তাপস পালের মরদেহের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্র সদনে বুধবার। নিজস্ব চিত্র
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্ত প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘অপরাধ করলে, আইন ভাঙলে বিচারে যদি কারও শাস্তি হয় হোক। কিন্তু দিনের পর দিন জেলে বন্দী করে রাখাটা কোন কৌশল?’’
প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ প্রয়াত তাপস পালকে শ্রদ্ধা জানাতে মমতা এদিন রবীন্দ্র সদনে যান। সেখানেই তাপসের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি-শাসকদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির অত্যাচার এবং লাঞ্ছনা- গঞ্জনা তাপসকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল। তাপস জানতেই পারল না, ওর কী অপরাধ। এই সূত্রেই তৃণমূলের প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদ এবং বর্তমান সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুর কথাও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, একইভাবে চাপের শিকার হয়ে মারা যান সুলতান। প্রসূনের উপরেও তদন্তকারীদের চাপ তাঁর স্ত্রী নিতে পারেননি। তাই তাঁরা তিনজনই অকালে চলে গেলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই কথাগুলি আগেও বলার চেষ্টা করেছি। অনেকে ভেবেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলছি। কিন্তু তা নয়।’’
মমতার এই বক্তব্যের পরেই একটি ফেসবুক পোস্টে অন্য বিতর্ক উসকে দিয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলে দাবি করে তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের চাপের মতোই এক কায়দায় তিনিও এখানে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশের হাতে হেনস্থার শিকার। সারদা মামলায় রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দল ( সিট) গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। রাজীব কুমার ছিলেন সেই দলের প্রধান। কুণাল লিখেছেন, তাঁকে তাঁর অসুস্থ মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পরে তাঁর মা যখন হাসপাতালে সঙ্কটজনক তখন দু’ঘন্টার প্যারোলে তিনি মায়ের কাছে যেতে পারেন। তবে ‘পুলিশের বাড়াবাড়ি’তে ২০ মিনিটের বেশি থাকতে পারেননি। কুণাল জামিন পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। প্রাক্তন সাংসদের অভিযোগ, তাঁর মা-ও মানসিক চাপের শিকার হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআইয়ের মতো এজন্সিগুলিকে ব্যবহার নিয়ে এদিন মমতার অভিযোগের ঝাঁঝ ছিল অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘‘তাপস পালের মৃত্যু আবার প্রমাণ করল এজেন্সির অত্যাচার তাঁকে মানসিরকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল। মানসিকভাবে আহত, ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিলেন। অকালে তাঁর মৃত্যু হল।’’ এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘সুলতান আহমেদের মৃত্যুর পরে ওঁর বাড়ির লোকেদের কাছে শুনেছি, তিনি একটা চিঠি পেলেন। একটা ফোন পেলেন। তারপরই বাথরুমে মারা গেলেন।’’ একইভাবে সামাজিক অসম্মান সহ্য করতে না পেরে হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী’র মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলা চলচ্চিত্রের শিল্পী-কলাকুশলীদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছেন না।’’ তিনি বলেন, ‘‘শিল্পীরা অনেকে প্রোডাকশনে, বিভিন্ন চ্যানেলে কাজ করেন অথবা ব্র্যান্ড অ্যাম্বারস্যাডর হয়ে কাজ করেন। সেই কাজ করতে গিয়ে যদি অকালে প্রাণ চলে যায়, তা কি ঠিক?’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘সুদীপদাকে ( সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) জিজ্ঞেস করে জেনেছি, একটি সংস্থার বিনোদন চ্যানেলের ডিরেক্টর হিসেবে তাপস বেতন নিয়েছেন। শুধু বাংলার নয়, দেশের প্রথম সারির অভিনেতা তাপসকে একবছর একমাস জেল খাটতে হয়েছে। আজ তাপসের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। সুলতানের মৃত্যুর পরও আমি দেখিনি।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগে চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলা সিনেমার এই প্রযোজকও এখন ভুবনেশ্বরের জেলে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘শ্রীকান্ত মোহতাও তো একবছর হয়ে গেল জেলে। বাংলা সিনেমা করতেন। অন্যায় করে থাকলে বলার কিছু নেই। কিন্তু খুনের অভিযোগেও তো তিন মাসে চার্জশিট দিতে হয়। ওরও স্ট্রোক হয়ে গেছে। ওর ও শরীর ভাল নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy