হাতির হামলায় মৃত ছেলে অর্জুনের ছবি চেয়ারে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে কাছেই বসে বাবা বিষ্ণু দাস। ছবি: সন্দীপ পাল
ছেলের স্কুল-পোশাক পরা ছোট্ট একটা ছবি। উঠোনে তুলসী মঞ্চের সামনে সাদা কাপড়ে ঢাকা চেয়ারের উপর রাখা। ফ্রেমে বাঁধানো সেই ছবির দিকে পিছন ফিরে বসে আছেন বাবা বিষ্ণু দাস। হাতির হামলায় মৃত ছেলে অর্জুনের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের কাজ চলছিল উঠোনে। রবিবার দুপুরে সেই অনুষ্ঠানের যাবতীয় ‘কর্তব্য’ পালন করে যাচ্ছিলেন পুরোহিতের কথা মতো, নীরবে। কিন্তু পাশেই রাখা ছবিটার দিকে এক বারও তাকিয়ে দেখছেন না। এক সময় পাশে বসা শ্যালককে বললেন, ‘‘কী করে দেখব বলো তো ওর ছবিটা? দেখো, স্কুলের ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে। এখনই যেন বলবে, বাবা, আমাকে স্কুলে দিয়ে এসো। সে দিনও তো বলেছিল।” বলতে বলতেই পরনের কাপড় দিয়ে চোখ মুছলেন।
গত বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের প্রথম দিন বাবার বাইকে চেপে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় জঙ্গল-পথে হাতি আছড়ে মেরেছিল অর্জুনকে। নীল প্যান্ট সাদা জামার স্কুল-পোশাকে অর্জুন সে দিন তাড়াহুড়ো করে খেয়ে পিঠে ব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বলেছিল, “বাবা, আমাকে স্কুলে দিয়ে এসো।” পরীক্ষার প্রথম দিন একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল। তাই বাবা তাড়াতাড়ি পৌঁছতে জঙ্গলপথ ধরেছিলেন। বাবা জানালেন, ওই ছবিটা কয়েক দিন আগে মোবাইল ফোনে অর্জুনের এক সহপাঠী তুলে দিয়েছিল। ঘটনার পরে হাসপাতালে ময়না তদন্ত করিয়ে শেষে বিকেলে অর্জুনকে শেষ বারের জন্য বাড়িতে আনা হয়েছিল। তখনও স্কুলের পোশাকই পরা ছিল। বলতে বলতে রুদ্ধ হয়ে আসে বাবার গলা। নিজেকে সামলানোর তাগিদে ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে লাগলেন উঠোন জুড়ে। পরিজন ও পড়শিদের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
এ দিন সকালে অর্জুনের বইখাতা গুছিয়ে রাখা হয়েছে পাশের তাকে। তবে ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারের টুকরো, নানা রকম বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। পড়াশোনার ফাঁকে সময় পেলেই এ সব দিয়ে নিজের মতো করে নানা জিনিস তৈরি করতে বসে যেত অর্জুন। দুপুরে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের শেষে সেই ঘরে গিয়েই বসলেন বাবা। কিছু ক্ষণ চুপচাপ উদাস চোখে ঘরটার চারদিক দেখলেন। বললেন, “ঘরটা এমনই থাকুক, যত দিন থাকে।”
ঘটনার তিন দিন পরে এ দিন প্রথম বাড়ি থেকে বেরোলেন বিষ্ণু দাস। কয়েকটা কাজে বাজারে যেতে হবে। উঠোনে রাখা বাইকে হাত দিয়ে যেন একটু কেঁপে উঠলেন তিনি। এই বাইকেই ছেলেকে দিতে যাচ্ছিলেন সে দিন। উঠোন থেকে রাস্তায় বাইক বার করতে করতে বিড়বিড় করে বললেন, “বাইকটা তেমনই আছে। শুধু ছেলেটাই থাকল না।”
এ দিকে, দলছুট কয়েকটি হাতিকে বৈকুণ্ঠপুর থেকে তাড়িয়ে মহানন্দা অভয়ারণ্যের দিকে সরিয়ে দিল বন দফতর। শনিবার থেকে শুরু করে রবিবার ভোর পর্যন্ত ওই অভিযান চালানো হয় বলে বন দফতর সূত্রে খবর। এগুলির একটিই গত বৃহস্পতিবার অর্জুনকে শুঁড়ে তুলে মেরেছিল বলে বন দফতর জানিয়েছে।
বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের বনাধিকারিক হরি কৃষ্ণন রবিবার বলেন, ‘‘তিনটি হাতিকে তিস্তা-মহানন্দা লিঙ্ক খাল পার করিয়ে মহানন্দা অভয়ারণ্যের দিকে পাঠানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy