দিল্লিতে আটকে পড়া শ্রমিক ইমামুল শেখের মা মাহেলা বিবি। নওদার ত্রিমোহিনীতে। —নিজস্ব চিত্র
মহল্লা জুড়ে ১৪৪ ধারা। আড়াই দিন ধরে দোকানপাটে তালা, কালিঝুলি মেখে পড়ে রয়েছে চায়ের দোকানের কেটলি। জানলা ফাঁক করলে সুনসান রাস্তায় পুলিশের ভারী বুট, মোবাইল স্তব্ধ।
উত্তপ্ত দিল্লির জাফরাবাদের লাগোয়া মৌজপুর-নুরিনা-ঘোন্ডাচক এলাকায় একটি দশ বাই দশ ঘরে এক পেট খিদে নিয়ে আতঙ্কে চুপ করে আছেন মুর্শিদাবাদের ১১ জন যুবক। মঙ্গলবার রাতে, ঘণ্টা কয়েকের জন্য ইন্টারনেট চালু হওয়ায় তাঁদের দুর্দশার কথা জানতে পেরেছে তামাম দেশ। খবর পৌঁছেছে তাঁদের প্রান্তিক গ্রাম নওদার ত্রিমোহিনীর নেহারিতলায়।
এ দিন সকালে সেই গ্রামে পা রাখতেই, প্রবাসী ছেলে ফরিদ শেখের মা বলছেন, ‘‘উনুনে আঁচ পড়েনি আজ, ছেলের মুখে ভাত জোটেনি শুনে আর খিদে থাকে!’’
আরও পড়ুন: ‘দেশে শান্তি’ চাইতে পুরীর মন্দিরে মমতা
কেউ তিন কেউ বা পাঁচ বছর— জাফরাবাদের আশপাশের পাখা তৈরির কারখানায় কন্ডেনসর তৈরির কাজ করেন ওই এগারো জন— মহম্মদ কালাম, জিয়ারুল শেখ, ইমামুল শেখ, জব্বার শেখ, সাদ্দাম শেখ, ফরিদ শেখ, আওলাদ শেখ, হালিম শেখ, মেকারুল শেখ, মবিউল শেখ আর এন্টন শেখ।
বুধবার অনেক কষ্টে ফোনে পাওয়া গেল মহম্মদ কালামকে। কাঁপা গলায় বললেন, ‘‘বছরখানেক ধরেই বড় ভয়ে ভয়ে আছি। কিন্তু গ্রামে ফিরে গেলে খাব কী! সব এলোমেলো হয়ে গেল সোমবার থেকে। যে ঘরে ভাড়া থাকতাম, ওই দিন রাত থেকে সেখানে শুধু গুলি আর বোমার শব্দ। মানুষ পাগলের মতো খোলা তরোয়াল নিয়ে ছুটছে। রাস্তায় বিশেষ পোশাকের লোক দেখলেই তাকে রক্তাক্ত করছে। ভয়ে রাতের অন্ধকারে পাড়া ছেড়ে এই মহল্লায় এসে একটা ঘরে উঠেছি। খাব কী, ঘরে একটা দানা নেই।’’ তিনি জানান, দু’দিনে দু-প্যাকেট বিস্কুট ভাগ করে খেয়েছেন সকলে মিলে।
মহম্মদ কালামের বাবা আলি হোসেন খবরটা পেয়ে কখনও ব্লক অফিস কখনও বা পঞ্চায়েতে ছুটছেন। বলছেন, ‘‘এখানে তো কাজ নেই, রুজির টানে ভিন্ রাজ্যে গিয়েছে। ছেলে খেতে পায়নি শুনে মাথার ঠিক থাকে!’’ নেহারিতলা আদতে কৃষিপ্রধান গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দা ফয়জুদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘সারা বছরে দু’টো ধান ছাড়া বিশেষ কিছুই হয় না। সকলের তেমন জমিও নেই। গ্রামে আর কাজ কোথায়! পেট চালাতে ছেলেগুলোকে দিল্লি-কেরল ছুটতে হয়। গ্রামের অধিকাংশ ছেলেই ভিন্ রাজ্যে।’’
খবরটা সামনে আসায় নড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘কী ভাবে ওঁদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনা যায়, সে ব্যাপারে কথা বলা হয়েছে। চেষ্টা চলছে।’’ বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী আশ্বস্ত করছেন, ‘‘আমি ইতিমধ্যেই আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রয়োজনে নিজে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে আনব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy