শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত জ্যোতিষ সরকার। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর তৈরি মসলিনের শাড়ি অনায়াসে গলে যায় ছোট্ট একটা আংটির ফাঁক গিয়ে। হাল্কা সে সব শাড়ি পরেন বলিউড-টলিউডের নায়িকারা। একটি শাড়ি তৈরিতে কখনও লাগে ১১ মাস সময়, কখনও বা চার মাস। নানা নকশায় ভরা সে সব শাড়ির দাম দেড় থেকে ১০ লক্ষ টাকা। কালনা শহরের শিল্পী জ্যোতিষ দেবনাথের তৈরি শাড়ির ক্রেতা ছড়িয়ে বিশ্বজুড়ে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব শিল্পীর ঝুলিতে রয়েছে চারটি বড় পুরস্কার। তার মধ্যে দুই জাতীয় স্তরের। শাড়ি, ওড়না তৈরিতে ব্যবহার করেন ৭০০ কাউন্ট পর্যন্ত মসলিনের সুতো। নতুন নতুন নকশায় শাড়ি তৈরির পাশাপাশি, অনেককে প্রশিক্ষণও দেন। শিল্পীর কথায়,
‘‘নতুন প্রজন্মকেও কিছু শেখানোর চেষ্টা করি।’’
জ্যোতিষ জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট কোনও উৎসবকে সামনে রেখে তিনি শাড়ি তৈরি করেন না। ধীরে সুস্থে মসলিনের সুতোয় বুননের কাজে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। একটি শাড়ি তৈরিতে দুই বা তার বেশি শিল্পী প্রয়োজন। বছরে আট থেকে দশটির বেশি শাড়ি তৈরি করা যায় না।
শিল্পীর দাবি, তাঁর তৈরি নীলাম্বরী শাড়ি রয়েছে শিল্পপতি মুকেশ অম্বানির স্ত্রী নীতা অম্বানির সংস্থায়। সেটির দাম দশ লক্ষ টাকা। ৩০০ কাউন্টের সুতোয় তৈরি সেই শাড়ির ওজন ৪৭০ গ্রাম। বহর ৬ ইঞ্চি। তাতে ব্যবহার করা হয়েছে বারাণসী থেকে কেনা সোনার জরি। সমমূল্যের চিতাম্বরী নামে শাড়ি রয়েছে শিল্পীর সম্ভারে। সম্প্রতি ১,৫৫,০০০ টাকা মুল্যের মসলিন জামদানি শাড়ি তিনি বিক্রি করেছেন মুম্বইয়ের একটি প্রদর্শনীতে।
জ্যোতিষের দাবি, ‘‘দেশের শীর্ষ আদালতের এক মহিলা বিচারপতি আমার কাছে শাড়ি কেনেন। ভাল লাগায় পরিচিত মহলে তিনি সে কথা বলেন। এ ভাবেই ক্রেতারা আসেন। পাশাপাশি, নামী কিছু ডিজ়াইনার মারফতও ক্রেতারা আসেন।’’ শাড়ি বোনার সময়ে নতুন ভাবনা এবং ভারতীয় সংস্কৃতির কথা মাথায় রাখেন তিনি। এক শাড়ির নকশা অন্য শাড়িতে ব্যবহার করেন না।
শিল্পী বলেন, ‘‘দীর্ঘ সময় ধরে নরম মসলিনের সুতোয় নজর কাড়া নকশা থাকলে শাড়ির দাম বাড়ে। শুধু দেশ নয়। বিদেশেও আমার শাড়ির ক্রেতা রয়েছেন।’’ বাবা-ঠাকুরদার থেকে শাড়ি তৈরি শিখেছিলেন জ্যোতিষ। এখন সৃষ্টিতে নিজের ভাবনাও মিশিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল শাড়ি তৈরি হলে ক্রেতার অভাব হয় না। বলিউডের নায়িকা থেকে শুরু করে অনেকে মসলিনের শাড়ির প্রেমে মজে রয়েছেন। স্বল্প ওজনের মসলিনের শাড়ির ঐতিহ্য বহু প্রাচীন।’’
মহকুমা হ্যান্ডলুম দফতরের আধিকারিক রণজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘উনি অত্যন্ত উচ্চমানের শিল্পী। ওঁর তৈরি দেড় থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা দামের বেশ কিছু শাড়ি দেখেছি। হাল্কা মসলিনের শাড়িতে উনি দেবদেবী-সহ নানা নকশা ফুটিয়ে তোলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy