Advertisement
E-Paper

ভোট-বিপর্যয় পর্যালোচনা বৈঠকে ধমক বনসলের! শুভেন্দুকে নিয়ে অভিযোগে কানই দেননি কেন্দ্রীয় নেতা

লক্ষ্য ছিল ৩০, কিন্তু বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে জয় পায় ১২ আসনে। এর পরে দলের ভিতরেই নানা অভিযোগ নিয়ে চাপানউতর শুরু হয়। আর তা নিয়ে পর্যালোচনাতেও তৈরি হয় উত্তাপ।

Central leadership of BJP rebukes state leaders in review meeting of Loksabha Election

(বাঁ দিকে) সুনীল বনসল, শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ১৯:৩৯
Share
Save

দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে বাংলায় ৩০ কেন্দ্রে জয়ের লক্ষ্য নিলেও এক ডজন আসনেই আটকে গিয়েছে বিজেপি। হারাতে হয়েছে পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে জেতা আটটি আসন। সেই ফল ঘোষণার পরেই রাজ্য বিজেপিতে দোষারোপ শুরু হয়ে যায়। পরাজিতরা তো বটেই জয়ী সাংসদের মুখেও রাজ্য নেতৃত্বের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা শোনা যায়। তবে সেই সব সমালোচনাকে গুরুত্বই দিতে নারাজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সম্প্রতি কলকাতায় এসে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল একটি বৈঠক করেন। ভোটের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনার সময়ে কেউ কেউ সাংগঠনিক ত্রুটি বা ভোটে অর্থাভাব এবং টাকাপয়সা নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ তোলেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সব অভিযোগ শোনার পরে বনসল পাল্টা প্রশ্ন করেন অভিযোগকারীদের। তাঁরা কেন সব দেখেও চুপ করেছিলেন, তাঁরা দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও কেন সাংগঠনিক ত্রুটি শুধরে নেননি সে প্রশ্নও তোলেন। তবে প্রার্থী বাছাই নিয়ে অভিযোগ নাকি শুনতেই চাননি বনসল। জানিয়ে দেন, প্রার্থী বাছাই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের।

লোকসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক চলছে। বাংলায় ইতিমধ্যেই সেই বৈঠক হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই কলকাতায় এসে বিজেপির সল্টলেকের রাজ্য দফতরে বসে বৈঠক। দুই পর্বে হয় সেই বৈঠক। প্রথমে ভোটের ফল নিয়ে পর্যালোচনা এবং পরে আগামী দিনে রাজ্যে কোন কোন কর্মসূচি নেওয়া হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বনসল ছাড়াও ওই বৈঠকে রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে এবং সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় উপস্থিত ছিলেন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য স্তরের সব নেতাই। রাজ্যে বিজেপির পাঁচটি সাংগঠনিক জ়োন রয়েছে। উত্তরবঙ্গ, রাঢ়বঙ্গ, নবদ্বীপ, কলকাতা এবং হাওড়া-হুগলি-মেদিনীপুর জ়োনের প্রতিটিতেই নির্বাচনের আগে আহ্বায়ক এবং সহ-আহ্বায়ক নিয়োগ করেছিলেন সুকান্ত। তাঁদের সকলকেই ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, তাঁদের মধ্যে অনেকেই রাজ্যের পদাধিকারী এবং লোকসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন। যেমন লকেট চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের সাধারণ সম্পাদিকা এবং রাঢ়বঙ্গ জ়োনের অহ্বায়ক। একই ভাবে সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল কলকাতা জ়োনের আহ্বায়ক। দু’জনেই লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। বৈঠকে আরও তিন সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং দীপক বর্মণও উপস্থিত ছিলেন। কোর কমিটির সদস্য এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হিসাবে দিলীপ ঘোষকেও ডাকা হয়েছিল। তবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন না বলেই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।

প্রথম দফার বৈঠকে মূলত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য নেতৃত্বের কী কী ত্রুটি ছিল তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখনে সব চেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে সাংগঠনিক ত্রুটি নিয়ে। বিষ্ণুপুরে জয় পাওয়ার পরেই সাংগঠনিক ত্রুটি নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিজেপির টিকিটে দু’বারের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। প্রকাশ্যে নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন দিলীপও। আবার ভোটের খরচ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধেই তছরুপের অভিযোগ তুলেছিলেন কৃষ্ণনগরের প্রার্থী অমৃতা রায়। সাংগঠনিক ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি অনেক নেতার আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও নানা অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতেই পড়েন রাজ্য নেতৃত্ব।

কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বৈঠকের শুরুতেই এই সব প্রসঙ্গ ওঠে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রথমেই এক নেতা অভিযোগ তোলেন, নিচুস্তরের সাংগঠনিক অক্ষমতাই খারাপ ফলের প্রধান কারণ। তিনি এমনটাও বলতে থাকেন যে, অনেক জেলাস্তরের নেতা কী ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হয় তা জানেন না। এর পরে একে একে অনেকেই আর্থিক বিষয় উত্থাপন করেন। বহু জায়গায় কর্মীদের কাছে সঠিক সময়ে ভোটপ্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পৌঁছয়নি বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। প্রথম দিকে শান্ত ভাবে সবটা শুনলেও বনসল কিছুটা বিরক্ত হন বলেও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। এর পরেই বনসল পাল্টা প্রশ্ন তোলেন বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের ভূমিকা নিয়ে। তিনি জানতে চান গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁরা থাকার পরেও কেন ভোটের আগে বা সেই সময়ে ত্রুটি সংশোধন করেননি। ভোটের পরে অন্যের দিকে আঙুল তোলা ঠিক নয় বলেও বনসল বুঝিয়ে দেন বলে জানা গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ফল ঘোষণার পরে পরেই সুকান্ত বিপর্যয়ের দায় নিয়ে নেন রাজ্য সভাপতি হিসাবে। পাশাপাশি একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে ভোটের পরে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে হওয়া রাজ্য বিজেপির বৈঠকে সেই প্রসঙ্গও ওঠে। কোথায় কোথায় কর্মীরা এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি, কোথাও এখন সন্ত্রাসের আবহ রয়েছে তা নিয়েও কথা হয়। তবে দিলীপ-সহ বিভিন্ন নেতা প্রার্থী বাছাই বা জয়ীদের কেন্দ্রবদল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ নাকি শুনতেই চাননি বনসলরা। বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা ছিল এমন অনেক আসনে শুভেন্দুর পরামর্শে ভুল প্রার্থী বাছাই হয়েছিল বলেও অভিযোগ ছিল। কিন্তু সে সব নিয়ে কোনও রকম আলোচনার সুযোগই দেননি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকের আবহ বুঝে ওই প্রসঙ্গ নিয়ে কেউ-ই বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি। এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘বৈঠকে একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, কেন ফল খারাপ হল তা নিয়ে দোষারোপ না করে ত্রুটি সংশোধন করা দরকার। পিছন দিকে না তাকিয়ে আগামী নির্বাচনগুলিতে ভাল ফলের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।’’

দ্বিতীয় দফার বৈঠকে আগামী দিনে কী ভাবে দলের কর্মীদের আবার পথে নামানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে ঠিক হয়েছে, বর্ষা পুরোপুরি বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত সে ভাবে বড় কর্মসূচি হবে না। আপাতত কর্মীদের উৎসাহিত করা হবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে। ওই বৈঠকেই ঠিক হয়, গোটা অগস্ট মাস জুড়ে বিজেপির নেতা, কর্মীদের নিজের মায়ের নামে একটি করে গাছ পোঁতার কথা বলা হবে। একই সঙ্গে রাজ্যের প্রতিটি লোকসভা আসনে একটি করে ‘ভোটার ধন্যবাদ সমাবেশ’ করা হবে বলেও ঠিক হয়। প্রসঙ্গত, জেতা আসনগুলির কয়েকটিতে ইতিমধ্যেই এই ধরনের সভা হয়েছে। তবে হারা আসনের কবে কোথায় কী ভাবে এমন সমাবেশ করা হবে তার সূচি এখন তৈরি হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। সর্বত্র তা করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে বিজেপির অন্দরে।

BJP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।