প্রতীকী ছবি।
‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রগুলিতে নানা অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন দুই মহকুমার পরিযায়ী শ্রমিক ও ভিন্ রাজ্য থেকে আসা মানুষেরা। তাঁদের অভিযোগ, শৌচালয় থেকে শুরু করে পানীয় জল, বিদ্যুৎ না থাকা এমনকি, সময়ে খাবারও দেওয়া হচ্ছে না। ওই কেন্দ্র থেকে সংক্রমণ ছড়ানোরও আশঙ্কা করছেন অনেকে। কাটোয়ার দু’টি গ্রামের স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়া নিয়ে বিক্ষোভও দেখান স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে প্রথম থেকেই কাটোয়ার নানা কিসান মান্ডিতে নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। পরে পরিযায়ী শ্রমিকেরা আসতে শুরু করলে, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে কাটোয়ার আখড়া ও বরমপুর গ্রামের দুটি স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে কাটোয়া ২ নম্বর ব্লকের জগদান্দপুর পঞ্চায়েতের আখড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সদ্য চালু হওয়া ওই কেন্দ্র নানা অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকেরা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পঞ্চায়েত প্রধান গৌতম ঘোষাল এবং দাঁইহাট ফাঁড়ির পুলিশ সেখানে পৌঁছন। বিক্ষোভকারীদের দাবি পূরণের ব্যবস্থা হলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই কেন্দ্র থাকা ৩১ জন শ্রমিকের অভিযোগ, তাঁরা ঠিকঠাক খাবারদাবার পাচ্ছেন না। সারাদিন ধরে কেন্দ্র বিদ্যুৎহীন। যদিও প্রধান গৌতম ঘোষাল বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে কাটোয়ার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। তা সত্ত্বেও কোয়রান্টিন সেন্টারে আলো ও পাখা চালানোর জন্য জেনারেটারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবার দেওয়া হয়েছে।’’
ওই রাতেই কাটোয়ার ১ ব্লকের আলমপুর পঞ্চায়েতের বরমপুর গ্রামের স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়া নিয়েও সমস্যা দেখা দেয়। সন্ধ্যা নাগাদ ন’জন পরিযায়ী শ্রমিককে সেখানে রাখা হলে, বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসীর একাংশ। ফলে, শুক্রবার তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আলমপুর পঞ্চায়েতের প্রধান মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের বাধায় ওই স্কুলে থাকা শ্রমিকদের অন্য জায়গায় রাখা হয়েছে। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কিসান মান্ডিতে থাকা শ’খানেক পরিয়াযী শ্রমিকদেরও অভিযোগ, অতি নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। পানীয় জল থেকে শুরু করে শৌচাগারেরও সমস্যা রয়েছে, অভিযোগ তাঁদের। প্রশাসনকে কিছু জানাতে গেলেই পাহারায় থাকা পুলিশকর্মীরা মারতে উদ্যত হচ্ছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ। দাঁইহাট শহরের নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকেও অভিযোগ উঠেছে, বাড়ি থেকে খাবার পাঠাতে বলা হচ্ছে।
মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্ল বলেন, ‘‘কোয়রান্টিন কেন্দ্রগুলিতে কোনও অসুবিধা থাকলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কালনা শহর ও আশপাশের এলাকাতেও সমস্ত নিভৃতবাস ভরে গিয়েছে দেড়শোর বেশি পরিযায়ী শ্রমিকে। পূর্বস্থলীর বেতপুকুর এলাকায় কোয়ম্বত্তুর থেকে আসা এক যুবকের দাবি, ‘‘আমি ওখানে হাসপাতালে কাজ করি। বাড়ি ফেরার পরে আমাকে যে নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখা হয়েছে তা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। আলো-বাতাস ঢোকে না, দুর্গন্ধ। প্রশাসনের উচিত স্থানটিকে স্যানিটাইজ করা।’’ হাটকালনা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সঞ্জয় দাসেরও দাবি, ‘‘কালনা আরএমসি চত্বরে যে নিভৃতবাস রয়েছে সেখানে খাওয়াদাওয়া অত্যন্ত নিম্নমানের।’’ শহরের বাসিন্দা প্রাণগোপাল চট্টোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, ‘‘যে ভাবে শহরের নিভৃতবাসে ভিড় বাড়ছে, ওখান থেকেই না করোনা ছড়ায়।’’ আরও বেশি কোয়রান্টিন কেন্দ্র বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। ওই তাতে ওখান থেকেই না ছড়িয়ে পরে সংক্রমন।প্রশাসনের উচিৎ আরও নিভৃতবাসের সংখ্যা বাড়ানো।
এর সঙ্গেই নানা জায়গায় শ্রমিকদের রাখা নিয়ে আপত্তির অভিযোগও উঠেছে। চাপ বাড়ছে পুলিশ এবং পঞ্চায়েতের উপরে। ছত্তীসগঢ় থেকে হাটকালনা পঞ্চায়েতে আসা নিউ মধুবন এলাকার এক পরিযায়ী শ্রমিককে দ্রুত ব্লক প্রশাসনের নিভৃতবাসে নিয়ে যাওয়ার দাবি তোলেন কিছু মানুষ। প্রধান শুভ্র মজুমদার বলেন, ‘‘নির্ধারিত তিনটি রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের রাখার জন্য একটি কেন্দ্র তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।’’
কালনার এসিএমওএইচ চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘নিভৃতবাসে নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা, মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। গাদাগাদি হলে মুশকিল।’’ তাঁর দাবি, নিয়ম মেনেই শ্রমিকদের রাখা হচ্ছে। লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এলে বাড়িতে পাঠিয়ে পৃথক থাকতে বলা হচ্ছে। কালনা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই জানান, নিভৃতবাস কেন্দ্রগুলিতে নিয়মিত মেডিক্যাল টিম পরিদর্শন করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy