Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Pradhan Mantri Awas Yojana

আবাস তালিকায় প্রধানের স্বামী, নেতার মায়ের নাম

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ সালে রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘গীতাঞ্জলি’ থেকে ৭০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদানে ঘর পেয়েছিলেন প্রধানের শাশুড়ি গীতা রায়।

তালিকায় এই বাড়ির সদস্যের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

তালিকায় এই বাড়ির সদস্যের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
মেমারি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২৯
Share: Save:

পরিবারের কেউ সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়ে থাকলে, তাঁর নাম ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র উপভোক্তা তালিকায় থাকবে না, নিয়ম তেমনই। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ১ ব্লকের দুর্গাপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান শিখা রায়ের পরিবার দু’বার সরকারি প্রকল্পের টাকা পেয়েছে। এ বারও তাঁর স্বামী সুরেশ রায়ের নাম রয়েছে ‘আবাস প্লাস’ প্রকল্পে। বারবার সমীক্ষা করার পরেও খসড়া তালিকায় কী ভাবে প্রধানের পরিবারের নাম উঠল, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়। পরপর এ ধরনের অভিযোগ উঠতে থাকায় অস্বস্তিতে পড়ছে শাসক দল।

বিডিও (মেমারি ১) মহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ বলেন, “খসড়া তালিকায় কিছু ভুল রয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা বার করার আগে ভুল সংশোধন করে নেওয়া হবে। যোগ্যদের নামই আবাস প্লাসের তালিকায় থাকবে।’’

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ সালে রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘গীতাঞ্জলি’ থেকে ৭০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদানে ঘর পেয়েছিলেন প্রধানের শাশুড়ি গীতা রায়। কয়েক বছর আগে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার’ প্রথম পর্যায়, ‘আবাস সফ্‌ট’-এ বাড়ি তৈরির জন্য আর্থিক অনুদান পায় পরিবারটি। অভিযোগ, সে টাকায় বাড়ি করা হয়নি। ব্লক প্রশাসনও বাড়ি তৈরির জন্য ‘চাপ’ দেয়নি বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি। এরই মধ্যে, প্রধানের স্বামী সুরেশ রায়ের নাম আবাস প্লাসের উপভোক্তা তালিকায় (আইডি: ১২১৩৪৭৫০২) রয়েছে। প্রকল্পের খসড়া তালিকার ২১৫৬ নম্বরে রয়েছে তাঁর নাম। তাঁর বাড়ি ‘কাঁচা’ বলে দেখানো হয়েছে।

প্রধান অবশ্য স্বীকার করেছেন, তাঁর শাশুড়ির নামে ‘গীতাঞ্জলি’ ও ‘আবাস সফ্‌ট’ প্রকল্পে সরকারি অনুদান এসেছিল। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করা হলেও, পরেরটির টাকায় তা হয়নি। তাঁর দাবি, “স্বামী খুবই অসুস্থ। ভিন্‌ রাজ্যে চিকিৎসার জন্য বাইরে থাকতে হয়েছিল। সংসার চালানোর ক্ষমতা নেই, সে জন্য বাড়ি করা হয়নি। এ বার আমার স্বামীর নাম আবাস প্রকল্পে রয়েছে। শাশুড়ির সঙ্গে ১০ বছর কোনও সম্পর্ক নেই। এ বার সরকার যা ভাল বুঝবে, সেটাই করুক।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পঞ্চায়েতের বড়রগ্রামে তৃণমূল নেতা অভিজিৎ ভট্টাচার্যের তিন তলা বাড়ি। এলাকাবাসীর অনেকের দাবি, অভিজিতের বাড়িতে গাড়িও রয়েছে। তার পরেও তাঁর মায়ের নাম আবাস প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকায় রয়েছে। অভিযোগ, ওই গ্রামে দু’টি কাঁচা বাড়িতে বাস করা পরিবারকে প্রকল্পের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, “নেতার মায়ের নাম তালিকায় রাখতে গিয়ে ষড়যন্ত্র করে ওদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।’’

রবিবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ওই নেতার মা ই-মেল করে মহকুমা প্রশাসনকে তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হোক। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “আমার ধারণা, আমাকে অপদস্থ ও হেনস্থা করতেই এটা করা হয়েছে।’’ স্থানীয় ওই তৃণমূল নেতার দাবি, “আমার ধারণা, সমীক্ষা রিপোর্টে ভুল করা হয়েছে। তা না হলে আমার মায়ের নাম ওই তালিকায় থাকে? ব্লক প্রশাসনের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির ইন্ধনে এ রকম করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’

বিজেপি যদিও এই দাবি ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। ওই পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান নিতাই ঘোষের সাফ দাবি, “প্রভাব খাটিয়ে আবাস প্রকল্পে নাম তোলা হয়েছে। তা না হলে তিন তলা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও, বা সরকারি প্রকল্পে অনুদান পাওয়ার পরেও ফের আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকে না কি!”

মেমারি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “প্রধানের নাম থাকা বেআইনি। দলের নির্দেশমতো চিঠি দিয়ে বাড়ি না নেওয়ার কথা জানাতে হবে। তা না হলে দল ব্যবস্থা নেবে। প্রশাসনও ব্যবস্থা নিতে পারে।’’

জেলার প্রবীণ বিজেপি নেতা, মেমারির ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “পেঁয়াজের খোসার মতো তৃণমূল নেতাদের স্বজনপোষণ বেরোচ্ছে। কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই দেখার।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “তৃণমূলের মতোই প্রশাসনও এর দায় এড়াতে পারে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Pradhan Mantri Awas Yojana Memari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy