ঘরের টালি ফুটো হয়ে মেঝেতে পড়েছিল একটা হাত, জানালেন আরিফা বিবি। — নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে ভেবেছিলেন হনুমানের হাত হবে। পরে দেখেন এ যে মানুষের। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললেও সকালের সেই সময়টা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না আরিফা বিবি। ভুলতে পারছেন না আরিফার শাশুড়ি, ছেলেমেয়েরাও।
তখন সকাল সাড়ে ১০টা হবে। বাড়ির দাওয়ায় বসে ছিলেন আরিফা। আচমকা বিকট শব্দের সঙ্গে চারপাশে ধোঁয়া আর ধোঁয়া। তার মাঝেই ছাদের টালি ভেঙে কী যেন একটা মাটিতে পড়ল! একেবারে গা ঘেঁষে নরম একটা কিছু! প্রথমে খেয়াল করেন আরিফার শাশুড়ি। কাছে যেতেই বুক ধড়ফড় করে ওঠে বৃদ্ধার। এ যে একটা আস্ত হাত! প্রথমে ভেবেছিলেন, নির্ঘাত কোনও হনুমানের। পুত্রবধূ আরিফাকে ডাকেন। দু’জনে কাছে গিয়ে দেখেন, হনুমানের নয়, মানুষের হাত। বাড়ির বাচ্চারাও সেই দৃশ্য দেখে কেঁপে উঠেছিল।
চারপাশের বিকট শব্দে তখন ঘটনা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায় আরিফার কাছে। বুঝতে পারেন দত্তপুকুরের বেআইনি বাজি কারখানাতেই যত কাণ্ড! শুধু আরিফা নয়, তাঁর আশপাশের কোনও বাড়িতে পড়েছে ছিন্নভিন্ন দেহের পা, হাত, কাঁধের অংশ। আরিফা জানালেন, সেই বিস্ফোরণের শব্দ এখনও তাঁর কানে বাজছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, কারও বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গিয়েছে। পরে বুঝতে পারি, বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে।’’ জানালেন, বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছিলেন তাঁরা। তার মধ্যেই টালি ভেঙে পড়ে একটা হাত। আরিফাদের বাড়ি থেকে বাজি কারখানার দূরত্ব ২০০ ফুটের মতো। চার-পাঁচটি বাড়ি পেরিয়ে উড়ে এসেছিল সেই হাত। মোচপোলের বাসিন্দা আরিফার কথায়, ‘‘হাত দেখে ভয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন আমার শাশুড়ি, ছেলে, মেয়ে। ওঁরা খুব ভয়ে রয়েছেন। পরে পুলিশ এসে হাত উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে।’’ তবে যেখানে হাত পড়েছিল, সেখানে একটা চিহ্ন রয়ে গিয়েছে।
দত্তপুকুরের মোচপোল জুড়ে আতঙ্কের ছবি। সঙ্গে ক্ষোভ। বেশি ক্ষোভ পুলিশের বিরুদ্ধেই। মোচপোলেরই বাসিন্দা আজিজুল হক বললেন, ‘‘পুলিশ সব জানে। পয়সা খাচ্ছে। নেতারাও পয়সা খাচ্ছে। ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম আমরা। কাজ হয়নি। এর আগেও বেরানারায়ণপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছিল। এ বার মোচপোলে।’’ আরিফা আবার আঙুল তুললেনন কারখানার কর্মীদের দিকে। তিনি বলেন, ‘‘মোচপোলের বেআইনি বাজি কারখানায় এই কাজ অনেক দিন ধরে চলছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি। কারখানার প্রায় ১০০ জন কর্মী আমাদের ঘরে এসে হামলা করেছিলেন। হুমকি দিয়েছিলেন, কাজ না করতে দিলে প্রত্যেকের ঘরে রোজ ৫০০ টাকা করে দিয়ে আসতে হবে।’’
দোষারোপ চলছে। সংবাদমাধ্যমকে দেখলেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই তদন্তকারী দল পৌঁছেছে গ্রামে। বারুদের সঙ্গে রক্তের গন্ধ মিশে দমচাপা ভাব মোচাপোলে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার চোখে আতঙ্ক। কত জনের প্রাণ গেছে, আরও কত যাবে সেই প্রশ্ন ঘুরছে মুখে মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy