ক্রেতার দেখা নেই। সুনসান চৈত্রসেলের বাজার। নিজস্ব চিত্র
কোথাও কেনাকাটায় ছাড় মিলছে ৪০ শতাংশ। কোথাও ৫০ শতাংশ। কোথাও আবার একটি কিনলে একটি মিলবে বিনামূল্যে। এত লোভনীয় ছাড়েও সাড়া দিচ্ছেন না ক্রেতারা। কালনায় এখনও ঝিমুনি রয়েছে চৈত্র সেলের বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতা, উভয়েরই দাবি, হাতে নগদের জোগান কমেছে। তার প্রভাব পড়েছে কেনাকাটায়।
চৈত্র সেলের বাজারে কালনা শহর এবং আশপাশের দোকানে মিলছে নানা অফার। শুরু হয়েছে ইদের কেনাকাটাও। পয়লা বৈশাখে নতুন পোশাক পরে হালখাতা করার রেওয়াজ রয়েছে বহু পরিবারে। নববর্ষে পরিবারের সদস্যদের জন্য বহু মানুষ পোশাক কেনেন। বাজার ধরতে ব্যবসায়ীরা এই সময় কেনাকাটায় আকর্ষণীয় ছাড় দেন। অনেকে সারা বছর জমে থাকা পোশাক কম দামেও বিক্রি করেন। ফুটপাতে অনেকে শাড়ি, ফ্রক, চুড়িদার, জুতো-সহ নানা সামগ্রী বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত দু’বছর করোনার থাবায় বাজারে মন্দা ছিল। এ বার সংক্রমণ না থাকলেও এখনও পর্যন্ত বড় দোকান এবং ফুটপাতে সেলের বাজার তেমন জমেনি। ইদের কেনাকাটা শুরু হলেও কম সংখ্যক ক্রেতা এখনও পর্যন্ত বাজারে এসেছেন।
কেন এমন পরিস্থিতি? ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজার শহরের মধ্যে হলেও, ক্রেতদের বড় অংশ আসেন গ্রামাঞ্চল থেকে। সেলের বাজার অনেকটাই নির্ভর করে চাষিদের আর্থিক অবস্থার উপরে। এ বছর সদ্য জমি থেকে ওঠা আলু-পেঁয়াজের তেমন দাম পাননি চাষিরা। অনেককেই লোকসানে ফসল বিক্রি করতে হয়েছে। ফলে হাতে নগদের জোগান কমেছে গ্রামাঞ্চলে। এর প্রভাব পড়েছে চৈত্র সেল এবং ইদের বাজারে।
কালনা শহরের বৈদ্যপুর মোড় লাগোয়া একটি মলের মালিকপক্ষের তরফে আশিস হালদার বলেন, ‘‘চৈত্র সেল এবং ইদ এক সঙ্গে থাকায় এ বার বিক্রি ভাল হবে বলে আশা করা গিয়েছিল। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য নানা অফারও দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিক্রি আহামরি কিছু হয়নি এখনও পর্যন্ত। যাঁরা দোকানে আসছেন, তাঁদের বাজেট কম। মনে হচ্ছে, ফসলের লাভজনক দাম না পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের ক্রেতাদের হাতে অর্থের জোগান কমেছে। সে কারণেই এই পরিস্থিতি।’’
অনুমান যে অমূলক নয়, তা বোঝা গিয়েছে ক্রেতাদের বক্তব্যেও। প্রত্যেক বছর চৈত্র সেলে আত্মীয়দের জন্য পোশাক কেনেন কালনা ১ ব্লকের বাসিন্দা কমল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আলু বিক্রি করে যে টাকা হাতে এসেছিল, তা মহাজনদের ঋণ মেটাতেই চলে গিয়েছে। সে কারণে এখনও পর্যন্ত চৈত্র সেলের কেনাকাটা করতে পারিনি।’’ আর এক বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘‘ইদের কেনাকাটা করতেই হবে। হাতে নগদ কম থাকায় এ বার বাজেট কমিয়েছি।’’ কালনা শহরে শিমুলতলা এলাকায় প্রত্যেক বার চৈত্র সেলের বাজার বসে। অনেক বেকার যুবক এই সময় দোকান খোলেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসা সমীর দেবনাথ, দুলাল মাঝি, পুতুল সরকার-রা জানান, মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে তাঁরা জিনিস বিক্রি করেন। এ বার এখনও পর্যন্ত বিক্রি খুবই কম। তাদের দেখা তেমন মিলছে না। ফসলের দাম কমার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে তাঁদের আশা, এপ্রিলের গোড়ার দিকে বাজার কিছুটা চাঙ্গা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy