সোনারপুরে বসে আমেরিকার নাগরিকদের প্রতারণা! ‘ভুয়ো’ কল সেন্টার খুলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার তিন। কী ভাবে প্রতারণা চক্র চলত, তারও পর্দাফাঁস করেছে রাজ্য পুলিশের সাইবার শাখা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বেশ কিছু মোবাইল, ল্যাপটপ-সহ একাধিক নথিও।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোনারপুরের চাউহাটি এলাকার একটি বহুতলে হানা দেন সাইবার গোয়েন্দারা। সেই বহুতলের একটি ফ্ল্যাটেই ভুয়ো কল সেন্টারের ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন অভিযুক্তেরা। ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান শেষে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। কী ভাবে সোনারপুরে বসে অভিযুক্তেরা আমেরিকায় প্রতারণা জাল বিস্তার করেছিল, তা-ও তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই চক্র কোনও গ্রাহকের কম্পিউটারে একটি ‘পপ-আপ’ বার্তা পাঠাত। সেই বার্তায় ব্যবহারকারীর কাছে প্রতারকেরা নিজেদের মাইক্রোসফ্ট কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দিত। তারা জানাত, ব্যবহারকারী তাঁর কম্পিউটারে এমন কিছু কাজ করেছেন, যা তাঁর সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তা থেকে পরিত্রাণের উপায়ও বাতলে দেয় প্রতারকেরা। সংশ্লিষ্ট একটি নম্বরে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধান হবে, এমন বার্তাও পান ব্যবহারকারীরা। সেই ফাঁদে পা দিলেই ফাঁকা হচ্ছে ব্যবহারকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। এ ভাবেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতারকেরা মূলত আমেরিকার নাগরিকদের নিশানা করে। তাঁদের রাশিয়া ভীতিও দেখানো হত বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। উল্লেখ্য, আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভাল নয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকেরা নতুন ছক কষছে। অভিযোগ, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা দফতরের নামে ফোন যেত সে দেশের নাগরিকদের কাছে। দাবি করা হত, ওই ব্যবহারকারী রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। যা তাঁদের বিপদে ফেলতে পারে। এমনকি জেল পর্যন্ত হতে পারে! আমেরিকার নাগরিকদের কাছ থেকে এমন ভাবে ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগও উঠেছে ধৃতদের থেকে।
তল্লাশি অভিযানে গোয়েন্দারা ধৃতদের কাছ থেকে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা দফতরের ‘লোগো’ও উদ্ধার করেছে। এ ছাড়াও একটি বিলাসবহুল গাড়ি, ল্যাপটপ, মোবাইল, ব্যাঙ্ক নথি পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
প্রতারকেরা সরাসরি ভুক্তভোগীদের থেকে টাকা নিত না। ভুক্তোভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাতানো টাকা ক্রিপ্টো কারেন্সিতে রূপান্তর করা হত। তার পর তা বিভিন্ন হাত ঘুরে ধৃতদের কাছে আসত। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। সোনারপুরের ওই বহুতল থেকে জয় হালদার, তন্ময় মণ্ডল এবং শুভজিৎ বিশ্বাস নামে তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের জেরা করে প্রতারণা চক্রের সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তার সন্ধান শুরু হয়েছে।