রামদুলাল রায় ও ভারতী রায়। নিজস্ব চিত্র।
অসুস্থ দু’জনেই। গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন দম্পতি। যে সমস্যাগুলো করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হতে পারে।
একজনের বয়স ৮৬ বছর। বুকে পেসমেকার, গলব্লাডারে তিনটি স্টেন্ট। অন্য জনেরও বুকে স্টেন্ট। বয়স ৭৬। কিন্তু দু’জনেই করোনা আক্রান্ত হয়েও মনের জোর হারাননি। শনিবার প্রবীণ দম্পতি বার্তা দিলেন, ‘‘চিকিৎসকদের পরামর্শ আর কঠোর ভাবে বিধি মানলেই এই মারণ ভাইরাসকে হেলায় হারানো যায়।’’
রামদুলাল রায় ৮৬ বছরের অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী ৭৬ বছরের ভারতী রায়। থাকেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার রাউলিয়া গ্রামে। ছেলে নেই। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। বাড়িতে তাঁরাই পরস্পরের সঙ্গী। কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন দু’জনে। শিক্ষকের গলব্লাডারে স্টোন ধরা পড়ে গত বছরের গোড়ায়। কিন্তু লকডাউন হয়ে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করাতে পারেননি। এরই মধ্যে দেখা দেয় হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা। গত ৩ এপ্রিল কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর পেসমেকার বসানো হয়। তিনদিন পর তিনটি স্টেন্ট বসানো হয় গলব্লাডারে। ক্রমেই সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। তাঁর স্ত্রী ভারতীরও হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা থাকায় বুকে দু’টি স্টেন্ট বসাতে হয়েছে কয়েক বছর আগেই। দম্পতি ডায়াবিটিসের রোগীও। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দম্পতির করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। দু’জনেরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বাড়ি ফেরেন তাঁরা।
গত ২৮ এপ্রিল কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে রামদুলালবাবুর। জ্বরে কাবু হন তাঁর স্ত্রীও। ১০২-১০৩ ডিগ্রি জ্বরের সঙ্গে কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ৬ মার্চ গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করালে দু’জনেরই করোনা ধরা পড়ে। বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন। পরিচারিকা না আসায় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সেবা করেন। পড়শিদের সাহায্য পাননি। মেয়ে-জামাইয়েরা বাড়ির বাইরে থেকে যেটুকু পেরেছেন করেছেন। তবে মনের জোর বজায় ছিল বৃদ্ধ-বৃদ্ধার। স্থানীয় আশাকর্মীর সহযোগিতায় নিয়ম করে খান ওষুধপত্র। অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন চিকিৎসকদের পরামর্শ-সহ করোনা বিধি। রামদুলাল যোগাভ্যাস করতেন প্রতি দিনই। ১৭ দিন গৃহবন্দি থাকার পর হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা এসে তাঁদের করোনা পরীক্ষা করান। রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।
নানা রোগ নিয়েও করোনা জয় করে স্বাভাবিক যাপনে ফিরেছেন দম্পতি। অতিমারির আঁধারে তা সত্যি আশার আলো। শনিবার সকালে স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে রামদুলালবাবু বললেন, ‘‘কঠোর ভাবে করোনা বিধি মেনে চলা, সংক্রমিত হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে নিয়ম করে ওষুধপত্র খাওয়া আর হার না মানা মানসিকতা নিয়ে মনোবল তুঙ্গে রাখলেই করোনার বিরুদ্ধে জেতা যায় অবলীলায়।’’ করোনা থেকে মুক্তির পরেও মাস্ক না পড়া, দূরত্ববিধি মেনে চলায় শিথিলতা দেখালে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। বলছেন করোনাজয়ী বৃদ্ধ দম্পতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy