সন্তানকে নিয়ে টোটোয় সুস্মিতা। নিজস্ব চিত্র ।
বছর দেড়েক আগে মারা গিয়েছেন স্বামী। মাস দুয়েক আগে মারা গেলেন বাবাও। বাড়িতে অসুস্থ মা আর চার বছরের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সন্তান। সংসারের হাল ধরতে সন্তানকে বুকে বেঁধে বাবার রেখে যাওয়া টোটো নিয়েই বেরিয়ে পড়েছেন ভাতারের সুস্মিতা রোম। শিখতে সময় লেগেছে। মহিলা টোটো চালক দেখে যাত্রীরাও উঠতে ইতস্তত করেছেন। কিন্তু সবার সামনে দিয়েই দৃঢ় হাতে টোটো চালিয়ে গিয়েছেন সুস্মিতা। এখন অনেকেই তাঁকেই খোঁজেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, এলাকায় প্রথম মহিলা টোটোচালকের পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
বছর আঠাশের সুস্মিতা জানান, তাঁরা দুই বোন ও এক ভাই। বছর পাঁচেক আগে পার্শ্ববর্তী ভূমশোর গ্রামে একটি গাছে ঝুলন্ত দেহ মেলে ভাইয়ের। দুই বোনেরই বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু সুস্মিতার শ্বশুরবাড়ি সুখের হয়নি। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সন্তান জন্মের পরে বাপের বাড়ি ফিরে স্থায়ী ভাবে থাকতে শুরু করেন তিনি। বছর দেড়েক আগে স্বামীর মৃত্যুর খবর আসে।
টোটোচালক বাবা রতন রোমই স্ত্রী, কন্যা ও নাতিকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। মাস দুয়েক আগে হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু পর সব দায়িত্ব নিতে হয় সুস্মিতাকে। তিনি বলেন, “গ্রামের এক জনের কাছে টোটো চালানো শিখে বেরিয়ে পড়ি। প্রথম প্রথম অনেকেই আমার টোটোয় চড়তে ভয় পেতেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সে সমস্যা মিটেছে। এখন গ্রামের সকলেই গ্রাম থেকে বাজার, স্টেশন কিংবা ডাক্তারখানা যেতে আমাকেই খোঁজেন। দিনে ১৫০-২০০ টাকা রোজগার হয়ে যায়।”
তিনি আরও জানান, এর মধ্যে টোটোর কিস্তি বাবদ কিছু টাকা তুলে রাখতে হয়। তার পর মায়ের চোখের চিকিৎসার খরচ রয়েছে। মায়ের চোখের সমস্যা থাকায় ছেলেকে বাড়িতে রেখে আসতে পারেন না তিনি। তাই বুকে বেঁধেই টোটো চালান। ছেলেও মায়ের সঙ্গে পথেই কাটায় দিন। সুস্মিতা বলেন, “অন্য টোটো চালকেরা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন।” অরূপ রায়, তরুণ চট্টোপাধ্যায়, রাজিব শেখদের মতো টোটোচালকেরা বলেন, “সুস্মিতার লড়াইকে আমরা কুর্নিশ জানাই। প্রশাসনিক সহযোগিতা পেলে পরিবারটা রক্ষা পায়।”
খড়ের চালের দু’কুঠুরির মাটির বাড়ি তাঁদের। কিন্তু আবাস যোজনায় এখনও নাম আসেনি রতনের পরিবারের। স্থানীয় ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রুপালি ঘোষ বলেন, “কয়েক বছরের পুরনো তালিকা অনুযায়ী নাম এসেছে। কেন ওঁদের নাম নেই, বলতে পারব না। তবে সরকার নতুন তালিকা নিলে ওঁদের নাম অগ্রাধিকার পাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy