সরব স্থানীয় বাসিন্দারা। রানিগঞ্জের হুসেননগরে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
জনবসতি এলাকায় ও বিভিন্ন স্কুলে ‘নিভৃতবাস কেন্দ্র’ (‘কোয়রান্টিন সেন্টার’) তৈরির তোড়জোড় করছে প্রশাসন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এমনই দাবি করে কয়েক দফায় বিক্ষোভ দেখালেন জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের একাংশ।
চুরুলিয়ায় নিভৃতবাস কেন্দ্র করাকে কেন্দ্র করে পুলিশকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ঘিঞ্জি এলাকায় এই কেন্দ্র তৈরি করা যাবে না। পাশাপাশি, শুক্রবার রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, গ্রামে-গ্রামে স্কুলগুলিতে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি হবে। সেই সঙ্গে, পরে, স্কুলগুলিকে বিশেষ ভাবে জীবাণুমুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে।
এ দিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জামুড়িয়া হিন্দি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে এলাকাবাসীর একাংশ সেখানে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি করা যাবে না বলে দাবি জানান। কংগ্রেস নেতা বিশ্বনাথ যাদব বলেন, “জামুড়িয়া বাজারের মাঝে এই স্কুল। লাগোয়া এলাকায় কয়েকশো পরিবারের বাস।” এই পরিস্থিতিতে এলাকায় যান আসানসোল পুরসভার বরো চেয়ারম্যান (১) শেখ শানদার। ওই সন্ধ্যাতেই জামুড়িয়ার বোগড়া বিবেকানন্দ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ দেখান লাগোয়া জবাগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। সেখানে বহিরাগতদের থাকতে দেওয়া হবে না জানিয়েও বাইরে থেকে এসেছেন, এমন স্থানীয় বাসিন্দাদের রাখা যেতে পারে বলে জানান তাঁরা। দু’টি ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
ক্ষোভ বার্নপুরেও। —নিজস্ব চিত্র
ওই সন্ধ্যাতেই অণ্ডালের উখড়ায় সরকারি কমিউনিটি হলে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরির তোড়জোড় চলছে, এমন দাবি করে জড়ো হন এলাকাবাসী। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণ রায় জানান, ওই হলের কয়েকশো ফুট দূরেই তিনটি পাড়া রয়েছে। তবে উখড়া পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান রাজু মুখোপাধ্যায় জানান, কমিউনিটি হলে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরির কোনও পরিকল্পনা নেই।
জেলার নানা প্রান্তে বিক্ষোভ দেখা যায় শুক্রবারেও। বার্নপুরের নরসামুদা জনকল্যাণ সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে দাবি করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। স্থানীয় কাউন্সিলর সুমিত মল্লিক অবশ্য বলেন, “স্কুলে কোয়রান্টিন সেন্টার হচ্ছে, এমন খবর আমার কাছে নেই।” বল্লভপুর পেপারমিল হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানিগঞ্জের রনাই মাজার শরিফ হুসেননগর এলাকায় ভবঘুরেদের জন্য নির্মিত ভবন, জেকে নগর হাইস্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরির বিরোধিতা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাশাপাশি, সরাসরি বিরোধিতা না হলেও জামুড়িয়ার নণ্ডীরোড লাগোয়া বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরকে নিভৃতবাস কেন্দ্র করতে গেলে কিছু শর্ত মানতে হবে বলে দাবি জানান মুঘলপট্টি, শ্রীকলোনি ও গোয়ালাপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশ। জামুড়িয়া থানায় গিয়ে তাঁরা দাবিপত্রও দেন। স্থানীয় বাসিন্দা অজয় খেতান বলেন, “আমাদের দাবি, বহিরাগতদের রাখা যাবে না। সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করতে হবে। এলাকাবাসীর কাছে কেন্দ্রের চাবি থাকবে এবং যাঁরা থাকবেন, তাঁদের প্রত্যেকের নাম-সহ তালিকা স্কুলের বাইরে টাঙাতে হবে।”
স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরির বিষয়টি নিয়ে বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ বলেন, “আগামী ১ থেকে ৬ জুন প্রতিটি স্কুল থেকে মিড-ডে মিলের চাল ও আলু দেওয়া হবে। নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি হলে, সমস্যা হতে পারে। জুনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত স্কুলগুলিকে খালি করার আগে জীবাণুনাশক ছড়িয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।” তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “জনবসতিহীন স্কুলগুলিতে নিভৃতবাসের ব্যবস্থা করা হলে ভাল হয়। এই আবেদন প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে।”
তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন এলাকায় নিভৃতবাস কেন্দ্র হবে, সে বিষয়ে বিধি-নিষেধ নেই। কোথায় কেন্দ্র হবে, তা ঠিক করবে প্রশাসন। তার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে পুরসভা ও পঞ্চায়েত। যদিও যে এলাকায় এমন কেন্দ্র হবে, সেখানে সচেতনতা শিবির আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন বিজেপি নেতা সন্তোষ সিংহ।
বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “বাইরে থেকে আসছেন, এমন স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে বাড়ির কাছে থাকতে পারেন, সেই পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগে ফাঁকা বাড়ি দেখা হবে। না পাওয়া গেলে স্কুলগুলিতে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করা হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে পরিচালন সমিতি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। নেওয়া হবে যথেষ্ট সতর্কতাও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy