নাম আমার বাবা-মা রেখেছিলেন। আমি কাজ দিয়ে তা প্রমাণ করব।’’ এই সন্দীপ তাইকোন্ড খেলেন। দু’বারের রাজ্য চ্যাম্পিয়ন। যৌথ পরিবার। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এ ছাড়া বাড়িতে রয়েছেন সন্দীপের ঠাকুমা, কাকা-কাকিমা এবং দুই খুড়তুতো ভাই-বোন। বাবা গ্রামে একটি ছোট ওষুধের দোকান চালান। সন্দীপ জানিয়েছেন, অনেকে মজা করে তাঁর বাবা-মাকেও বলেছেন, ‘কী নাম রেখেছ ছেলের!’’ তবে সন্দীপের আক্ষেপ নেই। তিনি বলছেন, ‘‘মেরুদণ্ড কখনও কারও কাছে বন্ধক দেব না।’’ আর আপাতত তাঁর মুখে শেক্সপিয়রের কথা— নামে কী আসে-যায়!

Sandip Ghosh Murshidabad Medical College R G Kar Medical College doctor

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।