শুনশান বর্ধমানের একটি হিমঘর। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরেই আলুর দাম কমতে শুরু করেছিল। তবে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর ট্রাক সীমানায় আটকে দেওয়ার অভিযোগে রবিবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। আলুর দাম বেড়েছে বাজারেও। জোগান না বাড়লে মধ্যবিত্তের রোজকার পাতও দুর্মূল্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কৃষি বিপণন দফতর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মাধ্যমে চাষিদের কাছ থেকে ‘বন্ড’ কিনে হিমঘর থেকে আলু বার করে শিবির করে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরে থাকা সুফল বাংলা স্টলেও আলুর জোগান বাড়ানো হচ্ছে। কৃষি বিপণন দফতর মনে করছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ১২-১৩ জন হিমঘর মালিক জড়িত হয়ে ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইছে।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুফল বাংলা স্টলে ২৭-২৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। আলু-ব্যবসায়ীরা অলিখিত চাপ তৈরি করতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নজরে বিষয়টি আনা হয়েছে। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।” রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী বেচারাম মান্নাও বলেন, “গত এক সপ্তাহে ৫০ কেজির আলুর বস্তার দাম ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা করছেন না। যাঁরা অকারণ চাপ তৈরি করছেন, তাঁদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নবান্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালেও আলু ব্যবসায়ীরা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। সে সময় রাজ্য সরকার ‘কড়া’ ভূমিকা নিয়েছিল। পরে প্রশাসনিক বৈঠকে সমাধান সূত্র বার হয়।
হিমঘর মালিক সমিতির দাবি, রাজ্যে ৪৫৪টি হিমঘর থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার টন আলু বার হয়। সোমবার হুগলির সিঙ্গুর-সহ কয়েকটি জায়গার হিমঘর থেকে বড়জোর ২৫০০ টন আলু বেরিয়েছে। রাজ্য হিমঘর মালিক সমিতির এগজ়িকিউটিভ কমিটির সদস্য কৌশিক কুণ্ডু বলেন, “হিমঘর খোলা থাকলেও আলু বার হয়নি বললেই চলে। যত দ্রুত সমস্যা মিটবে ততই ভাল। তা না হলে চাষির ক্ষতি হবে। বাজারে আলুর জোগান কমবে।”
সোমবার সকালে বর্ধমানে জ্যোতি আলুর দাম ছিল কেজিতে ৩০-৩১ টাকা, সেই আলুর দাম বিকেলে হয়ে গিয়েছে ৩২-৩৩ টাকা। কলকাতার বাজারেও সোমবার থেকে বাছাই আলু বিকোচ্ছে ৩৪-৩৫ টাকায়। রবিবারও ওই আলু বিক্রি হয়েছে ৩২-৩৩ টাকায়। কালনার এক খুচরো আলু বিক্রেতা বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা কর্মবিরতিতে নামার আগে কয়েক বস্তা আলু কিনে রেখেছিলাম।রবিবার, সোমবার ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। এ বার দাম বাড়তে পারে।’’ আর এক খুচরো আলু ব্যবসায়ীর দাবি, “কর্মবিরতি চললে আলু পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। আড়তদাররা বলে দিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে আলু পাওয়া সমস্যা হবে।” সূত্রের দাবি, পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলু ২৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল। দুপুরের পর সেই আলুর দাম ২৯-৩০ টাকা হয়ে গিয়েছে।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েকদিন ধরে ভিন্ রাজ্যে আলু বোঝাই ট্রাক আটকে দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ‘নজরদারি’র কথা বলেছিলেন, সেখানে ভিন্ রাজ্যে আলু নিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তারই প্রতিবাদে তাঁরা অনির্দিষ্ট ধর্মঘটের পথে হেঁটেছেন।
ওই সংগঠনের সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাইরে আলু যাওয়াটা স্বাভাবিক হয়ে গেলেই ধর্মঘট উঠে যাবে। আলুর দামও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আমাদের কর্মবিরতি নিয়ে কৃষিবিপণন মন্ত্রীকে চিঠি দেব।” ওই সংগঠনের সভাপতি জগবন্ধু মণ্ডল বলেন, “সব আলু তো কলকাতায় যায় না। বা সারা রাজ্যে বিক্রি হয় না। সে সব আলু আমরা কোথায় বিক্রি করব?” ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘ক্যাঁট’ (আকারে ছোট ও গুণগত মান ভাল নয় এমন আলু) আলু এ রাজ্যে বিক্রি হয় না। ওই আলুর চাহিদা বিহার-ঝাড়খণ্ডে রয়েছে। সে জন্যে ওই আলু বাইরের রাজ্যে পাঠানো হয়। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য আনন্দ সাঁতরাও বলেন, ‘‘আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। আগেও এমন অবস্থায় প্রচুর
ক্ষতি হয়েছে।’’
ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের জন্য আলুর দাম বাড়ছে না বলে দাবি করেছেন রাজ্যের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে। তিনি বলেন, “এক-দু’দিনের ধর্মঘটে আলুর দাম বাড়বে না। আলুর জোগানেও ঘাটতি হবে না। তবে আমার আশা, দু’একদিনের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে মিটে যাবে।” রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে
আলোচনা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy