—ফাইল চিত্র।
কোথাও ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ সোনার দোকানের মালিক, কোথাও সিভিক ভলান্টিয়ারের পরিবারের সদস্য, কোথাও আবার ভিলেজ পুলিশের পরিজন।আমপানে ভাঙা বাড়ির ক্ষতিপূরণ বিলিতে এত দিন দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল তৃণমূলের পঞ্চায়েত, পুরসভার বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি দেখে নতুন করে তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পুলিশকে তালিকা জমা দেওয়ার কথা জানান খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা যাচ্ছে, পুলিশের তালিকাতেও বহু নামই ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্তের।
পশ্চিম মেদিনীপুরে পুলিশের তরফে জেলার ৫৪৫ জন ক্ষতিগ্রস্তের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। তালিকা যাচাই করতে গিয়ে জেলা প্রশাসনের টাস্ক ফোর্স দেখেছে, ১১৯ জনই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত নন। এঁদের অনেকেরই পাকা বাড়ি রয়েছে, অথবা বাড়ির ক্ষতিই হয়নি।
জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা জানিয়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের নামই পাঠানো হয়েছে। টাস্ক ফোর্স তালিকা যাচাই করছে।’’ আর জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের সাফাই, ‘‘খুব কম সময়ে তালিকা করতে গিয়ে সব দিক যাচাই করা যায়নি।’’
আরও পড়ুন: টেস্টের অনুপাতে কোভিড পজিটিভ কেস লাফিয়ে বাড়ছে, উদ্বেগের ছবি রাজ্যে
পুলিশের তালিকা যাচাইয়ের পরে রিপোর্ট ব্লক ও পুর-এলাকাগুলি থেকে জেলায় এসেছে। জেলা থেকে রিপোর্ট রাজ্যেও গিয়েছে। মোহনপুরের ১৯৫ জনের মধ্যে ৬৪ জনের নাম বাদ দিয়েছে টাস্ক ফোর্স। সবংয়ে ২১ জনের মধ্যে ৪ জন, দাসপুর-২ ব্লকে ১১ জনের মধ্যে ৬ জন, কেশপুরে ১৯ জনের মধ্যে ৪ জন, গড়বেতা-২ ব্লকে ৫৮ জনের মধ্যে ৭ জনের আর মেদিনীপুর শহরে ৯৩ জনের মধ্যে ২২ জনের নাম বাদ গিয়েছে।
পুলিশের তালিকায় নাম রয়েছে মেদিনীপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাটনাবাজারের তরুণ সাহু, বরুণ সাহুর। টাস্ক ফোর্স দেখেছে, দু’জনেরই পাকা বাড়ি। রয়েছে গয়নার দোকানও। বরুণের দাবি, ‘‘বাড়ির সামনের দিকটা সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর আমি সোনার কারিগর, ছোট দোকান আছে।’’ তরুণ বলেন, ‘‘ঝড়ে গাছ পড়ে বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। গাছ কাটতেই দু’হাজার টাকা লেগেছে।’’ তালিকায় নাম ছিল মেদিনীপুর গ্রামীণের রামনগরের ভিলেজ পুলিশ আব্দুল হাকিমের স্ত্রীর। অথচ তাঁদের পাকা বাড়ি। হাকিমের দাবি, ‘‘ঝড়ে রান্নাঘরের চালে গাছ পড়েছিল। তাই ক্ষতিপূরণের আবেদন জানানো হয়।’’
আরও পড়ুন: দলের ‘জমি’ ফেরাতে শুভেন্দুকে একক দায়িত্ব
মেদিনীপুরে ৯৩ জনের মধ্যে ১৭ জন ১ নম্বর ওয়ার্ডের, ২৭ জন ২ নম্বর ও ৭ জন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তী যুব তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব শহর তৃণমূল সভাপতি। বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশ নিজে যাচাই না করে এই সব তৃণমূল নেতার থেকে নাম নিয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের খোঁচা, ‘‘তৃণমূলের ভরসা পুলিশ, আর পুলিশের ভরসা তৃণমূল। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন খানও বলেন, ‘‘পুলিশ এলাকায় না গিয়েই কারও থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম নিয়েছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে টাস্ক ফোর্সে ভরসা রাখার কথা বলছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘চূড়ান্ত তালিকা তৈরির সময় কে তৃণমূল করেন, কে বিজেপি— টাস্ক ফোর্স কিচ্ছু দেখছে না।’’ জেলাশাসক রশ্মি কমলেরও আশ্বাস, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা যাচাই করছে টাস্ক ফোর্স। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy