Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

বিলেতের আমেজে ‘আমাদের লন্ডন’ নিয়ে মুখর মমতা

বৃহস্পতিবার বিকেলে তখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়নি কলকাতায়। তবে রোদহীন মেঘে-ঢাকা শহরে দুপুর থেকেই ‘লন্ডুনে মেজাজ’!

Mamata Banerjee.

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:২৪
Share: Save:

একদা বলেছিলেন কলকাতাকে লন্ডন বানানোর কথা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার বললেন, ‘‘লন্ডন আমাদের শহর। লন্ডনের সব রাস্তা আমি চিনি।’’

বৃহস্পতিবার বিকেলে তখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়নি কলকাতায়। তবে রোদহীন মেঘে-ঢাকা শহরে দুপুর থেকেই ‘লন্ডুনে মেজাজ’! সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে দিল্লি থেকে আগত ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালেক্স এলিস পর্যন্ত তাজ্জব, ‘‘যা ওয়েদার, মনে হচ্ছে দেশে আছি। ঠিক যেন ডিকেন্সের ‘গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স’-এর আবহাওয়া।’’ একটু বাদে মুখ্যমন্ত্রীও বললেন, ‘‘লন্ডন শুধু আপনাদের নয়, আমাদেরও শহর। আমাদের কত জন ওখানে কাজ করছেন। ব্রিটেনকে ভালবাসি। আমাদের কত ছাত্র অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সে পড়ছেন।’’

তিনি বাণিজ্য আনার কাজে আগে লন্ডনে গিয়েছেন এবং আবার যেতে মুখিয়ে আছেন, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, ‘‘লন্ডনের সব রাস্তা আমার চেনা। ব্যবসা-বাণিজ্য আনার কাজে লন্ডনে গেলে আমি কখনও গাড়ি চড়ি না। খালি হাঁটি। ব্রিটেনের অন্য জায়গাতেও গেছি।’’ অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ-সহ নানা জায়গা থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমন্ত্রণ পেয়ে জানিয়েছি, জুন নাগাদ আবার
যেতে পারব।’’

প্রকৃতির বিলিতি আবহে বাংলা-ব্রিটেন যোগ নিয়ে আবেগের আতিশয্যও ছিল কার্যত বাঁধভাঙা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের দেশ শাসনকালে ব্রিটেন কত কী গড়েছে। ওঁদের (ব্রিটিশ) নির্মাণ, স্থাপত্য, শিল্পকর্ম কী চমৎকার। হাজার হাজার বছর তা টিকে থাকবে। আপনাদের জন্য আমরা গর্বিত।’’ বইমেলার উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন বলে ফেলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তিতেও ব্রিটেনের অবদান অনস্বীকার্য।’’ রবীন্দ্রবিশারদ, অধ্যাপক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের মত, ‘‘তখন ব্রিটেনে রবীন্দ্র কবিতার চর্চা হয়েছিল। এটুকুই। নোবেলপ্রাপ্তিতে ব্রিটেনের অবদান বলাটা অর্থহীন।’’

ব্রিটেন এবং বাংলা মিলে গেলে এক ধরনের চকমকি ঠোকাঠুকির কথা অবশ্য শুনিয়েছেন ব্রিটেনের হাই কমিশনারও। এলিস বলেন, ‘‘কী একটা যেন জাদু (ম্যাজিক্যাল স্পার্ক) ঠিকরে বেরোয় ব্রিটেন-বাংলার সম্পর্ক থেকে।’’

রবীন্দ্রনাথের বিলেতে পড়াশোনা, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ল্যাঙ্কাশায়ার ক্লাবের যোগ থেকে প্রথম জীবনে সত্যজিৎ রায়ের বিলিতি ফার্মে চাকরি— গড়গড়িয়ে নানা উদাহরণ মেলে ধরেন এলিস। বলেন, ‘‘আমরা সুযোগ পেলেই ইংরেজি ভাষা নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হই, যে ভাষা ভারত গ্রহণ করে, কত না উন্নত করেছে।’’

দুর্গাপুজো নিয়ে রাজ্য পর্যটন দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গবেষণার উল্লেখ করে এলিস বলেন, ‘‘বাংলার সামনে আমরা সংস্কৃতির মূল্য তুলে ধরি। শুধু অর্থনৈতিক মূল্য নয়, পর্যটনের সম্ভাবনাও তাতে মিশে রয়েছে।’’

বক্তৃতা শেষে মমতার সদ্যপ্রকাশিত ইংরেজি কবিতার বই থেকেই বাংলার মহিমা নিয়ে কয়েক লাইন পড়েন এলিস। এ বারও আটটি বই বেরিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। পরের বার আরও কয়েকটি বই লিখে ১৫০টি বই লেখার কাজ তিনি সেরে ফেলবেন বলে জানান মমতা। একটি গ্রন্থাগার, আর্কাইভ, অতিথিদের অতিথিশালা গড়ার জন্য বইমেলার মাঠের পাশে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এ দিন একটু জায়গা চেয়েছে গিল্ড।

কলকাতার লন্ডন হয়ে ওঠা আবহাওয়া ছাড়াও শাড়িতে সুসজ্জিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের কান্ট্রিহেড অ্যালিসন ব্যারেট-সহ অতিথিরা রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’-এর সময়ে উঠে দাঁড়ালেন। এলিস বলছিলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, এই বুঝি কলকাতার কুয়াশা ভেদ করে চার্লস ডিকেন্সের গ্রেট এক্সপেক্টেশন্সের ম্যাগইউচ হাজির হবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC London
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy