মাঝ রাতে পানাগড়ে দুষ্কৃতীদের গাড়ির ধাক্কায় এক তরুণীর মৃত্যুতে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মৃতার সহকর্মীরা সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অন্য একটি গাড়িতে করে কয়েক জন যুবকের ধাওয়া করা ও উত্ত্যক্ত করার যে অভিযোগ তুলেছেন, তাতেই সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ যদিও ঘটনাটিকে ‘রেষারেষির জেরে দুর্ঘটনা’ বলে দাবি করেছে। তবে দু’টি গাড়ি প্রায় কুড়ি কিলোমিটার ধরে রেষারেষি করলেও, সড়কে টহলদার পুলিশের কেন নজরে পড়ল না, সে প্রশ্ন উঠেছে।
রবিবার মাঝ রাতে গলসির পারাজের কাছাকাছি জায়গা থেকে পানাগড়ের রাইসমিল রোড পর্যন্ত ওই দুই গাড়ি পাল্লা দিয়ে দৌড়য়। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে বুদবুদ থেকে পানাগড় পর্যন্ত একটি গাড়ি যদি অন্য গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে ছোটে, তা কারও নজরে এল না কেন? যদি নজরদারি থাকত, তা হলে হয়তো সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় নামে ওই যুবতীর প্রাণ যেত না। জাতীয় সড়কে পুলিশের টহলদারি মাঝে মাঝে নজরে এলেও তা যে পর্যাপ্ত নয়, এ দিনের ঘটনায় তা প্রমাণ হয়ে গেল বলে দাবি এলাকাবাসীর। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বিস্তৃত জাতীয় সড়কের সর্বত্র পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। বিশেষ কিছু জায়গায় পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। কোনও খবর পেলে দৌড়ে যায়। তা ছাড়া, মাঝে মাঝে টহল দেয়। কোনও অস্বাভাবিক কিছু নজরে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
জাতীয় সড়কে এই দুর্ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির পাশাপাশি, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তাঁদের বক্তব্য, জাতীয় সড়কে মানুষ যাতায়াত করেন টোল দিয়ে। ফলে, নিরাপদ সফর নিশ্চিত করা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, জাতীয় সড়কে কেউ বিপদে পড়লে কর্তৃপক্ষের তরফে বিশেষ কর্মীরা দ্রুত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। সে জন্য ১০৩৩ নম্বর রয়েছে। এই ফোন নম্বরের মাধ্যমে কন্ট্রোল রুমে কোনও খবর পেলেই তা সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেন। দরকার হলে সেই এলাকার পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে। তবে রবিবার মধ্য রাতে ঘটনার সময়ে বুদবুদ-পানাগড় এলাকা থেকে ওই নম্বরে কোনও ফোন যায়নি বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সড়কে গড়ে প্রতি কিলোমিটারে একটি করে সৌরশক্তি চালিত সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গাতেই কাজ হয়ে গিয়েছে। তবে বুদবুদ-পানাগড় অংশে এখনও সেই কাজ হয়নি বলে দাবি তাঁর।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)