Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
BJP Protest

ধর্ম নিয়ে বিজেপির প্রস্তাব খারিজ, জারি বাংলাদেশ-প্রতিবাদও

সংবিধানে স্বীকৃত ধর্মাচরণের অধিকার বাংলায় মানা হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে আলোচনার জন্য বিজেপি শুক্রবার বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিল।

বিধানসভা চত্বরে বিজেপি বিধায়কদের প্রতিবাদ।

বিধানসভা চত্বরে বিজেপি বিধায়কদের প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:১৫
Share: Save:

রাজ্যে ধর্মাচরণের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগে তুমুল চাপানউতোর বাধল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির। সংবিধানে স্বীকৃত ধর্মাচরণের অধিকার বাংলায় মানা হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে আলোচনার জন্য বিজেপি শুক্রবার বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিল। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা খারিজ করে দেওয়ায় শাসক-বিরোধী তরজা বেধেছে। এরই প্রতিবাদে বিধানসভার বাইরে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কেরা রাজ্যের নানা ঘটনা ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ টেনে সরব হয়েছেন। বাংলাদেশকে ‘সার্বিক বয়কটের’ ডাকও দিয়েছেন শুভেন্দু। রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অত্যাচারের অভিযোগকে সামনে রেখে বাইরে যে প্রতিবাদ-আন্দোলন চলছে, তারই রেশ টেনে বিধানসভায় এই প্রস্তাব এনেছিল বিজেপি।

মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ, স্পিকার এই সিদ্ধান্ত জানানোর সময়েই উঠে দাঁড়িয়ে আপত্তি জানান শুভেন্দু। প্রস্তাবের মূল বক্তব্য কাটছাঁট করার অভিযোগে এবং সাম্প্রতিক কয়েকটি অশান্তির ঘটনাকে বিষয় করে তৈরি পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন শুভেন্দু-সহ বিরোধীরা। পাল্টা স্লোগান দেন শাসক দলের বিধায়কেরাও। কিছু ক্ষণ পরেই বিরোধীরা সভাকক্ষ ছেড়ে বিধানসভা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। অধিবেশনকে সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলে আরও একটি প্রস্তাব আনে তৃণমূল। স্পিকারও বিরোধীদের ভূমিকার নিন্দা করেন।

পরে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, ‘‘এই সরকারের শাসনে বারবার এক বিশেষ সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়কে ধর্মীয় আচরণে বাধা দিচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী, যে কোনও সম্প্রদায়ের স্বাধীন ভাবে ধর্মীয় আচরণের অধিকার রয়েছে। হিন্দু জনগোষ্ঠী এবং জনজাতিদের ধর্ম পালনে নিরাপত্তাহীনতার কথা যদি বিধানসভায় না আলোচনা করা যায়, তা হলে এর থেকে দুর্ভাগ্যের কী হতে পারে!’’ বিধানসভার বাইরে বেরিয়ে শুভেন্দু বাংলাদেশকে সব জায়গা থেকে সর্বাত্মক বয়কটের ডাকও দিয়েছেন। বাংলাদেশে ভারতের পতাকাকে অবমাননা করার অভিযোগকে সামনে রেখে কলকাতার এক চিকিৎসক বাংলাদেশের রোগী দেখবেন না বলে জানিয়েছেন। ওই উদাহরণ টেনে শুভেন্দুর আহ্বান, “দেশের প্রথিতযশা চিকিৎসক, ব্যবসায়ী-সহ অন্য ক্ষেত্রের সফলদের কাছে অনুরোধ, আপনারা সার্বিক ভাবে বাংলাদেশকে বয়কট করুন। ফরাক্কার উপর দিয়ে বিদ্যুৎ না গেলে বাংলাদেশের ৮০% জায়গা অন্ধকার হয়ে যাবে! আলু, পেঁয়াজের দাম এখনই কী? বাংলাদেশের এমন অবস্থা করুন, যাতে পাকিস্তানের মতো হাজার টাকা লিটার পেট্রল, চারশো টাকা কেজি আটা হয়ে যায়!” আগামী ১৬ ডিসেম্বর ‘বিজয় উৎসবের’ দিন সমাবেশ করে বাংলাদেশকে জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শুভেন্দু।

অধিবেশনে বিজেপি বিধায়কদের এ দিনের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, বাংলাদেশে ঘটনার প্রতিবাদ হওয়াই উচিত। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন জরুরি আরও বিষয়ে বিধানসভায় বিরোধী দলের ভূমিকা কী?

অন্য দিকে, তৃণমূলের সরকারকে ফের তোপ দেগেই বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন গাইঘাটায় মন্তব্য করেছেন, “বিশ্বের যেখানেই হিন্দুরা আক্রান্ত হবেন, তাঁদের সবার জন্য ভারতের দরজা খোলা থাকবে। তবে আমরা চাই বাংলাদেশের হিন্দুরা সে-দেশেই সম্মানের সঙ্গে থাকুন।”

বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের কাছে প্রতিবাদে আইএসএফ চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী।

বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের কাছে প্রতিবাদে আইএসএফ চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী। —নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে এ দিনও কলকাতায় আন্দোলন-বিক্ষোভ হয়েছে। শহরে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে আইএসএফ। পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যাতে কড়া হয়, সেই দাবি জানিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকা অবমাননার যে অভিযোগ উঠেছে, সেই প্রেক্ষিতে নওসাদ বলেছেন, “আমাদের পতাকা নিয়ে কেউ অবমাননা করবে এটা মেনে নিতে পারি না।”

মিলনের সংস্কৃতির পক্ষে সওয়াল করে হুগলির শ্রীরামপুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা, তাঁদের ধর্মীয় স্থান রক্ষার দাবিতে লাল ঝান্ডা মিছিল করছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে যা হয়েছে, ভারতে যাতে না হয়, সেই শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হচ্ছে মিলনধর্মী। বাংলাদেশেরও এটাই সহজাত।” প্রস্তাবিত ওয়াকফ-বিল নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলকে এক পঙ্‌ক্তিতে রেখেও সরব হয়েছেন সেলিম। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য যেমন সিন্ডিকেট গড়ে সব সম্পত্তি হস্তগত করতে চাইছে, তেমনই কেন্দ্র ১০ বছর ধরে গোটা দেশে ওয়াকফের সম্পত্তি বিক্রি ও লুট করছে। কেন্দ্র ও রাজ্য চাইছে আইন করে ওয়াকফ সম্পত্তি নিজেদের হাতে নিতে। তাই আইন পাল্টানোর কথা বলছে।” বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যাতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয় এবং এ দেশেও ‘প্ররোচনামূলক প্রচার’ বন্ধ হয়, সেই দাবি জানিয়ে সরব হয়েছেন সিটুর সর্বভারতীয় সভানেত্রী কে হেমলতা।

কলকাতায় আগেই শান্তি মিছিল করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। সব ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতির ডাক দিয়ে ব্লক ও টাউনে মিছিল করার জন্যও প্রদেশ নেতৃত্বের তরফে দলকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, ‘‘যে কোনও রাষ্ট্রের দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া, প্রাণ রক্ষা করা। সংখ্যাগুরুদেরও নৈতিক দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া। আমার দেশ বা তোমার দেশ বলে নয়, সর্বত্রই এই নীতি মেনে চলার পক্ষে আমরা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy