প্রতীকী ছবি।
কোভিড চিকিৎসায় অনেক বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো ব্যবহার করতে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। কিন্তু সেই হাসপাতাল-নার্সিংহোমের অনেকেই রাজ্য সরকারকে বিল পাঠিয়ে যে অর্থ দাবি করেছে, তার সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। কিন্তু এই অর্থ বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকের অনুমান। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সেই কারণে রীতিমতো জেলায় জেলায় অফিসারদের দল গড়ে প্রতিটি বিল যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গরমিলও ধরা পড়ছে প্রচুর।
কোভিডের প্রথম তরঙ্গের সময় থেকেই সরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যা বাড়ানোর কাজ শুরু হয়। সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে শয্যার চাহিদা আরও বাড়তে থাকে। তখন বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কাজে লাগাতে হয় সরকারকে। সরকারি সূত্রের তথ্যই বলছে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১৮টি জেলা এবং স্বাস্থ্যজেলায় প্রায় ৩৫টি বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম সরকারকে যে বিল পাঠিয়েছে, সম্মিলিত ভাবে তার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ২৪৯ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা! অর্থাৎ, গড়ে একেকটি হাসপাতালের বিল প্রায় ৭ কোটি ১২ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রশাসনের মতে, সম্মিলিত ভাবে বিলের ন্যায্য পরিমাণ হওয়া উচিত ১৬৮ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকার মতো। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা বিল মেটানো হয়েছে। বাকি প্রায় ১৮ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকাও মিটিয়ে দেওয়া হবে। অবশ্য প্রশাসনের একটি অংশের দাবি, খরচের অঙ্ক আরও বেশি হতে পারে। কারণ, ইতিমধ্যেই অনেক হাসপাতালের বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, হাসপাতালগুলির প্রাপ্য টাকা তাদের দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও, প্রতিটি বিল যাচাই করতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনগুলিকে। সূত্রের দাবি, রীতিমতো কমিটি গড়ে বিল যাচাই করতে গিয়ে কোনও কোনও হাসপাতালের বিল আধিকারিকদের বাস্তবোচিত বলে মনে হয়নি। কারণ, তাদের পরিকাঠামো ব্যবহারের খরচের বহর স্বাভাবিক প্রবণতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। এক জেলা-কর্তার কথায়, “একটি হাসপাতাল প্রায় ১২ কোটি টাকা চেয়েছিল প্রশাসনের কাছে। কার্যত অস্বাভাবিক এই দাবি খতিয়ে দেখার পরে বোঝা যায়, তাদের আসল বিলের পরিমাণ হওয়া উচিত সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার আশেপাশে।” জেলা প্রশাসনগুলি জানাচ্ছে, শুধু একটি বা দু’টি নয়, বেশির ভাগ হাসপাতালের বিলেই কমবেশি গরমিল ধরা পড়েছে। তাই এই সব বিল যাচাইয়ের জন্য আধিকারিকদের পৃথক দলকে কাজ করাতে হয়েছে।
এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “মোটামুটি সরকারের দরেই চিকিৎসা করার কথা ছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলির। তাতে স্বাভাবিক ভাবেই বিলের পরিমাণ বেসরকারি হাসপাতালের দরের সমতুল হওয়ার কথা নয়। কেউ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইলেও, জলে দেওয়ার মতো টাকা নেই সরকারের হাতে। তাই নিখুঁত যাচাইয়ের উপরে বাড়তি জোর পড়েছে।”
অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর স্বার্থে পুরোদস্তুর লকডাউনের পথে হাঁটতে রাজি নয় কোনও রাজ্য সরকারই। ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও। ভরা কোভিড পরিস্থিতিতে আর্থিক গতিবিধি খোলা রেখে নিয়ন্ত্রণবিধি চালু থাকলেও আর্থিক উন্নতির গতি খুবই শ্লথ। এই অবস্থায় দফতরভিত্তিক খরচে রাশ টানার নীতি এখনও চালু রেখেছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিপুল খরচ, দৈনন্দিন এবং অন্যান্য সামাজিক খরচ সামলাতে এ ছাড়া কোনও গতি নেই সরকারের কাছে। সেই কারণেই খরচে রাশ টানার সরকারি নির্দেশিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে সম্প্রতি। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, কোভিডের চালু তরঙ্গের মোকাবিলায় আরও ১৯৪ হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখতে হচ্ছে। ফলে এই খাতে খরচ যে চলতেই থাকবে, তা মোটামুটি নিঃসন্দেহ। তাই প্রতিটি খরচের পাই-পয়সার হিসেব রাখা জরুরি হয়ে পড়ছে সরকারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy