Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
CPM

বাস, গাড়িতে ভাঙচুর

দুর্গাপুরে খয়রাশোল পেট্রল পাম্পের কাছে এ দিন সকালে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’টি লেনে বসে পড়েন সিটু-র কর্মী, সমর্থকেরা।

উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার খড়্গপুরগামী বাসে যাত্রীদের নামিয়ে ভাঙচুর। বুধবার দুর্গাপুরে। ছবি: বিকাশ মশান

উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার খড়্গপুরগামী বাসে যাত্রীদের নামিয়ে ভাঙচুর। বুধবার দুর্গাপুরে। ছবি: বিকাশ মশান

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২০
Share: Save:

শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারাণ ধর্মঘট উপলক্ষে জেলার নানা প্রান্তে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটেছে বুধবার। তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও তৈরি হয়েছে জেলায়। দুর্গাপুরে বাস, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, আসানসোলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোর করে দোকান খোলানোর অভিযোগ উঠেছে।

দুর্গাপুরে খয়রাশোল পেট্রল পাম্পের কাছে এ দিন সকালে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’টি লেনে বসে পড়েন সিটু-র কর্মী, সমর্থকেরা। এই সময়ে উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার খড়্গপুরগামী একটি বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে সামনের কাচের জানলা ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতেই রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের একটি গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। এই সময়ে বিজেপির শিক্ষক নেতা চিরঞ্জিৎ ধীবর মোটরবাইক নিয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, স্কুলে যাওয়ার পথে খয়রাশোলের কাছে ধর্মঘটের সমর্থকেরা তাঁকে হেনস্থা করেন। গৌর রুইদাস নামে এক মোটরবাইক আরোহীকে পুলিশের সামনেই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। জখম গৌরবাবুকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। বিজেপির দাবি, গৌরবাবু তাঁদের দলের কর্মী। হামলা চালায় সিপিএম, সিটু। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাম নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে ব্যাপক যানজট হয়। পুলিশের বড় বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স এসে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক জাতীয় সড়কের ওই দুই লেনে যান চলাচল বন্ধ ছিল। ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত জানান, বাস ভাঙচুর ও মোটকবাইক আরোহীকে মারধরের অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিটু নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। তৃণমূলের পুলিশ এখন বিজেপির হয়ে কাজ করছে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন দুপুর সাড়ে ১১টা নাগাদ তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও দলের নেতা রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক সদস্য, সমর্থক হাতে লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে আসানসোল মূল বাজারের দোকানপাট জোর করে খোলানোর চেষ্টা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীরও অভিযোগ, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আসানসোলের রাহা লেন থেকে বস্তিন বাজার পর্যন্ত এলাকায় ওই দলটি ‘অভিযান’ চালায়। কিন্তু বস্তিন বাজার এলাকায় ‘বাধাপ্রাপ্ত’ হয় দলটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বস্তিন বাজারের ব্যাবসায়ীদের একাংশ ওই দলটিকে জানান, ধর্মঘটের অন্যতম বিষয় জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ও নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা। তাই ধর্মঘট সমর্থন করে তাঁরা দোকান খুলবেন না। এর পরেই তৃণমূল কর্মী, সমর্থক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ ওই এলাকায় যান জিতেন্দ্রবাবু। সেখানে মেয়র জিতেন্দ্রবাবুর কাছে ক্ষোভপ্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি, জোর করে দোকান খোলানোরও অভিযোগ করেন তাঁরা। জিতেন্দ্রবাবু আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট ভাঙতে এসেছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের জেলা-নেতা। মানুষ তাঁদের প্রতিহত করেছেন।’’ তবে জিতেন্দ্রবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের কেউ লাঠি, হকিস্টিক হাতে জোর করে দোকান খোলাতে যাননি। সিপিএমের কিছু লোকজন সকাল থেকে জোর করে দোকান বন্ধ করেছেন। আমরা বরং ব্যবসায়ীদের জানিয়েছি, তাঁরা দোকান বন্ধ করতে চাইলে আপত্তি নেই। কিন্তু কেউ দোকান খুলতে চাইলে আমরা পাশে আছি।’’

দুর্গাপুরের কনিষ্ক মোড় এলাকা, বেনাচিতি ঘোষ মার্কেট এলাকায় রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে সিটু ও সিপিএমের অশান্তি হয়েছে। আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জোর করে মানুষকে ধর্মঘটে বাধ্য করা যাবে না। আমরা তাই প্রতিবাদ করেছি নানা জায়গায়। কলকারখানা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।’’

এ দিন সকালে রানিগঞ্জের নেতাজি সুভাষ বসু রাস্তার নেতাজি মূর্তির সামনে সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্তের নেতৃত্বে অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বচসা হয়। একই সময়ে এই রাস্তার রাজবাড়ি মোড়ে সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপালবাবুর নেতৃত্বে ঘণ্টাখানেক অবরোধ হয়। পরে দুপুর ১২টা নাগাদ হাটিয়াতলাও এলাকায় বিজেপির কর্মীরা বাইক মিছিল করে ধর্মঘটেরর বিরোধিতা করতে গেলে পুলিশ তাঁদের আটকায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bandh Trade Union CPM Congress Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE