‘ব্যান্ডেমিক’ ২০২৩
রবিবারের দুপুর। ঘড়ির কাঁটায় তখন একটা। শহর জুড়ে এক-দু’ পশলা বৃষ্টি। অথচ যেন উত্তাপ বাড়ছে। ভিড় বাড়ছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। কারণটা, ব্যান্ডেমিক। কারণটা, অতীতের আবেগ।
গত ১৬ জুলাই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মহাসাড়ম্বরে আয়োজিত হয়েছিল ‘ব্যান্ডেমিক’। একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের সেরা ছ’টা বাংলা ব্যান্ড — ‘ফসিল্স’, ‘ক্যাকটাস’, ‘চন্দ্রবিন্দু’,‘লক্ষ্মীছাড়া’, ‘দ্য অনুপম রায় ব্যান্ড’ এবং ‘ফকিরা’র গানের ছন্দে মাতল গোটা শহর। একরাশ পুরনো স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সুরের ভিড়ে মিশে গেল জনতা। উঠে এল নানা গল্প। নিয়মমাফিক শো’ও শেষ হল। তার পরে কেটে গেল অনেকগুলো দিন। অথচ সেই কনসার্ট যেন এখনও স্মৃতির ভিড়ে টাটকা।
শো শুরু হয়েছিল ফকিরার হাত ধরে। গানের সুরেই এক হয়ে গেল দুই ধর্ম। ‘হরে কৃষ্ণ’ ও ‘নিজামউদ্দিন’-এর সুরে সুর মেলাল জনতা। তিমির বললেন, “বাংলা গানের মাধুর্য এটাই। যেখানে একই স্টেজ থেকে এমন দু’টি গান গাওয়া যায়। এই দৃশ্য সত্যিই অভাবনীয়।”
এর পরেই, মঞ্চে উঠলেন চন্দ্রবিন্দু। জনস্রোতে হালকা দোলা লাগল। উপল-অনিন্দ্যর গানের সুরে ফিরে এল কলেজ ক্যান্টিনের গল্প। ফিরে এল বন্ধুত্বের কথা।
সময় যত বাড়তে লাগল, ততই বাড়তে লাগল কালো মাথার ভিড়। একে একে মঞ্চ কাঁপাল ‘ফসিলস্’, ‘ক্যাকটাস’, ‘লক্ষ্মীছাড়া’। রক্ সঙ্গীতের আবহে মাতল গোটা স্টেডিয়াম। রূপম গাইলেন ফসিলস ৭ অ্যালবামের ‘অপরিবর্তিত’।
গোটা ইভেন্টের পরিকল্পনায় মুগ্ধ সিধু। জানালেন, “যে কোনও ইভেন্টের সাফল্যই নির্ভর করে সঠিক পরিকল্পনার উপর। এমন সুন্দর আয়োজন সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”
গানের ছন্দে ‘মহিনের ঘোড়াগুলির’ প্রতি শ্রদ্ধা জানাল ‘লক্ষ্মীছাড়া’। ব্যান্ডের ড্রামার গাবু জানালেন, “আমরা শুধু মহিনের ঘোড়াগুলির কাছে চিরকৃতজ্ঞই নই। বরং তাদের কারণেই আমরা গান গাইতে এবং এমন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সাহস পেয়েছি।”
মঞ্চে অনুপম রায় ছিলেন নিজের ছন্দে। পুরনো সময় ফিরিয়ে দিল ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’, ‘জল ফড়িং’।
গোটা অনুষ্ঠান জুড়েই উপস্থিত দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ গানের সুরে তাল মেলাচ্ছেন, তো কেউ রক্ গানের সঙ্গে অনর্গল মাথা ঝাঁকিয়ে যাচ্ছেন। অনুষ্ঠানেরই এক দর্শক রেখা পাল জানান, “বহুদিন পরে বাংলা ব্যান্ড নিয়ে এমন একটা অনুষ্ঠান দেখলাম আমরা। এমন অভিজ্ঞতা সত্যিই অভাবনীয়।” অন্য এক দর্শক সুস্মিতা বললেন, “প্রথমে টিকিট পাচ্ছিলাম না বলে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পরে এক বন্ধু আমায় দু’টো টিকিট যোগাড় করে দেয়। এর আগে বাংলা ব্যান্ডের কোনও অনুষ্ঠানে এত পরিমাণ দর্শক দেখেনি কলকাতা।” অন্য দিকে রূপমের গান শুনে কেঁদেই ফেললেন অর্চিকা।
গোটা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিল ফেস্টিভিটি ফ্যাক্টর, ইভেন্ট মাস। সংগঠকদের তরফে প্রশান্ত কুমার সুর জানান, “প্রায় ৬,৫০০ টিকিট বিক্রি হয়েছিল। লোক এসছিল ৭০০০-র কিছু বেশি। কনসার্টের ঠিক পরেই ব্যান্ডেমিকের বিভিন্ন টুকরো ছবি ভাইরাল হয়েছে। শো’য়ের ঘোর এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই বহু মানুষ দ্বিতীয় সিজনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy