Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
CPIM

বিজেপি-বিরোধিতায় ঘাটতি ছিল, রিপোর্টে মানল সিপিএম

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২১ ০৭:০২
Share: Save:

বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরে রাজ্যে শাসক তৃণমূল সম্পর্কে সুর নরম করার ভাবনা বিরোধী দল হিসেবে তাদের নেই। তবে ভোটের প্রচারে বিজেপি-বিরোধিতায় ঘাটতি থাকার কথা এ বার লিখিত ভাবে দলের রিপোর্টে স্বীকার করে নিল সিপিএম। তাদের উপলব্ধি, বিভিন্ন স্তরে বিজেপির তুলনায় তৃণমূল-বিরোধিতার তীব্রতাই বেশি থাকায় মানুষের মনে সিপিএম সম্পর্কে ‘ভুল বার্তা’ গিয়েছে। সেই ১৯৪৬ সাল থেকে ধরলে বাংলায় বামেদের বিধায়ক-শূন্য দশা এই প্রথম। এই বেনজির বিপর্যয়ের ‘দায়িত্ব’ও স্বীকার করেছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী।

নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনার জন্য দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ২৪ পাতার খসড়া রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব ও নির্বাচনের প্রার্থীদের কাছ থেকে আসা মতামতের ভিত্তিতে ওই রিপোর্ট তৈরি করেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেই রিপোর্টেই মেনে নেওয়া হয়েছে ‘গুরুতর ত্রুটি’র কথা। বলা হয়েছে, ‘প্রচারে তৃণমূল-বিরোধিতাই বেশি্ ছিল। তুলনায় বিজেপি-বিরোধিতায় ঘাটতি ছিল। নেতৃত্ব থেকে এ ব্যাপারে পূর্ব থেকেই সতর্ক করা হলেও এই দুর্বলতা গুরুতর ভাবে থাকায় নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে ভুল বার্তা গিয়েছে। বিগত ১০ বছর ধরে তৃণমূলের স্বৈরশাসন, অত্যাচার ও দুর্নীতিও এ ক্ষেত্রে একটা কারণ’। জেলা কমিটিগুলির পাঠানো রিপোর্টে যে এই পর্যবেক্ষণ আছে, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে রাজ্যের খসড়া রিপোর্টে।

রাজ্য নেতৃত্বের রিপোর্টেরই অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘বিজেপি-বিরোধী প্রচারের তীক্ষ্ণতা সর্বক্ষেত্রে রক্ষিত হয়নি। সমদূরত্বের ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারে কিছুটা সমস্যা তৈরি করেছিল’। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এবং বামপন্থীদের একাংশ আগে থেকেই বলে আসছিলেন, রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূলকে একাসনে বসিয়ে একই রকম তীব্রতায় আক্রমণ শানাতে গিয়ে বিপরীত ফল হচ্ছে। ভোটে বিপর্যয়ের পরে দলের ভিতরেও সমালোচনার মুখে পড়ে প্রচারে ‘গুরুতর ত্রুটি’র কথা সিপিএমকেও মেনে নিতে হচ্ছে। তবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইকে যে তাঁরা লঘু করতে চান না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। রিপোর্টে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ‘দুই শত্রু’র বিরুদ্ধে লড়াই আগেও হয়েছে। এখন এক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইকে কেন্দ্রীভূত করতে চাওয়ার স্লোগান বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের ‘চেতনার নিম্নমান’ প্রকট করে।

এরই পাশাপাশি সিপিএমের রিপোর্ট বলছে, ‘বিজেপি ও তৃণমূল-বিরোধী প্রচার মানুষকে কেন আমাদের দিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হল না, তার অনুসন্ধান প্রয়োজন’। খসড়া এই রিপোর্টের উপরে রাজ্য কমিটির সদস্যেরা চাইলে আগামী ৫ জুলাইয়ের মধ্যে সংশোধনী দিতে পারবেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। তার পরে রাজ্যের তরফে চূড়ান্ত রিপোর্ট পাঠানো হবে পলিটবুরোর কাছে।

রাজ্য কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে জবাবি বক্তৃতায় দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ধারাবাহিক ভাবে দলের গণভিত্তি ক্ষয়ে যাওয়াই বিপর্যয়ের মূল কারণ। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দুর্বলতা তার জন্য দায়ী। যে ভুল আগেই দলে আলোচিত হয়েছে, তা অতিক্রম করা যায়নি। ইয়েচুরির মতে, ভুলকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থতা আরও বড় ভুলের জন্ম দেয়। তবে সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি ও রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দু’জনেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আইএসএফ-কে নিয়ে দলের সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন ভেঙে কোনও জোট হয়নি। সংখ্যালঘু, দলিত, তফসিলি-সহ অনগ্রসর মানুষের দাবি-দাওয়া নিয়ে লড়াইয়ের লক্ষ্যে আইএসএফ নামক মঞ্চ তৈরি হয়। অথচ তাদের ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে যে ভাবে দেগে দেওয়া হয়েছিল, তার ঠিক মোকাবিলা করা যায়নি, এমনই মত সূর্যবাবুদের।

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy