Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bardhaman Water tank collapse

স্ত্রীর মৃত্যুর দায় কার? প্রশ্ন মৃতার স্বামীর, আতঙ্ককে সঙ্গী করে ছন্দে ফেরার চেষ্টায় বর্ধমান স্টেশন

দুর্ঘটনায় মৃত মফিজা খাতুনের স্বামী মেমারির বাসিন্দা আব্দুল মফিজ শেখ রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে, এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এফআইআর দায়ের করেছেন।

Image of the accident spot covered with green sheet

সবুজ চটের চাদরে ঢেকে রাখা দুর্ঘটনাস্থল। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৪৮
Share: Save:

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাতভর কাজ করে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলেছেন রেলের সাফাইকর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মোটামুটি ভাবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে গিয়েছে বর্ধমান স্টেশন। কিন্তু যাত্রীদের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক আজও টাটকা। অনেকেই বুধবার সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। কোনও রকমে প্রাণ বেঁচেছে। পেটের দায়ে বৃহস্পতিবার আবারও সেই স্টেশনেই ট্রেনের অপেক্ষায়। আনমনেই বার বার চোখ চলে যাচ্ছে ভাঙা ট্যাঙ্কের দিকে। সকলের মনেই প্রশ্ন, ট্যাঙ্কের বাকি অংশও আবার ভেঙে পড়বে না তো?

বর্ধমান স্টেশনের দুই এবং তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝের শতাধিক বছরের পুরনো লোহার জলের ট্যাঙ্কটি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ায় বুধবার বেশ কিছু ক্ষণ ব্যাহত হয়েছিল বর্ধমান স্টেশনে ট্রেন চলাচল। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে একটি-দু’টি করে ট্রেন চালানো হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক। ট্যাঙ্কের আশপাশে সবুজ চটের চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে দুই এবং তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকা-বেরোনোর চলমান সিঁড়িটিও। কিন্তু উৎসুক দৃষ্টির ভিড় চার পাশে। কেউ সহযাত্রীকে আঙুল দেখিয়ে বোঝাচ্ছেন ঘটনা পরম্পরা। আবার কেউ উত্তেজিত গলায় জানাচ্ছেন, কী করে এক চুলের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তাঁরা। যদিও সব কথারই শেষ হচ্ছে রেলের গাফিলতির প্রসঙ্গে এসে।

Image of the broken water tank in bardhaman station

সকলেরই চোখ চলে যাচ্ছে আধভাঙা জলের ট্যাঙ্কটির দিকে। — নিজস্ব চিত্র।

নির্মাণকর্মী রানা শেঠ বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরেও রেল প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। এখনও যে ভাবে ভেঙে পড়া জলের ট্যাঙ্কের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে, তাতে ভয় হচ্ছে আবার না ভেঙে পড়ে!’’ একই কথা বলেন ট্রেনযাত্রী সমরেশ মজুমদারও। সমরেশের কথায়, ‘‘তিন বছর আগে স্টেশনের প্রবেশপথের উপরের ঝুল বারান্দা ভেঙে পড়েছিল। তার পরেও রেল প্রশাসন চূড়ান্ত উদাসীন। বুধবারের দুর্ঘটনা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। আসলে, সরকারি চাকরিজীবী রেলকর্মীদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই। কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেই হল।’’ নিত্যযাত্রী পেশায় স্কুলশিক্ষক রানা বাগচী, জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা বর্ধমান স্টেশন দিয়ে নিত্য যাতায়াত করেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘নিরাপত্তা থেকে শুরু করে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য— কোনও কিছুরই বালাই নেই। রেল কেবল বহিরাঙ্গের উন্নতিতেই তৎপর। যাতে এক ঝলকে স্টেশন দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় মানুষের। অথচ ভিতরে জলের ট্যাঙ্ক সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়ছে। তাতে যাত্রীদের মৃত্যু হচ্ছে!

দুর্ঘটনায় মৃত মফিজা খাতুনের স্বামী মেমারির বাসিন্দা আব্দুল মফিজ শেখ রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এফআইআর দায়ের করেছেন। মেমারির বাসিন্দা আব্দুলের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে বর্ধমান জিআরপি।

বুধবার বর্ধমান স্টেশনে জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার ঘটনায় আহত ৩৯ জন ভর্তি আছেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আপাতত সকলেই স্থিতিশীল বলে জানান হাসপাতালের সুপার তাপসকুমার ঘোষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্ম দিয়ে লোকাল, মেল এবং এক্সপ্রেস— সব ট্রেনই চলাচল করছে। ফলে ট্রেন চলাচল একেবারে স্বাভাবিক বলে জানান পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

Eastern Railway Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy