Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

অভাবের শিকল নিয়েই লড়ছে ছয় কন্যা

কালনার পটিলক্ষ্মণপাড়ার মালবিকা ঘোষের ইচ্ছা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। এ বার মহিষমর্দিনী গার্লস ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিকে ৬৫৭ পেয়েছে সে।

মৌলি কোনার-মালবিকা ঘোষ-সুপর্ণা ঘোষ(উপরে) রূপালি পাল-দীপান্বিতা রক্ষিত-যমুনা মালো। (নীচে)

মৌলি কোনার-মালবিকা ঘোষ-সুপর্ণা ঘোষ(উপরে) রূপালি পাল-দীপান্বিতা রক্ষিত-যমুনা মালো। (নীচে)

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৪
Share
Save

টিনের চাল দেওয়া পুরনো দিনের দেড়তলা বাড়ি। বাবা ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতে সামান্য বেতনের অস্থায়ী কর্মী। তবে এ সব বাধা বেড়ি পরাতে পারেনি কুলচণ্ডা গ্রামের মৌলি কোনারকে। মাধ্যমিকে ৬৬২ নম্বর পেয়ে পরিবার, গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছে ভাতার গার্লস হাইস্কুলের এই ছাত্রী। বাবা অমর কোনার জানান, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চার জনের সংসার। মৌলির বরাবরই পড়াশোনায় খুব আগ্রহ। অমরবাবু বলেন, ‘‘নিজেরা শাক-ভাত খেয়েও মেয়ের জন্য বইপত্র জোগাড় করেছি। স্থানীয় দু’জন শিক্ষক খুব সাহায্য করেছেন। আমরা চাই মৌলিও বড় হয়ে দশ জনের জন্য কিছু করুক।’’ মৌলি জানায়, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে চিকিৎসক হতে চায় সে। তবে সাধ আর সাধ্যের ফারাক দূর হবে কী করে, জানা নেই তার। ভাতার গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা আবেদা বেগম বলেন, ‘‘মৌলি ভীষণ মনোযোগী। আমি নিশ্চিত ও সফল হবে। স্কুল সবসময় পাশে থাকবে ওর।’’

কালনার পটিলক্ষ্মণপাড়ার মালবিকা ঘোষের ইচ্ছা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। এ বার মহিষমর্দিনী গার্লস ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিকে ৬৫৭ পেয়েছে সে। বাবা সঞ্জয় ঘোষ জানান, কালনা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি জ়েরক্সের দোকান চালান তিনি। সংসার চালাতে বিড়ি বাঁধেন স্ত্রী সোমাদেবী। তবে ছোট থেকেই অভাবে বিচলিত না হয়ে পড়াশোনা আর গানকে সঙ্গী করে নিয়েছে মালবিকা। তবে মেয়ের ভাল ফল চিন্তা বাড়িয়েছে তাঁদের। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর খরচ জোগানো মুখের কথা নয়, মেনে নিচ্ছেন দু’জনেই। মালবিকা অবশ্য বলে, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকটা আগে পাশ করি। নিশ্চয় কিছু উপায় হবে।’’

মন্তেশ্বর বাজারের পূর্ব হাটপাড়ার সুপর্ণা ঘোষের ছিটেবেড়ার বাড়ির এক দিকের দেওয়াল পড়ে গিয়েছে বহু দিন। কিন্তু ‘লকডাউন’-এ কাজ না থাকায় সারাতে পারেননি বাবা হরিসাধন ঘোষ। পলিথিনের আড়ালেই দাদু, ঠাকুমা, মা, বাবার সঙ্গে বাড়ছে সুপর্ণা। মা মন্দিরা ঘোষ জানান, মন্তেশ্বরের সতী কৃষ্ণমণি গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে ৬৪৪ পেয়েছে মেয়ে। তবে খুশির থেকেও ভবিষ্যতের চিন্তা নিয়ে ঘুম উড়েছে তাঁর। হরিসাধনবাবু বলেন, ‘‘সবে কাজে যোগ দিয়েছি। পাঁচ জনের সংসার চালিয়ে মেয়ের দিকে সে ভাবে নজর দিতে পারিনি। ও নিজেই লড়েছে।’’ সুপর্ণা জানায়, বড় হয়ে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায় সে।

মাকে সাহায্য করতে নিয়মিত মাঠে ছাগল চরাতে যায় আউশগ্রামের অমরপুর গ্রামের রূপালি পাল। বাবা মানসিক ভাবে অসুস্থ হওয়ায় দুই মেয়ে, সংসারের ভার মা সারদা পালের কাঁধে। বাড়ির সব কাজ করেও পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়নি রূপালি। সেই পরিশ্রমেই আদুরিয়া দিবাকর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে ৬০৬ পেয়েছে সে। রূপালি জানায়, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাড়া গ্রামের দুই গৃহশিক্ষক বিনা পয়সায় পড়াতেন তাকে। সবার সাহায্যেই সফল হয়েছে সে। সারদাদেবী বলেন, ‘‘স্বামী অসুস্থ। সামান্য জমি আর ছাগল পালন করেই সংসার টানি। মেয়েরাই সব দেখে। তবে রূপালিকে আর পড়াতে পারব কি না, জানি না।’’ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন আদুরিয়া দিবাকর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ।

লড়াই কম নয় কালনা শহরের বড়মিত্রপাড়ার দীপান্বিতা রক্ষিতের। মাধ্যমিকে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় থেকে ৫৯৭ পেয়েছে সে। এক তলা বাড়িতে চার জনের সংসার। মা বন্দনা রক্ষিত জানান, স্বামী বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্যাস ওভেন সারান। তা-ও রোজ থাকে না। মেয়েকে আরও পড়ানো, তাঁদের কাছে চিন্তার। দীপান্বিতা বলে, ‘‘অর্থনীতি নিয়ে পিএইচডি করে সরকারি চাকরি আমার লক্ষ্য। হার মানব না কিছুতেই।’’

নাছোড় কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাতগাছিয়ার শতপটি মালোপাড়া এলাকার যমুনা মালো। এ বার উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞানে ৪৭৭ পেয়েছেন তিনি। ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেললাইনের পাশে টিনের বাড়িতে বাবা-মা, চার বোনের সংসার। বাবা মন্টুলাল মালো আড়ত থেকে মাছ কিনে সাইকেলে করে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। ধান ঝাড়ার কাজ করেন মা। পড়ার ফাঁকে প্লাস্টিকের মালা তৈরি করেন যমুনাও। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসক হতে চাই। তবে কী ভাবে হবে জানি না।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহাররঞ্জন সাহা জানান, মেধাবী যমুনা ঠিকঠাক পরিবেশ পেলে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

Higher Secondary results 2020 HS results

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।