Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
CAA

মমতা-বিজয়ন-স্ট্যালিনরা বলেছেন, সিএএ চালু করতে দেবেন না তাঁদের রাজ্যে! তা কি সম্ভব? কী বলছে আইন

সোমবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। তার পর থেকেই তিন মুখ্যমন্ত্রী সরব। তাঁরা এই আইন কার্যকর করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সংবিধান কি সে অধিকার দিয়েছে?

Can any state government defy Citizenship Amendment Act

বাঁ দিক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পিনারাই বিজয়ন, এমকে স্ট্যালিন এবং অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ২১:২৫
Share: Save:

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে তিনি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হতে দেবেন না! একা মমতা নন, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও একই কথা বলেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই তিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ওই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। যা সাম্প্রতিক কালে ‘বেনজির’ বলে মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে ইতিমধ্যেই নাগরিকত্বের আবেদনপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মমতা-বিজয়ন-স্ট্যালিনদের নরম হওয়ার লক্ষণ নেই।

তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশ সরাসরি বলছেন, ‘রাজনৈতিক’ ভাবে বিরোধিতা করা গেলেও কোনও সরকার বা কোনও অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনও কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করবেন না বলে ঘোষণা করতে পারেন না! তাঁদের মতে, এমন ঘোষণা ‘সংবিধান বিরোধী’। তাঁরা চাইলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইন তাঁদের শাসনাধীন রাজ্যে কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের নির্দিষ্ট ধারা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। ওই বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কোনও রাজ্য কোনও কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নে বাধা দিলে সেই বিষয়টিকে ‘সাংবিধানিক সঙ্কট’ হিসাবে গ্রাহ্য করে রাষ্ট্রপতি শাসনের মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নেওয়া যেতে পারে!

রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকত্ব কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়। সে বিষয়ে কেন্দ্র যদি কোনও আইন আনে, তবে রাজ্যকে তা মানতেই হবে।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আইনে যদি রাজ্যকে কার্যকর করা বা না-করা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করার সুযোগ না দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে তো ওই আইন অমান্য করার কোনও অবকাশই নেই।’’

একই কথা বলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জিষ্ণু বসুও। তিনি বলেন,‘‘সংবিধানের ২৫৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে দেওয়া রয়েছে, সংসদে প্রণীত আইন মেনে চলতে হবে রাজ্যকে। এমনকি, রাজ্যকে সেই আইন মানার জন্য সরাসরি নির্দেশও দিতে পারে কেন্দ্র। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ২৫৭ নম্বর অনুচ্ছেদও গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেও কেন্দ্রীয় আইন কার্যকরের বিষয়ে রাজ্যের বাধ্যবাধকতার উল্লেখ রয়েছে।” জিষ্ণু এ-ও দাবি করেছেন যে, নাগরিকত্বের বিষয়টি যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত, তাই রাজ্য তা নাকচ করতে পারে না।

তবে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন বলছেন, ‘‘যদি কেন্দ্রের কোনও আইন রাজ্যে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়, তবে সেটা করতেই হবে। কিন্তু রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগানোর বিষয় থাকলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার সময় চাইতে পারে। এটা বলতে পারে যে, এখনই পুলিশ বা প্রশাসনকে ওই কাজে লাগানো যাবে না পূর্বনির্ধারিত কিছু কাজের জন্য। তবে নির্দেশ অমান্য কখনওই করা যাবে না।’’ সিএএ কার্যকরের বিষয়ে কেন্দ্র অবশ্য রাজ্যের কোনও ‘ভূমিকা’ রাখেনি। সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে আবেদন করতে বলা হয়েছে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে অর্ধেন্দুর বক্তব্য, ‘‘এ ক্ষেত্রে সরাসরি ‘না’ বলার রাস্তাই রাখেনি কেন্দ্রীয় সরকার।’’ প্রসঙ্গত, মমতা মঙ্গলবার হাবড়া এবং শিলিগুড়িতে বলেছেন কেন্দ্রের পোর্টালে আবেদন না-করতে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আবেদন করলেই আপনাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে!’’ তবে পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে বলেছেন, ‘‘আমি আপনাদের বলে রাখলাম। সিদ্ধান্ত নেবেন আপনারা।’’

কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রের আইন রাজ্যে প্রণয়ন না-করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে কী হবে? সে ক্ষেত্রে কি কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে? প্রশ্নের উত্তরে জয়ন্ত এবং জিষ্ণু দু’জনেই বলছেন, কেন্দ্রের সে ক্ষমতা রয়েছে। জিষ্ণু বলেন, ‘‘সংবিধানে খুব পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করা রয়েছে, ২৫৬ ধারা অনুযায়ী যদি কেন্দ্রের নির্দেশ না মেনে নেয় রাজ্য এবং ওই কেন্দ্রীয় আইন জারি না করে, ধরে নেওয়া হবে ওই রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা চলছে।’’

তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, ‘ততটা’ করার সম্ভাবনা কম। তাঁর কথায়, ‘‘একেবারে রাষ্ট্রপতি শাসন না হলেও সংবিধানের ৩৫৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে নির্দেশ দিতে পারে। কারণ, কেন্দ্রীয় আইন রাজ্যে কার্যকর না করাটা সংবিধানের সঙ্কট।’’ দেশের তিন মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে তাঁদের শাসনাধীন রাজ্যে সিএএ জারি করার বিরোধিতা করছেন, তার উল্লেখ করে অশোক বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে কেউ বলতেই পারেন। বিরোধিতা তো হতেই পারে। কিন্তু কোনও সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী সেটা বলতে পারেন না। সরকারি মঞ্চ ব্যবহার করে দেশের আইনের বিরোধিতা করার এক্তিয়ার নেই কোনও মুখ্যমন্ত্রীর। বরং সংবিধানের ১৩১ অনুচ্ছেদ বলে কোনও সরকার আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy