Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫
Jaynagar rape-murder case

ফাঁসির সাজা জয়নগরে নাবালিকা ধর্ষণ-খুনের মামলায়! ৬৩ দিনের মধ্যে রায়দান নিম্ন আদালতের

জয়নগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় বৃহস্পতিবার মূল অভিযুক্ত মুস্তাকিন সর্দারকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল বারুইপুর আদালত। এর পর শুক্রবার দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারক।

জয়নগরকাণ্ডে দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনাল বারুইপুর আদালত।

জয়নগরকাণ্ডে দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনাল বারুইপুর আদালত। —প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৭
Share: Save:

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া মুস্তাকিন সর্দারকে ফাঁসির সাজা শোনাল বারুইপুর আদালত। বৃহস্পতিবার ওই মামলায় মূল অভিযুক্ত মুস্তাকিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বারুইপুরের ফাস্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজেস কোর্টের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। এর পর শুক্রবার রায় ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি, মৃতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

মামলার রায়দানের পর সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নৃশংস ঘটনা। বিরল ঘটনা। তাই ফাঁসির আবেদন করেছিলাম আমরা। বিচারক দোষীকে ফাঁসির সাজাই দিয়েছেন। এই মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ডিএনএ প্রোফাইল মিলে গিয়েছে। ফলে সন্দেহের আর কোনও অবকাশই থাকে না।’’

আরজি করের আন্দোলনের আবহে প্রকাশ্যে এসেছিল জয়নগরের ঘটনা, যার জেরে বিস্তর শোরগোলও পড়েছিল প্রাথমিক ভাবে। জয়নগরে নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন আরজি করের আন্দোলনকারীরাও। শুধু তা-ই নয়, ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চের সামনে নির্যাতিতা নাবালিকার ‘প্রতীকী মূর্তি’ও রাখা হয়েছিল। ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’-এর পাশাপাশি ‘জাস্টিস ফর জয়নগর’ স্লোগানও উঠেছিল। অন্য দিকে, চার মাস কেটে গেলেও আরজি কর-কাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া এখনও চলছে। ওই মামলার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছিল সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই শিয়ালদহ আদালতে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে। শুরু হয়েছে বিচারপ্রক্রিয়া। অন্য দিকে, মাত্র ৬৩ দিনের মাথায় বিচার এল জয়নগরকাণ্ডে।

জয়নগরের ঘটনায় দোষীর ফাঁসির সাজা হতেই এক্স হ্যান্ডলে রাজ্য পুলিশের তরফে একটি পোস্ট করা হয়। লেখা হয়, ‘‘জাস্টিস ফর জয়নগর!’’ পাশাপাশিই লেখা হয়েছে, ‘‘এই রায় নজিরবিহীন। নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় ঘটনার মাত্র ৬৩ দিনের মধ্যে অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশ এর আগে পশ্চিমবঙ্গে কখনও ঘটেনি। এই মামলার তদন্তে আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব নির্যাতিতা এবং তার পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়া। মেয়েটি আর ফিরবে না। কিন্ত যে অভূতপূর্ব দ্রুততায় তাকে এবং তার পরিবারকে আমরা ‘জাস্টিস’ দিতে পেরেছি, দীর্ঘ দিন বিচারহীন থাকতে হয়নি, এটুকুই আমাদের সান্ত্বনা, আমাদের প্রাপ্তি।’’

গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ওই নাবালিকা। মেয়ে বাড়ি না-ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের লোকজন। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়া হয় প্রথমে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও ওঠে। এর পর গভীর রাতে বাড়ির কাছের জলাজমি থেকে মেলে মেয়েটির দেহ। ওই রাতেই গ্রেফতার হয় মোস্তাকিন। পরের দিন সকালে পুলিশ, স্থানীয় নেতারা এলাকায় গেলে, তাঁদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। হামলা চলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতেও। ঘটনার পরে প্রাথমিক ভাবে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে পকসো ধারা যুক্ত করা হয়। ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে শাস্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করা হয়। ঘটনার ২৬ দিন পর, গত ৩০ অক্টোবর চার্জশিট পেশ করে তদন্তকারী দল। ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মোট ৩৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল ওই মামলায়।

শুক্রবার সকালে বছর উনিশের মোস্তাকিনের সাজার মেয়াদ নিয়ে শুনানি ছিল। সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে লকআপ থেকে আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অপরাধীকে। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় শুনানি। দু’পক্ষের আইনজীবী এবং দোষীর বক্তব্য শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারক। এর পর বিকেলে রায় ঘোষণা করেন তিনি।

সকালে শুনানি শুরু হতেই বিচারক মুস্তাকিনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সাজার ব্যাপারে তাঁর কিছু বলার আছে কি না? জবাবে মুস্তাকিন জানান, তিনি নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুন করেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ কাজ করিনি। বাবা, মায়ের এক মায়ের সন্তান। বাবা অসুস্থ। আমি ছাড়া ওঁদের দেখার কেউ নেই। যদি পারেন, আমাকে মাফ করবেন। অভাবের কারণে আমি কাজ করতাম। বাবা, মাকে দেখার কেউ নেই।’’ মুস্তাকিনের আইনজীবীও বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বাবা অসুস্থ হওয়ার পর পড়াশোনা ছেড়ে কাজ শুরু করেছিল মুস্তাকিন। সেই সময় সে নাবালক। ওর বিরুদ্ধে আগে কোনও মামলা নেই। ও জড়িতও নয়। পরিবারের কথা বিবেচনা করবেন । ওর বয়স বিবেচনা করে ওকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ দিন।’’

পাল্টা দোষীর ফাঁসির দাবি জানিয়েছিলেন বিশেষ সরকারি আইনজীবী। তাঁর বক্তব্য, মুস্তাকিনকে যে যে ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে চারটি ধারায় সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি। বছর কুড়ি পর যদি অপরাধী বাইরে বেরিয়ে আসেন, তখন সমাজে কী প্রতিক্রিয়া হবে? সরকারি আইনজীবী বিভাস বলেন, ‘‘মেয়েটি বিশ্বাস করে ওর (অপরাধীর) সাইকেলে উঠেছিল। এর পর মেয়েটিকে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করেছে! এটা পূর্বপরিকল্পিত। মুখ টিপে, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে শক্ত জমির উপর বার বার মাথা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির শরীরে ৩৮টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। নৃশংস ঘটনা! একে ক্ষমা করা হলে ভবিষ্যতে আবার ঘটবে এই ধরনের ঘটনা।’’ সরকারি আইনজীবীর বক্তব্যে আরজি করের নিহত মহিলা চিকিৎসকের প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল। শেষমেষ সরকার পক্ষের আইনজীবীর ফাঁসির আবেদনেই সাড়া দিলেন বিচারক।

অন্য বিষয়গুলি:

jaynagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy