বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য নিয়ে সরব তৃণমূল। ফাইল চিত্র।
স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করেছেন বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এমনটাই অভিযোগ করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার সকালে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ অনুষ্ঠানে যোগদান করতে ব্রিগে়ড এসেছিলেন সুকান্ত। সেখানেই সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বালুরঘাটের সাংসদ বলেন, ‘‘বাংলা বহু যুগ ধরে সনাতন সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। ভক্তি আন্দোলনের পীঠস্থানও ছিল। মাঝে বাংলা কিছুটা ডিরেল্ড হয়েছিল বামপন্থীদের দ্বারা।’’ এরপর তিনি আরও বলেন, ‘‘এই দেখতে পাচ্ছেন না অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী। গীতাপাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভাল যাঁরা বলছেন, তাঁরা বামপন্থী প্রোডাক্ট আর কী। এখন বাংলা সঠিক পথে যাবে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে সঠিক পথে যাওয়া।’’ তাঁর এমন মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই তৃণমূলের তরফে নিঃর্শত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানানো হয়েছে।
সুকান্তের এমন মন্তব্যের পরেই তৃণমূলের তরফ থেকে দাবি করা হয়, বিজেপি সভাপতি অপমান করেছেন স্বামী বিবেকানন্দকে। তৃণমূলের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে প্রথম এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। তারপর একে একে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, ব্রাত্য বসু, শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিবৃতি দিয়ে বিজেপি সভাপতি সুকান্তের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। সন্ধ্যায় এই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করেও আক্রমণ শানানো হয় বালুরঘাটের সাংসদকে। সোমবার গভীর রাতে কলকাতায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপি সভাপতির এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর জবাবদিহিও চান কুণাল। সংসদ থেকে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও এক্স হ্যান্ডলে আক্রমণ করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতিকে। স্বদেশমন্ত্র নামে স্বামীজির একটি লেখা পোস্ট করে তিনি লেখেন “এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা-এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করিবে?” জবাবে নিজের এক্স হ্যান্ডলে সুকান্ত লেখেন, ‘‘টেট পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কেলেঙ্কারি চাপতেই কি তৃণমূলের দাগি জেল খাটা আসামিরা টুকরো খবর ছড়িয়ে মিথ্যাচার করতে বাধ্য হলেন...?? আপনাদের সুস্থতা কামনা করি...’’
উল্লেখ্য, বিবেকানন্দের উক্তিটি হল ‘‘গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে। তোমাদের শরীর একটু শক্ত হইলে তোমরা গীতা আরও ভাল বুঝিবে।’’
তবে তৃণমূলের তরফে কুণাল বলেন, ‘‘সুকান্ত মজুমদার স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করেছেন। স্বামীজির মূল স্পিরিট, বক্তব্যের মূল অভিমুখ তিনি জানেন না। তিনি বোঝেন না। স্বামী বিবেকানন্দ গীতাপাঠ এবং ফুটবল খেলা নিয়ে যেটা বলেছিলেন, তার সঙ্গে গীতাকে অসম্মানের কোনও প্রশ্নই নেই’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘স্বামীজি কেন এ কথা বলেছিলেন, তিনি যদি বুঝতেন, তা হলে বিজেপির মতো দল করতেন না। বিবেকানন্দকে আগে বুঝতে হবে, জানতে হবে।’’
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বলেন, ‘‘বিজেপি বার বার বাঙালী মনীষীদের অপমান করে। সুকান্ত মজুমদারও সেই একই কাজ করেছেন। এদের কাছে জবাব চাওয়ার সময় এসেছে। কেন বাঙালি মনীষীদের প্রতি এত অসম্মান? এর জবাব বিজেপিকে দিতেই হবে।’’ মন্ত্রী শশী বলেন, ‘‘স্বামীজি বলেছিলেন গীতাপাঠ আর ফুটবল খেলার মধ্যে তিনি বলেছিলেন যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে ফুটবল খেলার জন্য। যদি গীতাপাঠ নাও হয়, ফুটবল অবশ্যই খেলবে, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা রাখার জন্য। কিন্তু বিজেপি সভাপতি যে মন্তব্য করেছেন তা অসম্মানজনক। কারণ তিনি বলেছেন, যাঁরা এমন কথা বলেন তাঁরা পড়াশুনো ঠিক করে করেননি, অল্প শিক্ষিত। তাই আমরা বলি, তাঁর এমন মন্তব্যের নিন্দা করি। আপনাকে ক্ষমতা চাইতে হবে। বাংলার আইকন ও মনীষীদের আক্রমণ করাই বিজেপির স্বভাব।’’ তৃণমূলের এমন আক্রমণের জবাব দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy