শান্তনু ঠাকুর। ফাইল চিত্র
বিজেপির ‘শহিদ সম্মান যাত্রা’কে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিমানবন্দর এলাকা, উত্তরপাড়া ও উত্তরবঙ্গে দফায় দফায় অশান্তি এবং পুলিশের ধরপাকড় চলল। থানায় বসে থাকতে দেখা গেল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকেও। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে ‘বেআইনি ভাবে’ আটক করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তাঁকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। তিনি যা করেছেন, ‘স্বেচ্ছায়’।
কেন্দ্রের নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে তাঁদের রাজ্যগুলিতে এ দিন থেকে ‘আশীর্বাদ যাত্রা’ শুরু করেছে বিজেপি। এ রাজ্যে ওই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহিদ সম্মান যাত্রা’। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রে নতুন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন চার বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, জন বার্লা, সুভাষ সরকার এবং শান্তনু। এই ‘যাত্রা’য় রাজ্যে গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে এখনও পর্যন্ত ‘রাজনৈতিক হিংসা’য় নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিজনেদের সঙ্গে দেখা করে সম্মান জানাবেন তাঁরা। বিভিন্ন জায়গায় এ দিন ওই ‘যাত্রা’য় অংশগ্রহণকারী দলীয় কর্মীদের পুলিশ বাধা দেয় বলে বিজেপির অভিযোগ।
শান্তনুর যাত্রায় অংশ নিতে এ দিন সকালে এয়ারপোর্ট থানা এলাকার বিরাটির গৌরীপুর কালিবাড়ির সামনে জড়ো হন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু এবং তাঁর ভাই, বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর মন্দিরে পুজো দিতে গেলে পুলিশ দলের অন্য কর্মীদের গ্রেফতার করতে শুরু করে বলে দলীয় নেতৃত্বের অভিযোগ। প্রতিবাদে অবস্থান শুরু করেন শান্তনু-সহ বিজেপি নেতারা। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ তখন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, আর এক নেত্রী অর্চনা মজুমদার, ৬ জন বিধায়ক— বঙ্কিম ঘোষ, পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়, অসীম বিশ্বাস, অসীম সরকার, অশোক কীর্তনীয়া এবং সুব্রত-সহ ৫৫ জনকে গ্রেফতার করে বাসে তোলে। সে সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও সেই বাসে উঠতে দেখা যায়।
এয়ারপোর্ট থানার সামনে বাস থেকে নেমে শান্তনু জানান, পুজো দিতে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার হতে হল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিপন্ন। তালিবান শাসন চলছে।’’
বিধাননগর পুলিশের অবশ্য দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। যখন বিজেপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে বাসে তোলা হয়, তখন মন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে থাকতে চেয়ে বাসে উঠে যান। এই যুক্তিতে পুলিশ ধৃত বিজেপি নেতা-কর্মীদের প্রত্যেককে জামিনে মুক্তি দিলেও শান্তনুকে জামিনে স্বাক্ষর করতে বলেনি। তা নিয়েও থানায় পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ হয় শান্তনুর। তাঁর প্রশ্ন, তাঁকে গ্রেফতার না করা হলে দীর্ঘ সময় থানায় বসিয়ে রাখা হল কেন? এই প্রেক্ষিতে থানার আইসি-কে চিঠি লিখে শান্তনু অভিযোগ করেছেন, তাঁকে ‘বেআইনি ভাবে’ আটক করা হয়েছিল।
শান্তনুর যাত্রায় অংশগ্রহণকারী আরও কয়েক জন বিজেপি কর্মীকে এ দিন মধ্যমগ্রাম এবং বারাসত থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, সুভাষবাবুর যাত্রায় অংশ নিয়ে উত্তরপাড়া থেকে গ্রেফতার হন কয়েক জন বিজেপি কর্মী। শিলিগুড়িতে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ-সহ কয়েক জন বিজেপি কর্মী গ্রেফতার হন বলে অভিযোগ।
আগামী বছর ১৫ অগস্ট দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিক্রান্ত হবে। সেই উপলক্ষে এ দিন মুরলীধর সেন লেনে দলের রাজ্য দফতর থেকে একটি সাইকেল মিছিলের আয়োজন করেছিল বিজেপির যুব মোর্চা। সেটিও শুরুর আগেই পুলিশ আটকে দেয় এবং কয়েক জন যুব নেতাকে গ্রেফতার করে বলে অভিযোগ। দিনভর এই ধরপাকড়ের পরে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল পথে নামলে আহা মরি! আর বিজেপি পথে নামলে অতিমারী! এই সূত্রেই এখন পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসন চলছে।’’
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আমি বিজেপিকে রুমাল পাঠাচ্ছি। আগে ওরা বাবুল সুপ্রিয়র চোখের জল মোছাক, যিনি দলের জন্য মন্ত্রিত্ব হারিয়ে শহিদ হয়েছেন! ত্রিপুরায় তৃণমূলের লোকেরা হোটেলে থাকলেও গ্রেফতার করা হচ্ছে আর বিজেপি সেখানে রাস্তায় মিছিল করছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আইন ভেঙে ঘুরে বেড়াবে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘বিজেপির আজকের কর্মসূচির কিছু ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ তাদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করতে চাইছে না, তবু তাঁরা জোর করে গাড়িতে উঠছেন। দৃশ্যটা বেশ বিনোদনমূলক!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy